আমেরিকা

মার্কিন ভুলে বিতাড়িত ব্যক্তিকে ফেরত দেবে না এল সালভাদর: প্রেসিডেন্ট বুকেলে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভুলবশত বিতাড়িত কিলমার আবরেগো গার্সিয়াকে ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এল সালভাদরের সরকার। দেশটির প্রেসিডেন্ট নাইব বুকেলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আবরেগোকে ফেরত পাঠানো হবে না, যদিও তিনি বর্তমানে দেশের বিতর্কিত মেগা-কারাগারে আটক রয়েছেন। সোমবার হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এক বৈঠকে বুকেলে এই মন্তব্য করেন। ট্রাম্প ও বুকেলের মধ্যে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িতদের গ্রহণে বুকেলের সদিচ্ছা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য বড় ধরনের সমর্থন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি রায় দেয় যে কিলমার আবরেগো গার্সিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনকে “সহযোগিতা করতে হবে।” আবরেগো ২০১৯ সালে আদালতের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সুরক্ষা লাভ করেছিলেন এবং ম্যারিল্যান্ডে পরিবারসহ বসবাস করছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, তাকে ফেরানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি জানান, “এটা এখন এল সালভাদরের সিদ্ধান্ত—তারা চাইলে ফেরত দেবে।” বুকেলের মন্তব্যকে সর্বশেষ আদালত ফাইলিং-এ ব্যবহার করেছে মার্কিন বিচার বিভাগ, যেখানে বলা হয়েছে, “এল সালভাদর স্পষ্ট করেছে—তারা আবরেগো গার্সিয়াকে ফেরত পাঠাবে না।'' আবরেগোর স্ত্রী জেনিফার ভাসকেজ সুরা, যিনি একজন মার্কিন নাগরিক, বলেন, “ট্রাম্প এবং বুকেলে প্রশাসন তার জীবন নিয়ে রাজনৈতিক খেলা খেলছে। আমার হৃদয় ভারাক্রান্ত, কিন্তু আমি আশা হারাইনি। আমাদের সন্তানদের জন্য, আমাদের পরিবারের জন্য এবং বিশ্বের সব অভিবাসীর জন্য আমরা লড়াই চালিয়ে যাবো, কিলমার—আমরা তোমাকে ফিরে পাবো।”  ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, আবরেগো এমএস-১৩ গ্যাংয়ের সদস্য—যদিও তার আইনজীবী এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। প্রশাসনের ভাষ্যমতে, তিনি ২৩ জন সালভাদরবাসী এবং ২৩৮ জন ভেনেজুয়েলান নাগরিকের সঙ্গে ‘Center for the Confinement of Terrorism (Cecot)’ নামে একটি কঠোর নিরাপত্তার কারাগারে পাঠানো হয়। ট্রাম্প বলেন, “আমি এমন কিছু ভয়ংকর অপরাধীদেরকেও [যারা মার্কিন নাগরিক] বিতাড়িত করতে চাই, যারা সাবওয়েতে মানুষকে ধাক্কা দেয় বা বৃদ্ধ নারীদের পেছন থেকে আঘাত করে।” তবে তিনি স্বীকার করেন, “আইন অনুযায়ী আমাদের চলতে হবে।” সিসট কারাগার: নির্যাতনের অভিযোগ ২০২৪ সালে BBC Mundo-কে সিসট কারাগারে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। এটি ১১৬ হেক্টরজুড়ে নির্মিত এবং ৪০,০০০ বন্দী ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। এখানে জানালা বা বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই, বন্দীরা ধাতব খাটে ঘুমান, তোষক বা চাদর নেই। এক একটি সেলে ১৫০ জনের বেশি বন্দী থাকে এবং রয়েছে মাত্র দুটি টয়লেট—সম্পূর্ণ গোপনতা বিহীন। প্রতিদিন মাত্র ৩০ মিনিট বন্দীদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। বহু পরিবার দাবি করেছে, যাদের সেখানে পাঠানো হয়েছে তাদের গ্যাংয়ের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। ট্যাটুর কারণে টার্গেট? এক ভেনেজুয়েলান মা, মাইরেলিস কাসিকে লোপেজ জানান, তার ছেলে কারাগারে আছে তা তিনি বুঝতে পারেন একটি ছবির মাধ্যমে, যেখানে তাকে সিসটে নেওয়া হচ্ছে দেখা যায়। তিনি বলেন, “শুধুমাত্র ট্যাটুর কারণে তাকে টার্গেট করা হয়েছে।” আন্তর্জাতিক সমালোচনা ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে সিসট কারাগার নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠলেও ট্রাম্প বলেন, “আমি এতে কোনো সমস্যা দেখি না।” এদিকে, বুকেলের সরকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রত্যেক বন্দির বিপরীতে বছরে ২০,০০০ ডলার করে পাচ্ছে, যা সাম্প্রতিক গোষ্ঠীর জন্য প্রায় ৬ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। বুকেলে জানিয়েছেন, এই অর্থ ও কারাগারে শ্রম ব্যবস্থার মাধ্যমে তারা কারাগার ব্যবস্থাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে চান। তবে সমালোচকরা বলছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে বুকেলে তার দেশের অভ্যন্তরীণ মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণগ্রেফতার ও বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড থেকে আন্তর্জাতিক নজর সরিয়ে নিচ্ছেন। ২০২২ সাল থেকে চলমান জরুরি আইনের অধীনে ৮০,০০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে অনেকেই বিচারবিহীনভাবে আটক আছেন।

এলএবাংলাটাইমস/ওএম