হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল অনুদান আটকে রাখা বেআইনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালান এম গারবার সোমবার এক খোলা চিঠিতে এই আইনি পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, এই অর্থ ফ্রিজ করার ফলে শিশুদের ক্যানসার, আলঝেইমার এবং পারকিনসনের মতো রোগ নিয়ে গবেষণায় মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ড, সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিল — যেগুলোর লক্ষ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈচিত্র্য সংক্রান্ত উদ্যোগ হ্রাস এবং সেখানে ইহুদিবিদ্বেষ রোধ করা।
মামলার জবাবে হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানায়, "হার্ভার্ডের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া ফেডারেল সাহায্যের 'গ্রেভি ট্রেন' এখন শেষের পথে।"
ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যেই আরও অনেক নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুদান কেটে দিয়েছে। এক নতুন সরকারী টাস্কফোর্স অন্তত ৬০টি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যালোচনার জন্য চিহ্নিত করেছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বছরের গাজা যুদ্ধ ও যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েল সমর্থনের বিরুদ্ধে হওয়া বিক্ষোভে ইহুদি শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা না দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন।
হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট গারবার, যিনি নিজেও ইহুদি, স্বীকার করেছেন যে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ইহুদিবিদ্বেষের সমস্যা আছে। তবে তিনি জানান, ইতিমধ্যেই এ সমস্যা মোকাবিলায় দুটি পৃথক টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, এবং সেগুলোর রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে।
মামলায় হার্ভার্ড দাবি করেছে, ফেডারেল অনুদান আটকে দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করছে এবং এর মাধ্যমে একপ্রকার "চাপ প্রয়োগ করে একাডেমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে হস্তক্ষেপ" করা হচ্ছে।
প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আরও ১ বিলিয়ন ডলার অনুদান স্থগিত হতে পারে। বর্তমানে হার্ভার্ড বছরে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার ফেডারেল অর্থ পায়, যার একটি বড় অংশ গবেষণায় ব্যয় হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়টির কর-মুক্ত অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি ক্ষমতাও এখন ঝুঁকির মুখে।
হার্ভার্ডের পাশাপাশি কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ বিলিয়ন এবং ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫১০ মিলিয়ন ডলার অনুদান স্থগিত করা হয়েছে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে গত বছর সবচেয়ে বড় প্রো-প্যালেস্টাইন বিক্ষোভ হয়, তারা ইতিমধ্যে কিছু সরকারি দাবি মেনে নিয়েছে, যাতে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান বজায় রাখা যায়।
সরকারের দাবি ছিল — বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম, নিয়োগ এবং ভর্তি সংক্রান্ত তথ্যের উপর বাইরের নিরপেক্ষ অডিট অনুমোদন দিতে হবে।
হার্ভার্ড এক তীব্র ভাষার চিঠিতে এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এটি মূলত “সরকারি কর্তৃত্বে একটি অনুপ্রবেশ”।
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও হার্ভার্ডের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বারাক ওবামাও বিশ্ববিদ্যালয়টির পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং অর্থ ফ্রিজকে “বেআইনি” বলে আখ্যা দিয়েছেন।
হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “হার্ভার্ডের মতো প্রতিষ্ঠানে করদাতাদের অর্থ খরচ করে যারা তাদের উচ্চ বেতনের আমলাদের পোষে, তাদের সেই সুযোগ শেষ হচ্ছে। করদাতার অর্থ প্রাপ্তি কোনো অধিকার নয়, বরং এটি একটি সুযোগ — যা হার্ভার্ডের মতো প্রতিষ্ঠান এখন আর প্রাপ্য নয়।”
গ্যালাপের এক জরিপ অনুসারে, বিগত বছরগুলিতে সকল রাজনৈতিক পক্ষের আমেরিকানদের মধ্যে উচ্চশিক্ষার প্রতি আস্থা কমেছে। অনেকেই মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজনৈতিক এজেন্ডা চালিয়ে যাচ্ছে — এবং এই আস্থা হ্রাস রিপাবলিকানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
এলএবাংলাটাইমস/ওএম