আমেরিকা

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল বন্ধের পরিকল্পনা

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ আরও বাড়ছে। প্রশাসন এবার বিশ্ববিদ্যালয়টির মোট আনুমানিক ১০০ মিলিয়ন ডলারের সরকারি অনুদান খতিয়ে দেখে তা বন্ধ বা অন্যত্র স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে। হোয়াইট হাউজের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, Government Services Administration (GSA) বিভিন্ন ফেডারেল সংস্থাকে চিঠি পাঠাতে যাচ্ছে যাতে তারা খুঁজে বের করে হার্ভার্ডের কোন কোন চুক্তি বাতিল বা অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া সম্ভব। প্রায় ৩০টি চুক্তির মধ্যে মোট ১০০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান পর্যালোচনার আওতায় আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগেও ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের প্রতি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল — ২.৬৫ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল অনুদান বরাদ্দ বন্ধ করা হয়েছিল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি ক্ষমতা বাতিলের চেষ্টা চালানো হয়েছিল। হার্ভার্ড এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটে বলা আছে, তাদের ক্যান্সার, হৃদরোগ, সংক্রামক রোগ ও স্থূলতা বিষয়ক গবেষণা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র সরকারসহ বিভিন্ন উৎস থেকে অনুদান পেয়ে আসছে। ওয়েবসাইটে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, “এই অনুদান ছাড়া গবেষণাগুলো মাঝপথেই থেমে যাবে।” তবে হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, সব অর্থ একযোগে বন্ধ করা হবে না। বরং ধাপে ধাপে প্রতিটি তহবিল পর্যালোচনা করে নির্ধারণ করা হবে কোনটি অপরিহার্য আর কোনটি নয়। GSA পরামর্শ দেবে কোন চুক্তিগুলো 'standards meet না করায়' বাতিল করা যায় এবং সেই টাকা অন্যত্র বরাদ্দ দেওয়া যায় কিনা। এক খসড়া চিঠিতে হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও ইহুদি বিরোধিতা (Antisemitism) করার অভিযোগ আনা হয়েছে, যা অনুদান বাতিলের একটি যৌক্তিকতা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এদিকে হার্ভার্ডের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বেশ কিছু শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে প্রতিবাদে অংশ নেন। সাবেক হার্ভার্ড হিলেলের (ইহুদি শিক্ষার্থীদের সংগঠন) সভাপতি জ্যাকব মিলার বলেন, “এই প্রশাসন যে অ্যান্টিসেমিটিজম ঠেকানোর অজুহাতে এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা হাস্যকর।” তবে হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, হার্ভার্ডের সঙ্গে যুক্ত হাসপাতালগুলো এই কাটছাঁটের আওতায় পড়বে না। এবং যেসব অনুদান সংশ্লিষ্ট সংস্থার জন্য অপরিহার্য, সেগুলো টিকিয়ে রাখতে সংস্থাগুলো নিজস্ব ভিত্তিতে আবেদন করতে পারবে। উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রশাসন ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রাজনৈতিক, আর্থিক ও আইনি লড়াই অনেক দিন ধরেই চলছে। গত এপ্রিলেই প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যাক্স ফ্রি সুবিধা বাতিলের হুমকি দেয় এবং ২.২ বিলিয়ন ডলারের অনুদান ফ্রিজ করে, যার ফলে হার্ভার্ড আদালতের দ্বারস্থ হয়। এক মাস পর আবার ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের আরেকটি অনুদান কেটে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি ও বিদেশি গবেষকদের রাখার ক্ষমতাও কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল প্রশাসন, যা আবার এক মামলার মাধ্যমে ঠেকিয়ে দেওয়া হয়। এটি একটি ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সংঘাত যা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় ও হোয়াইট হাউজের মধ্যে তীব্র হয়ে উঠছে।

এলএবাংলাটাইমস/ওএম