যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যে ফিলিপাইন থেকে আমদানি করা পণ্যে ১৯% শুল্ক আরোপ করা হবে। হোয়াইট হাউসে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি এই ঘোষণা দেন।
মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, "এটি ছিল একটি চমৎকার সফর এবং আমরা আমাদের বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করেছি।" তিনি জানান, নতুন এই চুক্তির আওতায় ফিলিপাইন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক সরিয়ে নেবে এবং উভয় দেশ সামরিক সহযোগিতায় একমত হবে।
তবে ফিলিপাইন সরকার এই চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি। এই ঘোষণায় দেশটি এমন একটি শুল্কের মুখোমুখি হচ্ছে, যা আগের ঘোষিত হুমকির চেয়েও বেশি। এপ্রিল মাসে ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী ব্যাপক শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন।
ট্রাম্প দাবি করেন, শুল্ক আরোপের মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য “অন্যায্য” বিদেশি নীতিমালার বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করতে চান। এরপর থেকেই তিনি যুক্তরাজ্য, চীন, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে আলাদা আলাদা বাণিজ্য আলোচনা শুরু করেন, যদিও অনেক ক্ষেত্রেই এসব চুক্তি এখনও সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত বা নিশ্চিত হয়নি।
আগামী ১ আগস্ট থেকে আরও এক দফা নতুন উচ্চ হারে শুল্ক কার্যকর হওয়ার হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডাসহ যুক্তরাষ্ট্রের বড় বাণিজ্য অংশীদাররা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি মঙ্গলবার বলেন, “আমরা জটিল আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি, তবে যেকোনো মূল্যে চুক্তি করাই লক্ষ্য নয়।” তিনি জানান, কানাডা খারাপ কোনো চুক্তি গ্রহণ করবে না।
ট্রাম্পের প্রথম দফা শুল্ক পরিকল্পনা এপ্রিল মাসে যখন প্রকাশিত হয়, তখনই বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা দেখা দেয়। সেই সময় তিনি কিছু কঠোর শুল্ক সাময়িকভাবে স্থগিত রাখলেও অধিকাংশ পণ্যের ওপর ১০% এবং গাড়ি, তামা, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো পণ্যে উচ্চহারে শুল্ক বহাল রাখেন।
সম্প্রতি মার্কিন বাজার স্থিতিশীল থাকায় ট্রাম্প আবারো উচ্চহারে শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হবে বলে জানিয়ে বিভিন্ন দেশকে চিঠি দিয়েছেন তিনি।
ফিলিপাইনের প্রতি লেখা এক চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, দেশটির পণ্যে ২০% শুল্ক আরোপ করা হবে, যা এপ্রিলের ১৭% হুমকির চেয়েও বেশি ছিল। কিন্তু সর্বশেষ ঘোষণায় এই হার কমিয়ে ১৯% করা হয়েছে।
বুধবার ফিলিপাইনের দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শুল্ক হার কিছুটা কমানো “উৎসাহব্যঞ্জক”। তারা বলেছে, “আমরা আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর ও বিস্তৃত করার নতুন উপায় খুঁজে চলব।”
উল্লেখ্য, ফিলিপাইন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনামূলকভাবে ছোট বাণিজ্য অংশীদার। ২০২৩ সালে দেশটি প্রায় ১৪.২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে রয়েছে গাড়ির যন্ত্রাংশ, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি, বস্ত্র ও নারকেল তেল।
এদিকে, নতুন এই শুল্ক ব্যবসা খাতে ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। জেনারেল মোটরস জানিয়েছে, গত তিন মাসে শুল্কের কারণে তাদের ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ক্ষতি হয়েছে। অপরদিকে জিপ নির্মাতা স্টেলান্টিস জানায়, তাদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ইউরো।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
এলএবাংলাটাইমস/ওএম