আমেরিকা

ট্রাম্পের বড় জয়: ইউএস-ইইউ শুল্ক চুক্তি, তবে ব্রাসেলসের পরাজয় সম্পূর্ণ নয়

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে দীর্ঘদিনের শুল্ক নিয়ে টানাপোড়েনের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে একটি কাঠামোগত চুক্তিতে পৌঁছেছে দুই পক্ষ। এই চুক্তিটি এসেছে এমন এক সময়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে আরেক দফা শুল্ক আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সপ্তাহব্যাপী কঠিন আলোচনার পর রবিবারের এই চুক্তি আসে সরাসরি ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলসের শীর্ষ নেতাদের মুখোমুখি আলোচনার মাধ্যমে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগতভাবে এগিয়ে আসাই চুক্তির সফলতায় বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এই চুক্তি উভয় পক্ষের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভাষায় এটি “বিশ্বের বৃহত্তম দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক”। যুক্তরাষ্ট্রের বড় জয়, ইউরোপের আংশিক স্বস্তি ট্রাম্প প্রশাসন এই চুক্তিকে বড় জয় হিসেবে তুলে ধরেছে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছেন, “পুরো ইউরোপীয় গণমাধ্যম এখন প্রেসিডেন্টের প্রশংসায় মুখর – তিনি যে অসাধারণ চুক্তি করেছেন, তাতে সবাই অবাক।” চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপীয় রপ্তানিপণ্যগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্র ১৫% শুল্ক ধার্য করবে, যেখানে আগে হুমকি ছিল ৩০% শুল্ক আরোপের। যদিও এটি যুক্তরাজ্যের জন্য প্রযোজ্য ১০% হারের চেয়ে বেশি, তবে ইউরোপের জন্য এটি একপ্রকার স্বস্তি। ইউরোপীয় গাড়ি নির্মাতারা এখন থেকে ২৫% গ্লোবাল ট্যারিফের পরিবর্তে ১৫% শুল্ক দেবে। তবে ইইউ থেকে আমদানি করা স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ৫০% শুল্ক বহাল থাকবে। অন্যদিকে ট্রাম্পের জন্য এটি একাধিক বিজয়ের মুহূর্ত জাপানের সঙ্গে সদ্য সম্পাদিত চুক্তির রেশ কাটতে না কাটতেই ইউরোপের সঙ্গে এই চুক্তি ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য আরেকটি বড় বিজয়। এই চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন কোষাগারে অতিরিক্ত ৯০ বিলিয়ন ডলার শুল্ক রাজস্ব আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শত শত বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি ও অস্ত্র ক্রয় করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ বাড়াবে। এর মধ্যে রয়েছে ৭৫০ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি চুক্তিও। চাপে ছিল ইউরোপ, ছিল ন্যাটো ও ইউক্রেন ইস্যুও চুক্তি করার জন্য ইউরোপ যে বেশ চাপের মধ্যে ছিল, তা স্পষ্ট। বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা, ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, এবং ইউক্রেনে মার্কিন সামরিক সহায়তার উপর নির্ভরশীলতা ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য বড় চিন্তার কারণ ছিল। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন বলেন, “আমাদের বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা আছে, তা ঠিক করতে হবে। আমাদের চমৎকার বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে, এটিকে আরও টেকসই করতে হবে।” সাবেক ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাণিজ্য আলোচক জন ক্লার্ক বিবিসিকে বলেন, “ইউরোপ দুর্বল অবস্থানে ছিল। চুক্তি না করেই উপায় ছিল না। ট্রাম্প পিছু হটতেন না। তাই ১৫% শুল্ক মেনে নিতে হয়েছে – এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য খারাপ দিন, তবে আরও খারাপ হতে পারত।” আসছে চীন-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিও? এই চুক্তির কয়েকদিন আগে জাপানের সঙ্গে এবং আরও আগে যুক্তরাজ্য, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো মেক্সিকো, কানাডা ও চীনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চুক্তিতে পৌঁছানো। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র আবারও আলোচনায় বসছে এবং আশা করা হচ্ছে ৯০ দিনের জন্য বাড়তি শুল্ক স্থগিত থাকবে। তবে চীন এখনো তুলনামূলক কঠোর অবস্থানে রয়েছে, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যের অনিশ্চয়তা বজায় রাখছে।

এলএবাংলাটাইমস/ওএম