মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি করা পণ্যে ১৫% শুল্ক আরোপ করা হবে। তিনি একে "পূর্ণাঙ্গ এবং চূড়ান্ত বাণিজ্য চুক্তি" হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
এই ঘোষণা এসেছে ১ আগস্টের চূড়ান্ত সময়সীমার একদিন আগে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি না করলে অন্যান্য দেশগুলোকে আরও বেশি হারে শুল্কের মুখে পড়তে হতো। দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষেত্রে তা ২৫% পর্যন্ত বাড়ার আশঙ্কা ছিল।
জাপান ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১৫% শুল্কে চুক্তি করায়, দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর চাপ অনেক বেড়ে গিয়েছিল, কারণ দুটি দেশই গাড়ি ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।
চুক্তির আওতায় দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩৮ লক্ষ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করবে। এই চুক্তিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় সফলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে, বিশেষ করে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির রেকর্ড ৫৬ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত থাকার প্রেক্ষাপটে।
১৫% শুল্ক হার মূলত দক্ষিণ কোরিয়ার দুটি প্রধান রপ্তানি পণ্য—গাড়ি ও সেমিকন্ডাক্টরের ওপর প্রযোজ্য হবে। তবে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামে ৫০% শুল্ক আরোপ করা হবে, যা বিশ্বব্যাপী নির্ধারিত ট্রাম্পের হার।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং এই চুক্তিকে ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, এটি কোরিয়াকে অন্যান্য দেশের তুলনায় সমান অথবা আরও ভালো অবস্থানে এনে দেবে।
একটি বড় অর্জন হলো, দক্ষিণ কোরিয়াকে তাদের প্রধান “রেড লাইন” অতিক্রম করতে হয়নি—বিশেষ করে চাল ও গরুর মাংসের বাজার যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও উন্মুক্ত করার বিষয়ে।
কোরিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কতটুকু মার্কিন চাল এবং কী ধরনের গরুর মাংস আমদানি করা যাবে। এই নিয়ম শিথিল করা হলে কৃষকেরা প্রতিবাদে নামার পরিকল্পনা করেছিল।
৩৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের মধ্যে ১৫০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হবে যুক্তরাষ্ট্রে জাহাজ, বিশেষ করে যুদ্ধজাহাজ তৈরিতে। এটি দক্ষিণ কোরিয়ার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, কারণ চীন ছাড়া বিশ্বে সবচেয়ে বেশি জাহাজ তৈরি করে দক্ষিণ কোরিয়া, অন্যদিকে মার্কিন নৌবাহিনী ও জাহাজশিল্প ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে।
এভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা চাহিদা পূরণ করে দক্ষিণ কোরিয়া নিজের শিল্পখাতও মজবুত করার সুযোগ পাচ্ছে।
বাকি বিনিয়োগের একটি বড় অংশ আসবে আগের বাইডেন প্রশাসনের আমলে প্রতিশ্রুত অর্থ থেকে, যা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি—যেমন যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি, সেমিকন্ডাক্টর ও ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারি নির্মাণে সহায়তা।
এই চুক্তি দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক জোটকে স্পর্শ করেনি, যার আওতায় যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর বিলিয়ন ডলার খরচ করে দক্ষিণ কোরিয়াকে উত্তর কোরিয়ার হুমকি থেকে রক্ষা করে থাকে।
অতীতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন যে, দক্ষিণ কোরিয়া যদি এই ব্যয়ের আরও বেশি ভাগ না দেয়, তাহলে তিনি মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেবেন। এই হুমকি এখনও সিউলের মাথার উপর ঝুলে আছে, যদিও এটি এখনো সমাধান হয়নি।
এই ইস্যুতে আলোচনা হবে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রেসিডেন্ট লির ওয়াশিংটন সফরে, যেখানে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সময় সিউলকে আরও একটি বড় অংকের আর্থিক প্রতিশ্রুতি দিতে হতে পারে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একের পর এক আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন এবং অনেক দেশকেই হুমকি দিয়েছেন।
তিনি দাবি করেন, এসব শুল্ক ব্যবস্থা আমেরিকার উৎপাদন খাতকে শক্তিশালী করবে এবং চাকরি রক্ষা করবে।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, তার এই অস্থির বাণিজ্যনীতি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে এবং মার্কিন ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
এলএবাংলাটাইমস/ওএম