বাংলাদেশ

একটি বাগাড়ের দাম ৮৬ হাজার টাকা

সাতসকালেই ইছামতী নদীর তীরে মানুষের ঢল। এখানে বসেছে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। দূরদূরান্ত থেকে দল বেঁধে লোকজন মেলায় ছুটে আসেন। মেলা উপলক্ষে আশপাশের ৩০ গ্রামে রীতিমতো উৎসবের আমেজ। গৃহস্থ ঘরে নাইওর এসেছেন নববধূ আর মেয়েজামাই।এবারও মেলায় উঠেছে বাগাড়, পাঙাশ, চিতল, কাতল, সিলভার কার্পসহ বড় বড় মাছ। ব্যবসায়ী মাসুদ রানা মেলায় বিক্রি করতে এনেছেন ৯০ কেজি ওজনের একটি বাগাড়। দাম হাঁকা হয়েছে সোয়া লাখ টাকা। মাসুদ রানা বলেন, কয়েক দিন আগে যমুনায় জেলেদের জালে মাছটি ধরা পড়ে। শেষ পর্যন্ত সেটি বিক্রি হয় প্রায় ৮৬ হাজার টাকায়।ব্যবসায়ী সাহেব আলী বিক্রি করতে এনেছেন ৭০ কেজি ওজনের আরেকটি বাগাড়। তিনি দাম হাঁকছেন এক লাখ টাকা। কয়েকজন ক্রেতা ভাগাভাগি করে সেটি ৭০ হাজার টাকায় কিনে নেন।বাসেদ আলী নামে এক ব্যবসায়ী ৪০ কেজি ওজনের পাঙাশ বিক্রি করতে এসেছেন। তিনি বলেন, অন্যবার এ মেলায় বড় মাছের কদর ছিল বেশি, এবার ছোট মাছ বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত ৪০ কেজি ওজনের একটি পাঙাশ মাছ বিক্রি হয়নি।নাটোরের সিংড়া থেকে ২৫ কেজি ওজনের কয়েকটি কাতলা মাছ বিক্রি করতে এসেছেন ব্যবসায়ী আসলাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘হরতাল-অবরোধে এবার মেলা ঠিকমতো জমেনি। পথে পথে অনেক কষ্ট করে হরতালে মেলায় এসেছি। বিক্রি না হলে লোকসান দিতে হবে।’ গতকাল বুধবার বগুড়ার গাবতলী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলার দৃশ্য ছিল এমনটা।গোলাবাড়ী গ্রামের প্রবীণ আবদুর রহমানসহ সাত-আটজন বলেন, প্রায় ৪০০ বছর ধরে মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বন্দরে ইছামতী নদীর তীরে প্রতি মাঘ মাসের শেষ বুধবারে একটি বটবৃক্ষতলে বসে এই মেলা। নদীতে ধরা বিশাল আকৃতির মাছ ছাড়াও এবারের মেলায় অন্যতম আকর্ষণ ছিল ১৫ কেজি ওজনের রসে ভাষা ‘বালিশ মিষ্টি’।মেলায় এবারও উঠেছে ১০ থেকে ১৫ কেজি ওজনের বড় বড় মিষ্টি। ঘন রসে ভাসা এ মিষ্টির স্থানীয় নাম ‘বালিশ মিষ্টি’। মিষ্টি ব্যবসায়ী বাদশা মিয়া বলেন, এই মেলার আকর্ষণ বড় মিষ্টি। এই মিষ্টি বিক্রি করা হচ্ছে প্রতিকেজি ২০০ টাকা। কিন্তু এবার মেলায় লোক সমাগম কম হওয়ায় বড় মিষ্টির ক্রেতাও কম।সকাল থেকেই শিশু-কিশোরদের ভিড়ে সরগরম হয়ে উঠেছিল মেলা। শিশুরা নাগরদোলায় চড়ে, হরেক খেলনা আর রঙিন বেলুন কিনে আনন্দ-ফুর্তি করে। মেলায় উঠেছিল আসবাব, গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় নানা সামগ্রী, মসলাসহ হরেক রকম পণ্য।গোলাবাড়ী গ্রামের আবদুল জোব্বার বলেন, মেলা উপলক্ষে নববধূরা নাইওর আসেন শ্বশুরবাড়ি। বাবার বাড়িতে নাইওর আসেন মেয়েজামাই। এক দিন আগে থেকেই সাজ সাজ রব পড়ে যায় চারদিকে। মেলা উপলক্ষে আত্মীয়স্বজনের দাওয়াত খাওয়ানো এখন এই এলাকার মানুষের সামাজিক রীতিতে পরিণত হয়েছে।