বাংলাদেশ

মধ্যপ্রাচ্যে যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশি মেয়েরা

আরব দেশগুলোতে ক্রমবর্ধমান যৌনদাসীর
চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল থেকে
প্রতিবছর হাজার হাজার নারীকে পাচার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ও নেপালি নারীদের মোটা বেতনের
চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে নেওয়া হয়
এবং সেখান থেকে ভারতীয় নারীসহ পাচারের
শিকার নারীদের বিভিন্ন রুটে 'ইসলামিক স্টেট'
জঙ্গিসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে
বিক্রি করা হয়। পাচারকারীরা কলকাতা, নয়াদিল্লি ও
মুম্বাইকে তাদের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে
ব্যবহার করছে।
সম্প্রতি ভারতে এক সৌদি কূটনীতিকের বাসা
থেকে ধর্ষিত এক নেপালিসহ সাত নারীকে
উদ্ধারের ঘটনা তদন্তের সূত্র ধরে মধ্যপ্রাচ্যে
নারী পাচারকারীদের বিশাল নেটওয়ার্কের সন্ধান
পায় ভারতীয় পুলিশ। পাচার নেটওয়ার্কে ভারতীয়
বিভিন্ন এয়ারলাইনস ও অভিবাসন কর্মকর্তারা জড়িত
বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। মূলত তিন দেশের
দরিদ্র নারীরা এই যৌনদাসী ব্যবসার শিকার
হচ্ছে, যারা দারিদ্র্য ও নানা দুঃখকষ্টের কারণে
সহজেই প্রলোভনের শিকার হয়।
ভারতের নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকার 'বিক্রির
জন্য মানুষ : ভারত হচ্ছে যৌনদাসীদের
পাচারপথ' শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য
প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার পত্রিকাটির
মুদ্রণ সংস্করণের (প্রিন্ট ভার্সন) শীর্ষ
প্রতিবেদনটি ছিল এ খবরটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যৌন পাচারকারীরা
(সেক্স ট্রাফিকার) নয়াদিল্লি, মুম্বাই ও কলকাতাকে
তাদের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করছে।
আর নারী শিকারি ও তাদের সহযোগীদের এই
ভয়ংকর জালে জড়িয়ে পড়েছেন ভারতের
একশ্রেণির এয়ারলাইনস ও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা।
ভারতে গত জুলাইয়ে সৌদি দূতাবাসের ফার্স্ট
সেক্রেটারি মাজিদ আশুর ও তাঁর সৌদি
সহযোগীরা সাত নারীকে গুরগাঁর একটি বাসায়
আটকে রেখে দীর্ঘদিন ধর্ষণ ও মারধর
করেন। খবর পেয়ে ২৭ জুলাই পুলিশ তাদের
উদ্ধার করে। তাদের মধ্যে ২৪ বছর বয়স্ক রীমা
(ছদ্মনাম) নামে এক নেপালি নারী রয়েছেন,
যাঁকে চাকরির কথা জেনে এজেন্টদের হাতে
তুলে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা। এই রীমা ও তাঁর
সঙ্গীদেরও গন্তব্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যের
যৌনদাসী ব্যবসার বাজার। যেদিন তাঁদের উদ্ধার
করা হয়, সেদিনই তাঁদের দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী
বিমানবন্দর হয়ে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানোর কথা ছিল।
নিউ ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের অনুসন্ধানে জানা
গেছে, তিনটি দেশ থেকে সংগ্রহ করা নারী ও
তরুণীদের প্রথমে শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড,
মরক্কো ও থাইল্যান্ডে পাঠানো হয়। পরে এসব
দেশ থেকে আরব আমিরাত, কুয়েত, সৌদি
আরবের পাশাপাশি মিসর ও সিরিয়ার ভিসা সংগ্রহ করা হয়।
এ ছাড়া সম্প্রতি আফ্রিকাও যৌনদাসী ব্যবসার উঠতি
বাজার হয়ে উঠেছে। এ বাজারে তানজানিয়া ও
কেনিয়ার ক্রেতারাও এখন ভিড় করছে।
সৌদি কূটনীতিক মাজিদ আশুরের ঘটনাটি তদন্ত
করতে গিয়ে ভারতীয় পুলিশ এয়ার ইন্ডিয়ার দুই
কর্মকর্তা মনিষ গুপ্ত ও কপিল কুমারের জড়িত থাকার
প্রমাণ পেয়েছে, যাঁরা বিমানের বোর্ডিং পাস ইস্যুর
কাজ করে থাকেন।
বাংলাদেশ থেকে দরিদ্র নারীদের মধ্যপ্রাচ্যে
যৌনদাসী ব্যবসায় বিক্রির বিষয়টি জানা গেছে
সম্প্রতি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড
অ্যানালিসিস উইংয়ের (র) একটি চিঠির সূত্রে। র গত ২
সেপ্টেম্বর দিল্লি পুলিশের প্রতি একটি সতর্কবার্তা
জারি করে। এতে উল্লেখ করা হয়, "বাংলাদেশি
তরুণীদের নয়াদিল্লি হয়ে দুবাই, কুয়েত ও সৌদি
আরবে পাচার করা হচ্ছে। ভারত থেকে পাচার
চক্রের কেউ একজন গত ৩১ আগস্ট তাদের
বাংলাদেশি নারী সহযোগীর সঙ্গে ফোনে
কথা বলে। তাতে ভারত থেকে জানানো হয়,
দিল্লিতে একটি 'মাধ্যম' পাওয়া গেছে, যারা
বাংলাদেশিদের কুয়েত, সৌদি আরব ও দুবাইয়ের
ভিসা পাইয়ে দেবে।" কেন্দ্রীয় এ গোয়েন্দা
সংস্থাটি দিল্লি পুলিশকে ছাড়াও দিল্লির অভিবাসন ব্যুরো
ও বিমানবন্দর কর্মকর্তাদের কাছেও সতর্কবার্তাটি
পাঠায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মূলত রীমার ঘটনাটিই নেপালি
কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যে
মধ্যপ্রাচ্যের যৌনদাসী ব্যবসার বাজারে
নিজেদের দরিদ্র নারীদের বিক্রি ঠেকাতে
নেপালের পুলিশ কর্মকর্তারাও ভারতীয় নিরাপত্তা
বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ
করতে বর্তমানে দিল্লি সফর করছেন।
গত ২৫ জুলাই ভারতীয় পুলিশ বিষ্ণু তামাং ও দয়া রাম
নামে দুই নেপালি মানবপাচারকারীকে গ্রেপ্তার
করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ সূত্রে জানা গেছে,
একেকজন নারী পাচারকারীদের হাতে তুলে
দেওয়ার বিনিময়ে এজেন্টদের পাঁচ হাজার রুপি
দেওয়া হয়। গত দুই মাসে তারা ৭০০ নারী পাচার
করেছে, যাদের পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোতে
বিক্রি করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতীয় পুলিশ গত বছর ২৩৫
জন নারীকে পাচারকারীদের হাত থেকে উদ্ধার
করে। ২০১৩ সালে ১৬০ জনকে উদ্ধার করা হয়।
২০১২ সালে ৪২ জন নেপালিসহ ১৮৫ জন নারী ও
তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে পুলিশের
বিরুদ্ধে নজরদারির অভিযোগ উঠলে দিল্লি
পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন,
পাচারকারী নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ধোঁকা
দিয়ে থাকে।