বাংলাদেশ

ঢাকার অশ্লীল কর্মকান্ডের নিরাপদ স্থান

বলধা গার্ডেন, ঢাকার একটি ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে দেশে-বিদেশে পরিচিত। এদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক-বাহক হিসেবে কালের সাক্ষি হয়ে আছে। স্বাধীনতার আগে ও পরে বাংলাদেশে কোন বিদেশি পর্যটক এলে তাদের পছন্দের তালিকায় ঢাকার ওয়ারীতে অবস্থিত বলধা গার্ডেনের নামটিও থাকতো। এছাড়া দেশের ভ্রমণ ও সৌন্দর্য পিপাসু মানুষও সপরিবারে বলধা গার্ডেনে বেড়াতে যেতেন। নানা কারণে ঐতিহ্যবাহী বলধা গার্ডেন আজ প্রায় ধ্বংসের মুখে। ঢাকার মানুষের এক সময়ের বিনোদনের প্রাণকেন্দ্র বলধা গার্ডেনে আজ অবাধে চলে মাদক সেবন ও অশ্লীলতা।১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষবার ঢাকায় এসেছিলেন। তখন বলধা গার্ডেনসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করেন তিনি। বলধা গার্ডেনে বেড়াতে এসে কবি এখানকার জয় হাউসে উঠেছিলেন। এক রাত কাটিয়েছিলেনও তিনি। বলধা গার্ডেনের হাজারো উদ্ভিদের ভিড়ে ক্যামেলিয়া কবিকে বেশি আকৃষ্ট করেছিল। তাই ক্যামেলিয়া ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কলকাতা ফিরে লেখেন তার বিখ্যাত কবিতা ক্যামেলিয়া। যা পুনশ্চ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। পরবর্তী সময়ে এ কবিতা নিয়ে চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। ওয়ারীর বলধা গার্ডেনের সিবিলি অংশে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে ‘ক্যামেলিয়া হাউস’। ক্যামেলিয়া হাউসে বিভিন্ন ধরনের ক্যামেলিয়া ফুলগাছ দিয়ে ভরা। ডিসেম্বর মাস এলেই গাছে ঝেঁপে আসে ক্যামেলিয়া ফুল। এর পাতা গাঢ় সবুজ। ক্যামেলিয়া ফুল লাল, সাদা, গোলাপীসহ বিভিন্ন রংয়ের হয়ে থাকে। দেখতে অনেকটা গোলাপ ফুলের মতো হলেও সৌন্দর্যে ক্যামেলিয়ার তুলনা শুধু ক্যামেলিয়াই। বলধা গার্ডেন দেখে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, পৃথিবীর বহু রাজা-মহারাজার বাড়িতে কত রকম ফুলের বাগানই তো দেখলাম কিন্তু বলধা গার্ডেনের মতো বাগান কোথাও দেখিনি।বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ৩.৩৮ একর জমির ওপর ১৯০৯ সালে উদ্যানটি নির্মাণের কাজ আরম্ভ করেন। যা শেষ হতে সময় লেগেছিল প্রায় ৮ বছর। বিরল প্রজাতির ৮০০ গাছসহ বাগানটিতে প্রায় ১৮ হাজার গাছ রয়েছে। বর্তমানে এখানে  ৬৭২ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। বাগানটিতে এমনও অনেক প্রজাতির গাছ রয়েছে, যা বাংলাদেশের অন্য কোথাও নেই। এখানে শুধুমাত্র ক্যাকটাসই রয়েছে ৭০ প্রজাতির। এছাড়াও যেসব প্রজাতির গাছ নিয়ে গড়ে উঠেছে এ বাগান সেগুলো হলোÑ অর্কিড, জলজ উদ্ভিদ, শিলালগ্ন প্রজাতি, দেয়াল লতা, বৃক্ষশালাসহ বিবিধ গাছপালা। জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী ওয়ারী, টিকাটুলী ও নারিন্দার ঠিক মাঝখানে দু’টি ভাগে বলধা গার্ডেন তৈরি করেন। বলধা গার্ডেনের এক পাশের নাম সাইকি এবং অপর পাশের নাম সিবিলী। ‘সাইকি’ অর্থ আত্মা এবং ‘সিবিলী’ ছিল গ্রিকের প্রকৃতি দেবীর নাম। বলধা গার্ডেনের সাইকি অংশে সবার যাওয়ার অনুমতি নেই। এটা বন্ধ করে রাখা হয়। কারণ এমন কিছু দুর্লভ প্রজাতির গাছ রয়েছে যা মানুষের আনাগোনায় নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। শুধু গবেষকরা এখানে যেতে পারেন। সাইকিতে রয়েছেÑ নীল, লাল ও সাদা শাপলাসহ রঙ্গিন পদ্মা, তলা জবা, অপরাজিতা, ক্যাকটাস, পামগাছ, জবা প্রভৃতি। এখানে আরো রয়েছে ‘সেঞ্চুরি প্লান্ট’ নামক শতবর্ষে একবার ফোটা ফুলের গাছ। আরো রয়েছে বাওবাব নামক এক ধরনের গাছ। এ গাছের খোঁড়ল এর মধ্যে আফ্রিকার আদিবাসীরা মিসরের ফারাওদের বহু পূর্বেই মৃতদেহ রেখে মমি বানাত। এ অংশের দু’টি গ্রিন হাউসের একটিতে আছে নানা প্রজাতির অর্কিড এবং অপরটিতে রয়েছে ঔষধি ও ইনডোর উদ্ভিদ। এখানেই ছিল বলধার জমিদার বাড়ি। বলধা গার্ডেনের সিবিলি অংশটি সবার জন্য উন্মুক্ত। বাগানের এ অংশে রয়েছে সূর্যঘড়ি। যার মাধ্যমে সূর্য নিজেই সময় বলে দেয়। এছাড়াও এখানে শঙ্খনদ নামক একটি দৃষ্টি নন্দন পুকুর রয়েছে। সিবিলিতে বিরল প্রজাতির পদ্মফুল রয়েছে যা জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ আফ্রিকা থেকে এনেছিলেন। এখানে আরো রয়েছে ক্যামেলিয়া, পারুল, কনক, সাদা অপরাজিতা, নীল শাপলা, আমাজন লিলি, কদম, চালতা, ঝুমকো লতা, ছায়াতরু, শতমূলী, এলাচি ফুল, কনক সুধা, আফ্রিকান টিউলিপ, অর্কিড, এনথুরিয়াম, স্বর্ণ অশোকসহ অনেক দুর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদ। ১৯৪৩ সালে জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর এ বাগানটির দায়িত্ব নেয় কলকাতা হাইকোর্ট। সে সময় হাইকোর্ট সরাসরি এ বাগানটির তত্ত্বাবধানে ছিল। পরবর্তীতে ১৯৫১ সালে পাকিস্তানের ‘কোর্ট অব ওয়ার্ডস’ বলদা গার্ডেনের দায়িত্ব নেয়। স্বাধীনতার পর বন বিভাগ এর তদারকি ও উন্নয়নের দায়িত্ব পায়। বর্তমানে বন বিভাগ গার্ডেনটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দিয়েছে। বর্তমানে রাজধানীর ৪১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরোয়ার হোসেন আলো প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুমি এন্টারপ্রাইজ টেন্ডারের মাধমে গার্ডেনটি পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে। বাৎসরিক ৩৬ লাখ টাকা দেয়ার শর্তে এ কাজ পেয়েছেন তিনি। তার ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আনিসুর রহমান অপু, কাদের, স্বপন ও জডায় পার্কটি সরোয়ার হোসেন আলোর পক্ষে দেখাশোনা করেন। বলধা গার্ডেনকে অভিহিত করা হয় ফুল ও উদ্ভিদের মিউজিয়াম বা যাদুঘর হিসেবে। নগর জীবনের ব্যস্ততা ভুলে একটু প্রশান্তির আশায় একান্তে সময় কাটাতে অনেকেই একসময় এখানে ছুটে আসতেন। দেশি-বিদেশি প্রকৃতিপ্রেমীরা এখানে ভিড় করতেন নির্মল হাওয়ায় নির্জনে একটু সময় কাটাতে। এখন বলধা গার্ডেনের সে পরিবেশটি নির্বাসিত প্রায়। বলদা গার্ডেনের সিবিলি অংশটি চলে গেছে বিকৃতমনা তরুণ-তরুণীদের দখলে।  গত কয়েকদিন ধরে সরজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, রাজধানীর অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এ উদ্ভিদ পার্কটি পরিণত হয়েছে অশ্লীলতা, নোংরামি আর মাদকসেবীদের আখড়ায়। এখন আর কোন ভদ্র, রুচিশীল মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে এখানে আসার রুচি সাহস করেন না। পার্কটিতে প্রবেশ করলে যে কাউকেই পড়তে হবে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। এমন দৃশ্য চোখে পড়বে যা লেখা তো দূরের কথা মুখেও বলা সম্ভব নয়। অন্যদিকে টিকেটের দাম দ্বিগুণেরও বেশি নেয়া, পার্কে বেড়াতে আসা প্রেমিক-প্রেমিকাদের নানা চলছুতোয় মোবাইল ফোন, নগদ টাকাসহ সঙ্গে থাকা দামি জিনিসপত্র রেখে দেয়া ও অপ্রীতকর অবস্থায় প্রেমিক-প্রেমিকাদের ধরে জরিমানার নামে টাকা-পয়সা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে পার্কটির ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক রাজধানীর ৪১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরোয়ার হোসেন আলোর সাথে ০১৯১৭৮৯৮৯৮৯ নাম্বারে ফোন করলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।পুরান ঢাকার বলধা গার্ডেন, ইট-পাথরের এই শহরে একটুরো সবুজ। এখানে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে শুধু পুরান ঢাকা বা রাজধানীবাসীরাই যাতায়াত করেন না। এই ঐতিহাসিক বলধা গার্ডেন বিদেশী পর্যটকদেরই বেশি আকৃষ্ট করে থাকে। যে কারণে কোন বিদেশী পর্যটক বাংলাদেশে বেড়াতে এলে তাদের পছন্দের তালিকায় এ পার্কের নামটিও থাকে। এই পার্কে বিদেশী পর্যটকদের আসার শুরু সেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকেই। যা আজও বিদেশীদের নানা কারণে আকর্ষিত করে থাকে। সনাতন ধর্মালম্বিরা এ পার্কেটিতে আসতে হয় পূজো দিতে, না হয় পূজোর সামগ্রী সংগ্রহ করতে।  গার্ডেনের ভেতর যেখানে একসময় সব বয়সি মানুষের ভিড় লেগে থাকত, ভোর হলেই শরীরচর্চার জন্য ছুটে আসত শিশু, কিশোর, পৌঢ় কিংবা বৃদ্ধরাও, সেখানে এখন শুধু তরুণ-তরুণীদের অশ্লীল আড্ডা। সবার বয়স পনের থেকে তিরিশের মধ্যে। গাছের ফাঁকে ফাঁকে দেখা মিলবে স্কুল ড্রেসপরা ছাত্রীদের। চোখে পড়বে হাতে হাত ধরে যুবক-যুবতীদের চুম্বন দৃশ্য বা এর চেয়েও বেশি কিছু! পুকুরপাড়, শতায়ূ উদ্ভিদের আড়াল, গোলাপ বাগান, আঙুর বাগান বা বাঁশ ঝাড়ের আড়ালে জোড়া জোড়া তরুণ-তরুণীকে নিজ সংস্কৃতি, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ এসব কিছুতে তাদের কিছুই যায় আসে না।এবিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের ডিসি, সৈয়দ নূরুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, এখানে অশ্লীল কর্মকা- হয়, তা আমার জানা ছিল না। আপনার মাধ্যমে আমি প্রথম জানতে পারলাম। তিনি বলেন, পার্কে ভিতরে প্রেমিক-প্রেমিকা বা বন্ধু-বান্ধবী পাশাপাশি হাত ধরে বসবে। আড্ডা দিবে এতে দোষের কি। পার্কের ভেতর অশ্লীল কর্মকা- আর কি-ই-বা হতে পারে। আর আপনি-ই-বা অশ্লীল কর্মকা- বলে কি বুঝাতে চান, তা আমার বুঝে আসছে না। তবে এ বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব, যদি এর থেকে বেশি কিছু ঘটে থাকে তার জন্য আমরা ব্যবস্থা নেব। টিকেটে দাম বেশি নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ইজারাদার প্রতিষ্ঠান যদি টিকেটের দাম বেশি নিয়ে থাকে আর সেটা যদি প্রমাণিত হয়। তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেব।   পার্কের ভিতর গেলে যে কারও মনে হবে এটা যেন কোন এক যৌনপল্লী কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকার জন্য নানা ভঙ্গিতে যৌন কসরত করার প্রতিযোগিতা কেন্দ্র। তারা যা করছে তা বর্ণনার অযোগ্য। কোনো অভিভাবকের কাছেই যা মেনে নেয়ার মতো নয়। বাগান ও গাছের আড়ালে এসব স্কুল-কলেজের বালক-বালিকা ও পরকীয়া প্রেমিদের প্রেমের নামে অবাধে অশ্লীল যৌনতার নানা কসরতে দৃশ্য, এ যেন সমাজের একটি অবক্ষয়চিত্রকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখতে গেলে মানিক নামের পার্কের এক কর্মচারির ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় এ প্রতিবেদককে। ওই কর্মচারী অগ্নিমূর্তিতে তেড়ে এসে এ প্রতিবেদকে বলেন, এই আপনি সিঙ্গাল কেন ঘুরাঘুরি করছেন? এখানে সিঙ্গাল আসার কোন নিয়ম নেই। আপনি একলা পার্কের ভিতর ঘুরাঘুরি করছেন। যে কারণে অন্যেরা বিব্রত হচ্ছে। যান যান, দেখা শেষ হলে তাড়াতাড়ি পার্ক থেকে বেরিয়ে যান। এ প্রতিবেদক ওই কর্মচারীকে বললেন, আমিতো একলা না, আমরা দু’জন এসেছি। তা শুনে ওই কর্মচারী আরও ক্ষেপে গিয়ে বলেন, ছেলে মানুষ দু’জন হলে চলবে না। এখান একজন মেয়ে ও এক ছেলে (প্রেমিক-প্রেমিকা) এসে থাকেন। এখানে তারা যেন নিরবে, নিরজনে, নিভৃতে, নিশ্চিন্তে বসে প্রেম করতে পারে আমরা তাদের জন্য সে ব্যবস্থা করেছি। আপনাদের জন্য তাদের সমস্যা হচ্ছে।মানিক নামের ওই কর্মচারী আরও বলেন, আমরা ৬ জন কর্মচারী আছি তাদের (প্রেমিক-প্রেমিকাদের) নিরাপত্তা দেয়ার জন্য। তাদের কোন সমস্যা হয় কি না সেটা আমাদেরকে দেখতে হয়। সমস্যা কি হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ যেমন একজনের বৌ অন্যজনের সাথে কিংবা এজনের প্রেমিক বা বন্ধু অন্যজনের সাথে এসে ধরা পড়ে গেল। এ ছাড়াও তাদের মধ্যে কোন প্রকার ঝগড়া বিবাদ সৃষ্টি হলে আমরা গিয়ে মীমাংসা করে দেই।একপর্যায় তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, বেশি কিছু জিগ্যাস করবেন না, এ পার্ক প্রেমিক-প্রেমিকাদের প্রেম করার জন্য আমরা বরাদ্দ নিয়েছি। আমরা এখানে ভেসে আসিনি। যান তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যান। গার্ডেনের সামনে কথা হয় নোমান নামের এক স্কুল ছাত্রর সাথে। ওই শিক্ষার্থী জানায়, তার বন্ধুদের মধ্যে যারা প্রেম করেন তারা এখানে নিয়মিত আসেন। কারণ এখানে কোনো অভিভাবক আসেন না। এটি প্রেমের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। অভিভাবকরা কেন আসেন নাÑ জানতে চাইলে সে জানায়, বিব্রতকর অবস্থায় পড়ার ভয়ে বয়স্ক কেউ এখানে আর আসতে চান না।ওয়ারির স্থানীয় এক অধিবাসী জানান, এক সময় তিনি বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে এখানে আসতেন। কিন্তু এখন তিনি তাদের সঙ্গে নিয়ে আসার সাহস পান না। আগের সেই পরিবেশ এখন নেই বলে জানান তিনি।একটি বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা আবদুর রহমান জানান, এখানে তিনি প্রায়ই আসেন, একটু প্রশান্তি লাভের আসায়। কিন্তু দিন দিন বাগানের পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, আর এখানে আসার পরিবেশ নেই। রাজধানীর এক সময়ের অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র এই পার্কটির চরিত্র হননের পেছনে প্রশাসনের দুর্নীতি ও অবহেলাকেই দায়ী করছেন এলাকাবাসী। পার্কে প্রবেশের জন্য দুটি শিফট রাখা হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বেলা ২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা। কিন্তু পার্ক কর্তপক্ষ সে নিয়ম মানেন না। সন্ধ্যার পরও বেশ সময় পার্কটি খোলা রাখা হয়। প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি রাখার কথা ১০ টাকা। কিন্তু রাখা হয় ২০ টাকা করে।  দিনের পর দিন চোখের সামনে দিনে দুপুরে এসব অসামাজিক কর্মকা- চলে আসলেও কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও নিশ্চুপ রয়েছে। উল্টো পার্ক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে অসামাজিক কাজ করার সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এলাকাবাসীর দাবি, এ গার্ডেনে তরুণ-তরুণীদের প্রবেশের ব্যাপারে কঠোর নিয়ম করা এখন সময়ের দাবি। বলধা গার্ডেন আবারও হয়ে উঠুক সামাজিক বিনোদনকেন্দ্র।