কলাম

বঙ্গবন্ধুর সাথে স্বপ্নে কিছু কথা

০২ জানুয়ারী, ২০১৮। আরবী মাসের ১৪ তারিখ। আইয়্যাম বিজের ২য় রোজা পালনের পর শেষ রোজার জন্য প্রস্তুত। যথারীতি বই পড়তে পড়তে ঘুমে পড়েছি। স্বপ্নে দেখি, গ্রামের পরিবেশে শীতের সকালে মিষ্টি রোদে ঘরের বারান্দায় বসে কোরান পাঠ করছি। তাকিয়ে দেখি, সামনে বঙ্গবন্ধু দাঁড়িয়ে। স্বাভাবিক বেশভূষা। সাদা পাঞ্জাবি, পাজামা ও কালোকোট। ৭ই মার্চে ভাষণদানকালে যে পোশাক ছিল, হুবহু তাই। আমি তো অবাক! ভালো করে নজর করলাম, দিব্যি বঙ্গবন্ধু। আমি অস্থির হয়ে উঠে পড়লাম। তাড়াতাড়ি বারান্দা থেকে নামতে লাগলাম। বঙ্গবন্ধু শান্ত গলায় বললেন,
থাম! এতো অস্থির হবার দরকার নেই।
আমি বারান্দা থেকে নামতেই বঙ্গবন্ধু হাত এগিয়ে দিলেন। আমি আস্সালামু আলাইকুম বলে হাত ধরেই বঙ্গবন্ধুকে জড়িয়ে ধরলাম। এতোটাই আবেগাপ্লুত হলাম যে, হাউমাউ করে কান্না শুরু করলাম। বঙ্গবন্ধু আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন। এরপর দেখি, একটি সুন্দর চেয়ারে উঠানে মিষ্টি রোদে বঙ্গবন্ধুকে বসিয়েছি। আর তখনও হাত ধরে আছি।
আমি বললাম, পিতা! কেমন আছেন?
বঙ্গবন্ধু হাত ছেড়ে (ধমকের সুরে) বললেন, এই! তুই আমাকে পিতা বললি কেন?
আমিঃ আপনি তো বাঙ্গালি জাতির পিতা।
বঙ্গবন্ধুঃ সাবধান! আমাকে জাতির পিতা বলবিনা।
আমিঃ আমিতো শুধু জাতির পিতা বলিনি। বাঙ্গালি জাতির পিতা বলেছি।
বঙ্গবন্ধুঃ (কিছুক্ষণ থেমে) ও....! তাহলে ঠিক আছে।
বঙ্গবন্ধুঃ আমি অল্প সময়ের জন্য তোর সাথে দেখা করতে এসেছি।
বঙ্গবন্ধুঃ তুই রোজা আছিস না?
আমিঃ জ্বি পিতা। (স্বপ্নে মনে হচ্ছে, আমি রোযা আছি)।
বঙ্গবন্ধুঃ আমি তোকে একটি কষ্টের কথা জানাবো।
আমিঃ জ্বি পিতা, বলেন?
বঙ্গবন্ধুঃ প্রতিবছর বেশ কয়েকদিন আমাকে বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়। তাতে কোরানখানী, পুস্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা অনুষ্ঠানসহ কত কি হয়। এবছর ১৫ই আগষ্টের রাতে সাইফুল নামে একজন কোরানের হাফেজকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের হাফেজ পিতাকেও নির্যাতন করা হয়েছে। আমার যে কী কষ্ট হয়েছে, বুঝাতে পারবোনা।
আমি কান্না করছি। চোখের পানি মুছে ফুরাতে পারছিনা।
বঙ্গবন্ধুঃ তুই কাঁদিস ক্যান?
আমিঃ পিতা! আপনি কারো সাথে দেখা করে এটা বলেননি?
বঙ্গবন্ধুঃ আমার দেখা করার পারমিশান নাই।
আমিঃ পিতা! আমার সাথে..?
বঙ্গবন্ধুঃ শুধু তোর সাথে অল্প সময়ের জন্য দেখা করার পারমিশান পেয়েছি।
আমিঃ পিতা! একজন কোরানের হাফেজকে হত্যা করলো কেন?
বঙ্গবন্ধুঃ ওরা তাকে জঙ্গি হিসেবে হত্যা করেছে।
বঙ্গবন্ধুঃ তুই সেদিন রোজা ছিলি। তোর দোয়ায় আমি শান্তি পেয়েছি।
আমিঃ পিতা! সেদিন আমি হয়তো আইয়্যামবিজের রোজা ছিলাম।
বঙ্গবন্ধুঃ যে রোজাই হোক।
আমিঃ আল্লাহর কাছে আরো দোয়া করছি, আপনার যেন স্থায়ী শান্তি হয়।
বঙ্গবন্ধুঃ তোকে একটা দায়িত্ব দিচ্ছি। গত ১৫ই আগষ্টে আমার কষ্টের বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দিস।
আমিঃ কাকে জানাবো? কিভাবে জানাবো?
বঙ্গবন্ধুঃ সবাইকে জানাবি। লেখার মাধ্যমে জানাবি।
আমিঃ আমার লেখা কয়জনইবা প্রকাশ করবে, আর কয়জনইবা দেখবে?
বঙ্গবন্ধুঃ সে চিন্তা তোর কেন? তোকে দায়িত্ব দিয়েছি, তুই জানাবি।
আমিঃ পিতা! এতে আমার ক্ষতি হবে না তো?
বঙ্গবন্ধুঃ ইনশাল্লাহ, কেউ তোর ক্ষতি করবেনা।
আমিঃ ইনশাল্লাহ, অবশ্যই জানাবো।
বঙ্গবন্ধুঃ শুকরান। তবে সাবধান।
আমিঃ কেন পিতা?
বঙ্গবন্ধুঃ তুইতো রাজনীতি বুঝিসনা।
আমিঃ কিসের রাজনীতি?
বঙ্গবন্ধুঃ এখন চলছে- জঙ্গি অভিযান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অবৈধ স্বার্থ হাসিল আরো অনেক কিছু।
আমিঃ এসব নিয়ে রাজনীতি হয় কিভাবে?
বঙ্গবন্ধুঃ এ যে জঙ্গি অভিযান। সম্পুর্ণ রাজনীতির খেলা। যেমন- গুলশান হলি আর্টিজানে হামলা। এটা সবারই জানা।
আমিঃ জ্বী পিতা, তাই?
বঙ্গবন্ধুঃ হলি আর্টিজানে হামলার পর সেনাবাহিনীর প্রেসব্রিফিং শুনিসনি? তারা বললো, মাত্র ৬/৭ জঙ্গি হামলা চালিয়েছে। জঙ্গিদের আক্রমণে প্রথমেই ২পুলিশ নিহত ও ৪০পুলিশ আহত হয়েছে। তারপর জঙ্গিরা হোটেলে প্রবেশ করে ১৫/১৬ জনকে নিরাপদে ছেড়ে দিয়েছে। আর দেশের সুদক্ষ প্রতিরক্ষাবাহিনী জঙ্গিদেরকে সারারাত অবকাশ দিয়েছে। এসুযোগে জঙ্গিরা ২০ জনকে হত্যা করে সারারাত হোটেলের মেঝেতে নিরবে কাটিয়েছে। সকালে অপারেশন থান্ডারবোল্ট শুরু হলে, জঙ্গিরা যুদ্ধ করে নিহত হয়েছে। এঘটনার পর এখনও সে হামলায় অভিযুক্তদের পাওয়া যায় কিভাবে? এটা কি রাজনীতির খেলা নয়? থাক, তুই বুঝবিনা।
আমিঃ ও আচ্ছা! এটা বলার দুঃসাহস কি কারো আছে?
বঙ্গবন্ধুঃ ঠিকই। ঘুমন্ত ও অলস বাঙ্গালি জাতিকে সহজে জাগানো যায়না।
বঙ্গবন্ধুঃ তুই বিসিএসে ২বার ভাইভা দিয়েছিস। তোর চাকরি হয়নি কেন, জানিস?
আমিঃ পিতা! আমি জানিনা।
বঙ্গবন্ধুঃ এটাও রাজনীতি। তোর মুক্তিযোদ্ধা কোটা নেই, তাই চাকরি হয়নি।
আমিঃ জ্বী পিতা? মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রাজনীতি?
বঙ্গবন্ধুঃ এটা আরো জঘন্য রাজনীতি।
আমিঃ তার মানে?
বঙ্গবন্ধুঃ দেশ স্বাধীনের জন্য আমি কতইনা সংগ্রাম করেছি। অথচ মাত্র ২লাখ তালিকাভুক্ত ব্যক্তি স্বাধীনতার স্বার্থ ভোগ করছে।
আমিঃ পিতা! আপনি বর্তমান ঘটনাবলীও দেখতে পান এবং জানেন?
বঙ্গবন্ধুঃ আমি সাধারণ মৃতদের মতো নই। আমি জীবিত। তোরা বুঝবিনা। আমি সবই দেখতে পাই, সবই বুঝি। শুধু প্রকাশ করতে পারিনা।
আমিঃ জ্বী পিতা! আপনি কি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করেননি? অসহায়, দুস্থ ও পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দেননি?
বঙ্গবন্ধুঃ শুধুমাত্র ৬৭৬ জনকে খেতাব দিয়েছিলাম। এছাড়া দেশের আপামর জনতাকেই মুক্তিযোদ্ধা ও লাখো শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলাম। তখন মুক্তিযোদ্ধা-ভাতা বা কোটার প্রয়োজন ছিলনা। আমি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও করিনি। আমি কি জানতাম, ওরা ৩০লাখ শহীদ নিয়ে প্রশ্ন তুলবে? ৩০লাখ শহীদ পরিবারকে বাদ দিয়ে মাত্র ২লাখ মুক্তিযোদ্ধা তালিকা করবে? আমি কখনো মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ আলাদা করিনি।
বঙ্গবন্ধুঃ তুই আফসোস করিসনা। তোর বিসিএস হয়নি তো কি হয়েছে? তুই কি এখনও ঐ চাকরি চাস?
আমিঃ পিতা! আমি ধন্য। আমি আপনার কাছ থেকে সান্তনা পেয়েছি। তবে পিতা! আমার মতো আরো বহুজন এ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এর কোনো প্রতিকার নেই?
বঙ্গবন্ধুঃ অবশ্যই আছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা-ভাতা ও কোটা বাতিল করতে হবে। তখন কেউ মুক্তিযোদ্ধা পদবি ব্যবহার করে অবৈধ স্বার্থের জন্য বাড়াবাড়ি করবেনা। তখন ৩০লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেনা। ৩০লাখ শহীদ পরিবার বঞ্চিত হবেনা। সবাই খাঁটি দেশপ্রেমিক হবে।
বঙ্গবন্ধুঃ আমার সময় শেষ। ঐ দেখ, ডাকতে এসেছে।
আমিঃ (কান্না করছি) কোথায়?  কাউকে তো দেখা যাচ্ছেনা।
বঙ্গবন্ধুঃ তুই দেখতে পাবিনা। যা দায়িত্ব দিলাম, ঠিকমতো পালন করিস।
আস্সালামু আলাইকুম বলে হাত এগিয়ে দিলেন। আমি আবার বঙ্গবন্ধুকে জড়িয়ে ধরেছি। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে।
এসময় ঘুম ভেঙে গেল। দেখি, চোখের পানিতে বালিশটা বাস্তবেই ভিজে গেছে। মনে হলো, কি মহান সম্পদ হারালাম। হায় আবার যদি বঙ্গবন্ধুর দেখা পেতাম! খুবই অস্বস্তি বোধ করছিলাম। রাত বাজে তিনটা। নফল নামাজ পড়লাম। তারপর সেহরী সেরে কোরান পড়ে বঙ্গবন্ধুর জন্য দোয়া করলাম। স্বপ্নে বঙ্গবন্ধুর কাছে যা শুনলাম, তা সত্যি কিনা যাচাই করার জন্য নিহত হাফেজ সাইফুল লিখে গুগলে সার্চ দিলাম। দেখলাম, সম্পুর্ণ সঠিক। আমি জানতাম না, ১৫ই আগষ্টে হাফেজ সাইফুল নামে কারো হত্যার ঘটনা। আবার হাফেজ সাইফুলের বাবা হাফেজ কিনা, তা জানার প্রশ্নই আসেনা। বঙ্গবন্ধু স্বপ্নে আমার সাথে দেখা করে তাঁর এ কষ্টের কথা বলার অর্থ কি, আমি ভেবে পাচ্ছিলামনা। স্বপ্নের এ কথাগুলো লেখা উচিত কিনা, অনেক চিন্তা করলাম। বিবেকের তাড়নায় লিখতে বাধ্য হলাম। আমি পেশাদার লেখক নই। তাই ভূল-ভ্রান্তি অস্বাভাবিক নয়। মূলত এটা স্বপ্নে দেখা বিষয়। তবু আশংকা হয়, বিষয়টি কে কিভাবে নেয়। আসলে স্বপ্ন নিয়ে রাজনীতি করার কিছু নেই। আমি স্বপ্নে বঙ্গবন্ধুর দেয়া নির্দেশ পালন করেছি, শুধু এ আশায়- যদি আবার বঙ্গবন্ধুর দেখা পাই।