শীতকালে শ্বাসতন্ত্রীয় রোগের প্রবণতা বেড়ে যায়। যাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল তারা ঘনঘন অসুস্থ হয়ে পড়েন। শ্বাসতন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ফুসফুস। শীতকালে ঠান্ডা ও ভাইরাস সংক্রমণে ফুসফুসে সহজেই নিউমোনিয়া হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য সমস্যার ঝুঁকি তো আছেই। তাই শীতে ফুসফুসের সুরক্ষায় বাড়তি সচেতনতার প্রয়োজন আছে। এখানে শীতে ফুসফুসকে সুস্থ রাখার আটটি উপায় উল্লেখ করা হলো।
* নাকের মাধ্যমে শ্বাস নিন: ফুসফুসে ঠান্ডা বাতাসের প্রবেশ এড়াতে মুখের পরিবর্তে নাকের মাধ্যমে শ্বাস নিতে পারেন। নাকের মাধ্যমে শ্বাসগ্রহণ করলে বাতাস উষ্ণ হতে বেশি সময় পায়। ফুসফুস উষ্ণ বাতাস পেলে অসুস্থতার প্রবণতা কমে আসে।
* স্কার্ফ/ফেসমাস্ক পরুন: ঠান্ডা আবহাওয়া শ্বাসতন্ত্রকে বিপর্যস্ত করতে পারে। ফুসফুসকে সুরক্ষিত রাখতে মুখমণ্ডল স্কার্ফে ঢেকে রাখুন অথবা ফেসমাস্ক পরুন। এর ফলে বাতাস ফুসফুসে প্রবেশের পূর্বেই উষ্ণ হবে। এটা ফুসফুসের ওপর ঠান্ডা বাতাসের প্রতিক্রিয়া কমিয়ে ফেলবে।
* জীবনযাপনে সচেতন হোন: গবেষণায় দেখা গেছে, ঠান্ডা বাতাস রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে ফেলে। ঠান্ডা বাতাস নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস ও ফ্লুর ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। শীতে ফুসফুসের সুরক্ষায় জীবনযাপনে সচেতনতা বাড়াতে হবে, যেমন- শীতের পোশাক পরতে হবে, ফেসমাস্ক ব্যবহার করতে হবে, শ্বাসতন্ত্রীয় সংক্রমণের উপসর্গ আছে এমন লোক থেকে দূরে থাকতে হবে ও ফ্লু শট নিতে হবে।
* বাইরে শরীরচর্চা থেকে বিরত থাকুন: তীব্র শীতে বাইরে শরীরচর্চা করলে উপকারের তুলনায় ক্ষতিই বেশি হতে পারে। ঠান্ডা বাতাস ফুসফুসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ঠান্ডা বাতাস শরীরের উষ্ণতা কমিয়ে হাইপোথার্মিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ঠান্ডায় রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে, যার ফলে হৃদপিন্ড ও রক্তনালি সংক্রান্ত রোগ দেখা দিতে পারে। ঘরেই শরীরচর্চা করতে ট্রেডমিল কিনতে পারেন অথবা ব্যায়ামাগারের সদস্যপদ নিন।
* বায়ুদূষণ থেকে বাঁচুন: শীতে বায়ুদূষণের ঝুঁকিকেও উপেক্ষা করা যাবে না। একাধিক গবেষণায় বায়ুদূষণের সঙ্গে শ্বাসতন্ত্রীয় উপসর্গ, হৃদরোগ, রক্তনালির রোগ ও অকাল মৃত্যুর সম্পর্ক পাওয়া গেছে। বায়ুদূষণে শ্বাসতন্ত্রীয় রোগের আরো অবনতি হতে পারে। ফুসফুসে বায়ুদূষণের প্রভাব এড়াতে এন্টি-পলুশন মাস্ক পরতে পারেন।
* ফল ও শাকসবজি খান: শীতে ফুসফুস সুরক্ষায় পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে, বিশেষ করে ফল ও শাকসবজি। গবেষণায় দেখা গেছে, ফুসফুসের জন্য সবচেয়ে ভালো হলো মেডিটারেনিয়ান ডায়েট। মেডিটারেনিয়ান ডায়েটে সতেজ ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য, বাদাম, বীজ, বিনস, অলিভ অয়েল ও মাছের প্রাধান্য আছে। এই ডায়েটে পরিমিত পরিমাণে হাঁস-মুরগির মাংস, ডিম, পনির ও দই রাখা হয়েছে এবং মাঝেমধ্যে লাল মাংস ও মিষ্টি খাবার খাওয়া যাবে।
• প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান: পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, ফুসফুসের সার্বিক সুস্থতায় প্রোটিন একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি। প্রোটিন সেই মাংসপেশিকে শক্তিশালী করে, যা গভীর শ্বাসের সময় আমাদের ফুসফুসকে প্রসারিত করে থাকে। পর্যাপ্ত প্রোটিন খেলে সহজেই গভীর শ্বাস নিতে পারবেন। প্রোটিনের দুটি দারুন উৎস হলো- বিনস ও বাদাম।
* লবণ কমান: শীতে খাবারে লবণ কমানোর গুরুত্ব অন্যান্য মৌসুমের তুলনায় বেশি। চিকিৎসকদের মতে, অত্যধিক লবণ খেলে শরীর ফুলে যায় এবং তরল জমা হয়, যার ফলে ফুসফুসকে বেশি পরিশ্রম করতে হয় ও দুর্বল হয়ে যায়। ৫০০ মিলিগ্রামের বেশি লবণ রয়েছে এমন খাবার না কেনার পরামর্শ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, দৈনিক ২৩০০ মিলিগ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়।
তথ্যসূত্র: ফ্লোরিডা চেস্ট
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস