নিউইয়র্ক

আমেরিকায় বাংলাদেশের গর্ব তাহসিনা

মেয়েটির নাম তাহসিনা আহমেদ, বয়স ২২। এখনো
বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌহদ্দি পেরোনো হয়নি,নিউজার্সির মনমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরপর্যায়ে সোশ্যাল ওয়ার্ক ও ডেভেলপমেন্ট নিয়ে পড়ছেন।কিন্তু এরই মধ্যে তিনি নিজ শহর নিউ হ্যালিডনথেকে কাউন্সিল উইমেন হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।শুধু বাংলাদেশের নয়, দক্ষিণ এশিয়া থেকে আসা যেকোনোঅভিবাসীর মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী নির্বাচিতকাউন্সিল সদস্য তাহসিনা। গত নভেম্বরে তাঁর এবিজয়কে সবাই বলেছেন ঐতিহাসিক।দেখা হলে প্রথমেই জিজ্ঞেস করলাম, রাজনীতিতে নামারএই ভাবনা তাঁর মাথায় এল কী করে? সোজাসাপ্টা উত্তর,‘আমি হাইস্কুলে থাকতেই সোশ্যালওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত।একে রাজনীতি বলুন, আর যাই বলুন। আসল লক্ষ্য হলোঅন্যের জন্য কিছু করা। স্কুল থেকে, বাবা-মায়ের কাছথেকে উৎসাহ পেয়ে আমি নানা কাজের সঙ্গে জড়িয়েথেকেছি। কোনো পুরস্কারের আশায় নয়, সবার যদি ভালোহয়, এই আশায়।’মেয়েটির উত্তর শুনে একটু থমকে যেতে হয়। নিজের খেয়েবনের মোষ তাড়ানোর এ ব্যাপারটার সঙ্গে আমরা যেএকদম পরিচিত নই, তা নয়। কিন্তু এর পেছনে গোপনকিছু ব্যক্তিস্বার্থ কাজ করে। তাহসিনা বললেন উল্টোকথা। ‘আমি সেই স্কুল থেকেই নানা কাজে স্বেচ্ছাসেবকহিসেবে কাজ করেছি। ওবামার নির্বাচনী প্রচারণায়অংশ নিয়েছি। স্থানীয় ডেমোক্রেটিক পার্টির কংগ্রেসসদস্যদের নির্বাচনেও আমি কাজ করেছি। নিজে এক দিননির্বাচন করব, এই ভাবনা কখনো মাথায় ছিল না। এখনযখন নির্বাচিত হয়েছি, কাজ করার সুযোগ আরওবেড়েছে।’ডেমোক্রেটিক পার্টির তরফ থেকে তাহসিনা আগে থেকেইশহর কমিটির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁর কাজে মুগ্ধহয়েই পার্টির নেতাদের তরফ থেকে প্রস্তাব আসে একইতালিকা মেয়র পদপ্রার্থী ডোমিনিকস্টামপোন ও অপরকাউন্সিল ম্যান মাইকেল জনসনের সঙ্গে যৌথভাবেপ্রতিদ্বন্দ্বিতা করার।নিউ হ্যালিডন খুব বড় কোনো শহর নয়। সব মিলিয়েআট হাজার ঘর মানুষের বাস। এর মধ্যে বড়জোর শ দুয়েকবাংলাদেশিও রয়েছেন। তাহসিন আমাকে জানালেন,নির্বাচনের আগে শহরের প্রতিটি বাসায় তিনি কড়ানেড়েছেন, নিজে গিয়ে কথা বলেছেন, একবার নয়,একাধিকবার। ‘অধিকাংশ মানুষই আমার চেনা, সবাইআমাকে উৎসাহ দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি উৎসাহ পেয়েছিবাবা-মায়ের কাছ থেকে।’তাহসিনার বাবা আমিন আহমেদ দীর্ঘদিন নিউজার্সিরহ্যালিডনের বাসিন্দা। গর্বিত পিতা স্মিতমুখেজানালেন, মেয়েকে নিজের মতো করে বড় হতে তিনিবরাবর সাহায্য করেছেন। লেখাপড়ায় ভালো, ফলে সোশ্যালওয়ার্ক করাতে তিনি আপত্তি করার কোনো কারণদেখেননি। বরং তাঁর মনে হয়েছে, ‘এই দেশে থাকি, তারজন্য যদি কিছু করা যায়, সেটাই তো ভালো।’যুক্তরাষ্ট্রে মোট বাংলাদেশির সংখ্যা কত তা বলাকঠিন। ২০১২ সালের জনগণনা অনুসারে তালিকাভুক্তএমন বাংলাদেশি—আমেরিকানের সংখ্যা মাত্র ১ লাখ ৪৭হাজার। কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা সম্ভবত তিন-সাড়ে তিনলাখ হবে। এ দেশে অধিক সংখ্যায় বাঙালি আসছেন গেল২০ বছর থেকে, কিন্তু মূলধারার রাজনীতিতে এখনো খুববেশি লোক নেই। এই নিউজার্সিতেই রয়েছেন ড.নুরুন্নবী, তিনি প্লেইন্সবরো কাউন্সিলের একজনসদস্য। আর মিশিগানে রয়েছেন একজন বাংলাদেশি—আমেরিকান কংগ্রেসম্যান, হ্যানসেন ক্লার্ক। ব্যস, এইপর্যন্ত। এখন সে তালিকায় সসম্মানে যুক্ত হলেন এইবাংলাদেশি তরুণী।জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি নিজেকে শুধু আমেরিকানভাবেন, না কিছুটা বাংলাদেশি?ঝটপট উত্তর এল, ‘আমি একই সঙ্গে বাংলাদেশি ওআমেরিকান। এখানে কোনো ভাগাভাগি নেই, এই দুইয়েরমধ্যে কোনো দ্বন্দ্বও নেই।’দুই বছর আগে তাহসিনা বাংলাদেশে গিয়েছিলেন। সিলেটেবাবার গ্রামের বাড়িতে লম্বা সময় কাটিয়েছেন। আগামীবছর আবারও যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এবারবেড়াতে নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কর্মসূচির অংশহিসেবে ইন্টার্নশিপ করবেন। ‘আমি খুবই আগ্রহের সঙ্গেঅপেক্ষায় আছি এই সুযোগের। বাঙালি হিসেবেবাংলাদেশের জন্য কিছু করতে পারলে আমি খুবই খুশিহব।’নতুন প্রজন্মের বাঙালি, সে দেশেই থাকুক কি বিদেশে,তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাতুতে গড়া।তাহসিনাকে দেখে আমার মধ্যে এই বিশ্বাসের নবায়ন হয়যে, আগামী দিনের বাংলাদেশ গতকালের চেয়ে শুধু ভিন্ননয়, উজ্জ্বলতর হবে, কারণ সে বাংলাদেশের নেতৃত্বেথাকবে তাহসিনার মতো আধুনিক ও কর্মঠ নাগরিক।সুত্রঃ প্রথমআলো