নিউইয়র্ক

বাংলাদেশীর ওপর হামলাকারীরা গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ নিউইয়র্ক প্রবাসীরা

‘আইএস আইএস’ শ্লোগানে ব্রঙ্কসে বাংলাদেশী মুজিবুর রহমানের ওপর ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক হামলার ৫ দিন পরও দুর্বৃত্তরা গ্রেফতার না হওয়ায় নিউইয়র্কে বাংলাদেশীসহ মুসলিম কম্যুনিটিতে ক্ষোভের সঞ্চার ঘটেছে। অকুস্থলের আশপাশের সার্ভিলেন্স ভিডিও পর্যালোচনার পরও দুর্বৃত্তরা কেন গ্রেফতার হচ্ছে না-এ প্রশ্ন শুধু প্রবাসী বাংলাদেশীদের নয়, এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণেরও। ১৯ জানুয়ারি মঙ্গলবার নিউইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কসে বাংলাদেশী অধ্যুষিত পার্কচেস্টার এলাকায় অনুষ্ঠিত এক সমাবেশ থেকে স্টেট সিনেটর, স্টেট এ্যাসেম্বলীম্যান, ব্রঙ্কস বরো প্রেসিডেন্টসহ কম্যুনিটির নেতৃবৃন্দ বক্তৃতাকালে নিউইয়র্ক সিটির ধর্মীয় সম্প্রীতির ঐতিহ্য অটুট রাখার স্বার্থে এহেন হামলা আর যাতে না হয় সে ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানান। উল্লেখ্য, যে এলাকায় মুজিবুর আক্রান্ত হয়েছেন সেখানে ২৫ হাজারের অধিক বাংলাদেশী বাস করেন। বাংলাদেশীদের পরিচালনাধীন একটি মসজিদসহ বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। একটি সড়কের পুণ:নামকরণ হয়েছে ‘বাংলা বাজার এভিনিউ’ হিসেবে।

ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক হামলার ঘটনায় সৃষ্ট ক্ষোভ প্রশমনে সিটি মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গের কম্যুনিটি এফেয়ার্স ইউনিটের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ড. সারাহ সাঈদ ২০ জানুয়ারি বুধবার সন্ধ্যায় বর্বরোচিত ঐ ঘটনার শিকার মুজিবুর রহমানের বাসায় যান এবং হেইট ক্রাইম টাস্ক ফোর্স সহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা দুর্বৃত্তদের শনাক্ত এবং গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। আক্রান্ত হবার পার্শ্ববর্তী একটি প্রতিষ্ঠানের সার্ভিলেন্স ক্যামেরা পরীক্ষার পর পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে যে, দুই তরুণ/যুবক মুজিবুরের ওপর হামলা চালানোর সময় মুখোশ পরিহিত ছিল। এ জন্যে ওদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে বিভিন্ন টেকনোলজির মাধ্যমে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। মুজিব এবং তার পরিবারের পাশে রয়েছেন সিটি মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গসহ বিবেকসম্পন্ন সকল মানুষ এবং কেউই এ ধরনের আচরণকে সমর্থন করে না বলে সারাহ সাঈদ উল্লেখ করেন।
এ সময় এনআরবি নিউজকে সারাহ সাঈদ বলেন, ‘সন্ত্রাসী তৎপরতা এবং মুসলিম কম্যুনিটি নিয়ে অনেকের বিভ্রান্তি রয়েছে। যারা সন্ত্রাস করছে তাদের মধ্যে মুসলমানও রয়েছে বলে বিবেক-বোধহীন অনেকে সকল মুসলমানকেই সন্ত্রাসী হিসেবে মনে করে। শুধু তাই নয়, অনেকের ভ্রান্তি রয়েছে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কেও। এহেন অবস্থার অবসানে আমরা কাজ করছি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে।’

সারাহ সাঈদের সাথে ছিলেন সিটি মেয়রের ব্রঙ্কস বরো কম্যুনিটি সম্পর্কিত পরিচালক এলভিন গার্সিয়া  এবং বিশিষ্ট আইনজীবী ও বাংলাদেশী-আমেরিকান কম্যুনিটি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ এন মজুমদার। এলাকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সৃষ্ট আতংকাবস্থা কাটিয়ে উঠার জন্যে এ মুহূর্তে কি করা উচিত সে ব্যাপারে মোহাম্মদ এন মজুমদারের অফিসে তারা এক পরামর্শ সভায় মিলিত হন। সে সময় উল্লেখ করা হয় যে, স্থানীয় পুলিশ বেশ ক’জনকে গ্রেফতার করেছে সন্দেহভাজন হিসেবে। পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছেন।

এর আগের দিন অর্থাৎ ১৯ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকালে হাড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে মুজিবুরকে হামলার স্থলে জড়ো হয়েছিলেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের ক্ষুব্ধ জনতা। অবিলম্বে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে এ সময় বক্তব্য রাখেন ব্রঙ্কস বরো প্রেসিডেন্ট রুবিন দিয়াজ জুনিয়র, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর রুবিন দিয়াজ সিনিয়র, স্টেট এ্যাসেম্বলীম্যান লুইস সেপুলভেদা, ব্রঙ্কস বরো ডেমক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট ও স্টেট এ্যাসেম্বলীম্যান মার্কোস ক্রেসপো, নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক এডভোকেট লেটিসিয়া জেমস এবং বিশিষ্ট আইনজীবী ও বাংলাদেশী-আমেরিকান কম্যুনিটি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ এন মজুমদার। এ সময় দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারে সহায়তাকারীকে নগদ আড়াই হাজার ডলার পুরস্কারের ঘোষণাও দেয়া হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

বক্তারা বলেন, ‘অভিবাসীরাই নিউইয়র্ক গড়ার কারিগর। তারা মুসলিম কিংবা যে ধর্মেরই হোক তাদের ওপর হামলা কোনভাবেই সহ্য করা হবে না।’ এছাড়া, বাংলাদেশীরা হচ্ছেন শান্তিপ্রিয় কম্যুনিটির অন্যতম উদাহরন। তাই তাদের ওপর এহেন হামলার ঘটনায় যারা জড়িত তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতেই হবে।

এদিকে, মুজিবুরের ওপর হামলার প্রতিবাদ এবং আন্ত:ধর্মীয় সম্প্রীতি সুসংহত করার মধ্য দিয়ে এহেন হামলার ঘটনা সংঘবদ্ধভাবে প্রতিহত করার সংকল্প গ্রহণের জন্যে আসছে রোববার ২৪ জানুয়ারি বিকেল ৫টায় ব্রঙ্কসে ওয়েস্টচেষ্টার এভিনিউতে অবস্থিত ‘আল ইমান ইসলামিক সেন্টারে’ এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার সন্তান মুজিবুর (৪৩) দু’বছর আগে ইমিগ্র্যান্ট হয়ে নিউইয়র্কে এসেছেন সপরিবারে। ব্রঙ্কসে পার্কচেস্টার জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবে চাকরি করছেন। সবসময়ই পাজামা-পাঞ্জাবি পরেন। আক্রান্ত হবার দিন অর্থাৎ ১৫ জানুয়ারিতেও একই পোশাকে তিনি তার ৯ বছর বয়েসী ভাগ্নি ইমাকে পাবলিক স্কুল-১১৯ থেকে আনতে গিয়েছিলেন। বিকেল সাড়ে ৫টায় স্কুলের গেইট অতিক্রম করে রাস্তায় নামার পরই ‘আইএস আইএস’ সমস্বরে উচ্চারণ করে পেছন থেকে তার মাথায় আঘাত করা হয়। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব মুজিবুর কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রচন্ড বেগে কিল-ঘুষি পড়ে। রাস্তায় পড়ে যান অজ্ঞান হয়ে। তারপর লাথি চালায় মুখোশধারী ঐ দুই দুর্বৃত্ত। এ অবস্থায় ভরকে যাওয়া ইমা তার মোবাইল দিয়ে প্রথমে পুলিশ এবং পরে তার বাবাকে ফোন করে। পুলিশে ফোন করার বিষয়টি আঁচ করেই দুর্বৃত্ত দুজন দ্রুত ঐ স্থান ত্যাগ করেছে বলে ইমা পুলিশকে জানায়। অন্যথায় ওরা হয়তো মুজিবুরকে মেরেই ফেলতো বলে ইমার ধারণা।

(নিউজটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন)