নিউইয়র্ক

নিউইয়র্কের রাস্তায় প্রবাসীদের জীবন বৃত্তান্তের কপি!

প্রবাসীদের ছবিসহ জীবন বৃত্তান্তের কপি কুইন্সের রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়েছেন অনেকে। সে রাস্তাটি অতিবাহিত হয়েছে নর্দার্ণ বুলেভার্ডে অবস্থিত বাংলাদেশ কন্স্যুলেটের নীচ দিয়ে। মেশিনে রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) এর জন্যে করা আবেদনের কপি অনেকে কুড়িয়ে নিয়েছেন। কেউ কেউ ঐ কপিতে দেয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে তা সংশ্লিষ্টদের প্রদান করেছেন। কুড়িয়ে পাওয়া শতাধিক কপি দেখানো হয় এ সংবাদদাতাকে। সেগুলো এমআরপি আবেদনের এবং এপ্রিল মাসের শেষার্ধেই সে সব আবেদনের এমআরপি বিতরণের সীল রয়েছে। অর্থাৎ এগুলো কন্স্যুলেটের সংরক্ষণ করার কথা। কিংবা অপ্রয়োজনীয় মনে হলে তা যথানিয়মে বিনষ্ট করার কথা। কারণ, এসব আবেদনে প্রবাসীদের নাম-ঠিকানা-জন্ম তারিখসহ ছবি রয়েছে। এগুলো ব্যবহার করে অনেক অপকর্মই সংগঠিত করতে পারবে দুর্বৃত্তরা। এসব আবেদনে সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বর না থাকলেও কারো কারো আবেদনে স্টেট আইডি অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্সের কপি রয়েছে। এসব তথ্য দিয়ে সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বরও সংগ্রহ করা যায়। ভূয়া গ্রীণকার্ড তৈরী কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্স অথবা ক্রেডিট কার্ড বানিয়ে সংশ্লিষ্টদের সর্বনাশ করার ঘটনাও এর আগে অনেকবার ঘটেছে।

ঘটনাটি ৩০ এপ্রিল শনিবারের। কন্স্যুলেট অফিস বন্ধ। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তায় যান চলাচলও কম। নিউইয়র্ক সিটিতে ইয়েলো ট্যাক্সি চালান মো. নাসির ঐ পথ অতিক্রম করছিলেন হেঁটে। নর্দার্ন বুলেভার্ডে টিএলসি (ট্যাক্সি এ্যান্ড লিমুজিন কমিশন)’র একটি অফিসে ৩ ঘন্টার একটি কোর্সে অংশ নেন নাসির। সেখান থেকেই হেঁটে এস্টোরিয়ায় যাচ্ছিলেন বৈশাখী রেস্টুরেন্টে। পথিমধ্যে শত শত বাংলাদেশীর ছবি সংবলিত ফাইল বাতাসে উড়তে এবং রাস্তায় ময়লা-আবর্জনার মধ্যে পড়ে থাকতে দেখে থমকে দাঁড়ান নাসির। এক পর্যায়ে একটি ফাইল হাতে নেন। পরখ করেন গভীরভাবে। চমকে উঠেন তিনি। এরপর যতটা সম্ভব কপি কুড়িয়ে নেন। এরপর বৈশাখী রেস্টুরেন্টে বসে ঐ ফাইলের নম্বর দেখে কল করেন। ব্রঙ্কস থেকে ছুটে আসেন ইকবাল ফারুক। সস্ত্রীক চলে আসেন গোলাম কিবরিয়া। বিস্ময়ে হতবাক হন তারা। এ সময় এ সংবাদদাতার কাছে তারা প্রশ্ন রাখেন, ‘এমআরপির জন্যে করা আবেদনের এসব নথি কন্স্যুলেটে থাকার কথা। এগুলো রাস্তায় পড়ে থাকে কী করে।’ কিবরিয়া বলেন, ‘গত ২৫ এপ্রিল ডেলিভারি নিয়েছি আমাদের পাসপোর্ট। ৫ দিন পরই সে আবেদনের সমস্ত নথি রাস্তায় ফেলে দেয়া হলো কেন?’ এস এম ইকবাল ফারুক বলেন, ‘২৪ এপ্রিল ডেলিভারি নিয়েছি আমার এমআরপি। ৬ দিন পরই সে আবেদন ফেলে দেয়া হলো রাস্তায়? এটি মেনে নেয়া যায় না। সরকারী অফিসের এমন গুরুত্বপূর্ণ নথি সংরক্ষণের কী কোন নিয়ম নেই? বিনষ্ট যদি করতেই হয়, তাহলে তা প্রকাশ্য রাস্তায় কেন?’

এরপর বেশ কয়েকজন টেলিফোন করে এ সংবাদদাতাকে বলেছেন, ‘আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য এভাবে রাস্তায় উড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ কন্স্যুলেট কী মেসেজ দিলো? এসব তথ্য ব্যবহার করে আমাদেরকে বিপদে ফেললে সে দায় কে নেবে? এজন্যে দায়ীদের শাস্তি চাই। নিশ্চয়তা চাই যে, এমন কান্ড আর কখনো ঘটবে না।’
প্রবাসীদের এসব জিজ্ঞাসার ব্যাপারে কন্সাল জেনারেল  শামীম আহসানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত দু:খজনক এবং অবশ্যই ভুলবশত: ঘটেছে। ইতিমধ্যেই আমি সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করে দিয়েছি। এমন ভুলের যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে।’

কন্সাল জেনারেল উল্লেখ করেন, ‘পাসপোর্ট অথবা ভিসার আবেদন পাবার পর তার বিপরীতে পাসপোর্টগুলো ডেলিভারি হবার পর নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত তা সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। এরপর তা ডিসপোজ করার নিয়ম। তবে এক্ষেতে যেটি ঘটেছে তা কোন নিয়মেই সিদ্ধ নয় বলে আমি সেটিকে মারাত্মক একটি ত্রুটি হিসেবে বিবেচনা করছি।’ কন্সাল জেনারেল আরো জানান, ‘আমাদের কোন কাজেই কারো সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বরের প্রয়োজন পড়ে না। তাই কোন আবেদনেই সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বর থাকার প্রশ্নই উঠে না। তবে আবারো স্বীকার করছি এবং দায়িত্ব নিচ্ছি যে, এমন ভুল আর যাতে না হয় সে ব্যাপারে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’ শামীম আহসান আরো বলেন, ‘বিষয়টি গোচরে আসার পরই আমরা রাস্তা থেকে বেশ কিছু নথি কুড়িয়ে সংরক্ষণ করেছি।’

প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, এর আগে কন্স্যুলেট অফিস ম্যানহাটান মিড টাউনে থাকাবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি নীচে ফেলে দেয়ার ঘটনায় জড়িতরা এখনও শনাক্ত হয়নি। আরো উল্লেখ্য, বছর তিনেক আগে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে বসা সে সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ সংবাদদাতার এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন, ‘নিজস্ব ভবনে কন্স্যুলেট স্থাপনের জন্যে সুন্দর একটি ভবন খোঁজা হচ্ছে।’ এখনও সে খোঁজাখুঁজি শেষ হয়নি। নিজস্ব ভবনে কন্স্যুলেট স্থাপনের সময় একটি কম্যুনিটি সেন্টারের স্বপ্নও প্রবাসীদের পূরণ হবে বলে সকলে আশা করছেন। শুধু তাই নয়, নানাভাবে এগিয়ে চলা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা পতপত করে ওড়বে ঐ ভবনের সামনে-এটিও কম গৌরবের কথা নয়। কিন্তু আমলাদের আপত্তির কারণে সরকার প্রধানের আগ্রহ এখন পর্যন্ত ঝুলেই রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে,সংবাদ এখন মিডিয়ায় শীর্ষ সংবাদ হিসেবে  ‘টক অব দ্য কম্যুনিটি’তে পরিণত হয়েছে।