ধর্ম

ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্ব মা দিবস কি

‘মা দিবস’ কি ? মা দিবস অর্থ: সারা দিন, দিনমান, অহোরাত্র। তাই মা দিবসের অর্থ দাঁড়ায়, মার জন্য একটি পুরো দিন। অর্থাৎ বছরের এক দিন মায়ের জন্য নিবেদন করবেন। তাঁর সেবায় কাটাবেন। তাঁকে খুশী রাখবেন। সেই দিনটিতে তাঁর পাশে থাকবেন। বিভিন্ন কার্য-কলাপের মধ্য দিয়ে সেই দিনটি পালন করবেন। কিছু লোকের পরিভাষায় একেই বলা হচ্ছে মা দিবস। মায়ের জন্য এমন একটি দিন আবিষ্কারের পিছনে কারণ কি? তা খোঁজ করলে, জানা যায়, পৃথিবীতে মায়ের সন্তানাদি নাকি এতই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে, তাদের হাতে মায়ের সেবা করার মত ও মায়ের পাশে থাকার মত কোন সময় নেই। অবশ্য অন্য কিছুর জন্য তাদের যথেষ্ট সময় থাকে ।তাই প্রয়োজন হয়েছে একটি দিবসের । কারণ বছরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে একটি দিনও যদি > মায়ের জন্য নির্দিষ্ট না করা যায় তো, লোকেরা কী বলবে ? > জগত কী ভাববে ? > মায়ের সম্মানের কী হবে ? > জননীর ঋণ শোধ হবে কী ভাবে ? এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ইসলাম আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখার আদেশ দেয়। তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করে এবং সম্পর্কচ্ছেদ থেকে সতর্ক করে। তবে সদ্ব্যবহারের শ্রেষ্ঠতা মায়ের জন্য নিবেদন করে, মাকেই বেশী হকদার মনে করে এবং পিতা-মাতা সহ সকল আত্মীয়ের সাথে ধারাবাহিক অবিচ্ছিন্ন সম্পর্কের আদেশ দেয়। তাই মায়ের সেবার জন্য কোন একদিন নির্দিষ্ট করা আর অন্য দিনে গুরুত্ব না দেয়া ইসলাম স্বীকার করে না। যেমন এটা মায়ের জন্য স্বীকার করে না। অনুরূপভাবে পিতা সহ অন্যান্য আত্মীয়দের সাথেও সমীচীন মনে করে না। আল্লাহ তাআলা বলেন ঃ “তোমার প্রতিপালক হুকুম জারি করেছেন যে, তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না, আর পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।” [সূরা ইসরা/২৩] তিনি আরও বলেন ঃ “মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করে। তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে, (নির্দেশ দিচ্ছি) যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই কাছে।” [সূরা লোকমান/১৪] মহান আল্লাহ আরও বলেন: “ক্ষমতা পেলে সম্ভবত: তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে আর আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদের বধির করেন আর তাদের দৃষ্টি শক্তিকে করেন অন্ধ।” [সূরা মুহাম্মদ/২২-২৩] একদা এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করেন ঃ “আমার ভাল ব্যবহারের সবচেয়ে বেশী হকদার কে? নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: তোমার মা। সে লোক বলল: তারপর? তিনি (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার বললেন: তোমার মা। সেই লোক বলল: অতঃপর? নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তোমার মা। অতঃপর তোমার পিতা।” [বুখারী, অধ্যায়,আ্দব,নং৫৯৭১] তিনি (সা(ল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন: “আত্মীয়তা-সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” [বুখারী, অধ্যায়, আদব,নং ৫৯৮৪] অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ তায়ালা আত্মীয়তা-সম্পর্ককে সম্বোধন করে বলেন ঃ “যে তোমাকে বহাল রাখে আমিও তার সাথে সম্পর্ক বহাল রাখব; আর যে তোমার হতে সম্পর্ক ছিন্ন করে, আমিও তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করব এতে কি তুমি খুশী নও? সে বলল, নিশ্চয়, হে আমার প্রভু। আল্লাহ বললেন, যাও, তোমার জন্য তাই করা হল।” [বুখারী, অধ্যায়,আদব,নং ৫৯৮৭] উপরে বর্ণিত কুরআনের তিনটি আয়াত ও তিনটি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এবং তাঁর রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পিতা-মাতা উভয়ের সম্মান করা এবং তাঁরা দু জন সহ সকল আত্মীয়দের সাথে আত্মীয়তা-সম্পর্ক বজায় রাখা সর্বাবস্থায় জরুরী করেছেন এবং তা ছিন্ন করাকে বড় গুনাহ, আল্লাহর ক্রোধ তথা জাহান্নামে প্রবেশের কারণ করেছেন। তাই বছরের ৩৬৪ দিনকে উপেক্ষা করে কেবল ১টি দিন মায়ের জন্য নির্ধারণ করা এবং পিতা সহ সকল আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক না রাখা বা অবহেলা করা এটা পাশ্চাত্যদের শোভা দেয় কোন মুসলিমকে নয়।