ধর্ম

পূর্ব এশিয়ার অনেকেই কেন ধর্মবিশ্বাস পরিবর্তন করছে

দক্ষিণ কোরিয়ার একটি খ্রিস্টান বাড়িতে বেড়ে উঠেছিল জুন। কিন্তু দেশটির অনেকের মতো তার ধর্মীয় বিশ্বাসও এখন ছোটবেলার চেয়ে অনেক আলাদা। সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব আছে কিনা সেটি নিয়ে তার মনে সন্দেহ আছে। আমি জানি না সেখানে কী আছে। সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে। তবে অতিপ্রাকৃত কিছু আছে, দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল থেকে ফোনে বলছিলেন জুন। জুনের বাবা-মা এখনও খ্রিস্টান ধর্ম পালন করেন। সেজন্য জুন বলেন,তার বাবা-মা যদি জানতে পারেন যে তিনি আর ধর্মে বিশ্বাসী নন, তাহলে তারা “ভীষণ কষ্ট” পাবেন। জুন তার বাবা-মাকে কষ্ট দিতে চান না। জুনের এই অনুভব যে কতটা বাস্তব, তার প্রমাণ মেলে যুক্তরাষ্ট্রের জনমত জরিপ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিচার্স সেন্টারের সাম্প্রতিক জরিপেও। জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ধর্ম ত্যাগ ও পরিবর্তন করা মানুষের হার সবচেয়ে বেশি। ১০ হাজারেরও বেশি লোককে তাদের বিশ্বাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয় এবং তাদের অনেকেই বলেন, তারা যে ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে বড় হলেও এখন তারা আলাদা ধর্মীয় পরিচয় ধারণ করে। হংকং ও দক্ষিণ কোরিয়া এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে। জরিপে প্রতিটি দেশের ৫৩ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন যে তারা তাদের ধর্মকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়াসসহ তাদের ধর্মীয় পরিচয় পরিবর্তন করেছেন। তাইওয়ানে ৪২ শতাংশ লোক তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস পরিবর্তন করেছিল এবং জাপানে এই হার ছিল ৩২ শতাংশ। এবারের জরিপ ফলাফলকে ২০১৭ সালে ইউরোপের ওপর করা জরিপের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় যে ঐসময় এমন কোনও দেশ খুঁজে পাওয়া যায়নি, যেখানে ধর্ম পরিবর্তনের হার ৪০ শতাংশ অতিক্রম করেছে। ''ঐতিহাসিকভাবে বলতে গেলে ,পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে কোন একটি ধর্মের লোক যে শুধু সে ধর্মেই বিশ্বাস করে বিষয়টি সেরকম নয়। আপনি যদি তাওবাদি হন, তবে এর অর্থ এই নয় যে আপনি একই সাথে বৌদ্ধ বা কনফুসিয়ান হতে পারবেন না"। ধর্মের বিষয়টি পাশ্চাত্যে যেভাবে পরিষ্কার চিহ্নিত করা যায়, পূর্ব এশিয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টি সেরকম পরিষ্কারভাবে চিহ্নিত করা যায়না। আজ আমরা ধর্মের যে ধারণাটি বুঝি, ১৯ শতকে পাশ্চাত্যের সাথে যোগাযোগ এবং মিথস্ক্রিয়া বৃদ্ধির পর তা পূর্ব এশিয়ায় বিস্তার লাভ করেছিল। এবং, একইসাথে একাধিক পরিচয় এবং ঐতিহ্যকে ধারণ করতে সক্ষম হওয়া বিষয়টি আসলে এই অঞ্চল থেকে কখনও হারিয়ে যায়নি, ডা. কু বলেন। তিনি নিজেও এই বিষয়টি সম্বন্ধে নিজের বাড়ি থেকেই প্রথম পরিচিত হয়েছিলেন। ডা. কু বলেন, তার মা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার ধর্মীয় অনুষঙ্গ পরিবর্তন করেছেন। এলএবাংলাটাইমস/এজেড