বাংলাদেশ

গুম খুনের জন্য আ’লীগ সরকার একদিন মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হবে : ফখরুল


গুম খুনের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার একদিন মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার বিকালে বনানীতে নিখোঁজ বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলীর পরিবারের সাথে সাক্ষাতের পর তিনি সাংবাদিকদের কাছে এই মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, এনফোর্স ডিজএপিয়ারেন্স- এটা সম্পূর্ণরূপে মানবতা বিরোধী একটা অপরাধ। জাতিসংঘের যে একটা চাটার্ড আছে সেই চাটার্ডে পরিস্কার করা হয়েছে -দিস ইজ এ ক্রাইম এগেনেস্ট হিউমেনেটি। আজকে এই সরকার অভিযুক্ত হবে এই ক্রাইম এগেনেস্ট হিউমিনেটির জন্যে।

তিনি বলেন, একদিন না একদিন এই মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্যে বিচার হবেই। আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্রহীনতা আছে, জনগনের প্রতিনিধি নেই। সত্যিকার অর্থে যেদিন জনগনের প্রতিনিধির সরকার গঠিত হবে সেইদিন এর বিচার অবশ্যই হবে।

নিখোঁজ ব্যক্তিরা তাদের পরিবারের কাছে ফিরে আসবে এরকম প্রত্যাশা ব্যক্ত করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে ইলিয়াস আলীর বাসায় এসছি তার ছোট মেয়ে আমাদের সামনে আসেনি। আসেনি এজন্য সে অত্যন্ত বিব্রতবোধ করে কষ্ট পায়। আমার মনে আছে, ৬ বছর আগে যখন এখানে আসি আপনারা সবাই দেখেছেন ফুঁটফুটে একটা বাচ্চা মেয়ে প্রতিদিন বাবার জন অপেক্ষা করত। আমরা তাদের পাশে আছি। আমরা আশা করবো, ভবিষ্যতে এর একটা সুষ্ঠু বিচার হবে।

২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল মধ্য রাতে মহাখালীর সাউথ পয়েন্ট স্কুলের সামনে থেকে সাদা পোষাকে সদস্যরা ইলিয়াস আলী ও তার গাড়ি চালককে তুলে নিয়ে যায়। বিকালে বিএনপি মহাসচিব ইলিয়াস আলীর বাসায় আসেন। তিনি তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদী ও তার বড় ছেলে আবরার ইলিয়াসের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের খোঁজ-খবর নেন।

ফখরুল বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মহোদয় পরামর্শ দিয়েছেন যে, গুম দিবসে আমাদের দলের যারা গুম হয়েছেন যথাসম্ভব তাদের বাসায় যাওয়ার চেষ্টা যেন করি। আমি ইলিয়াস আলীর বাসাসহ আমি চারটি বাসায় গিয়েছি। আমাদের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ঢাকা শহরে যারা আছেন তাদের বাসায় গিয়েছেন।

গুম হওয়া পরিবারের অসহায় অবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি দক্ষিনখানে গিয়েছিলাম ছাত্র নেতা তারিকুল ইসলাম ঝুন্টুর বাসায়। তার মা বলছিলেন, আমরা এই ছেলেটা ছিলো সবচেয়ে ভালো ছেলে, অনার্সে ফাস্ট ক্লাস পেয়েছিলো। মা বলছিলেন যে, তাকে সালাম না করে কোনোদিন ঘুমোতে যেতো না। সেই ছেলে গুম হয়ে গেছে। কিছুদিন পরে ছেলের বাবা অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। তাদের তৃতীয় সন্তান দূর্ঘটনায় পা ভেঙে গেছে-এই পরিবারটি অত্যন্ত অসহায় অবস্থায় আছে।

নিজামুদ্দিন মুন্নার বাসায় গিয়েছিলাম। অনেক কষ্ট করে এই ছেলেটি বিএ পাস করেছিলো। তার বাবা এমন কোনো জায়গা নাই যাননি, ভারতেও গেছেন, বহু জায়গায় গিয়ে ছেলেকে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত অসুখ হয়ে বাবা মারা গেছেন। এখন অনেক পরিবার আছে যারা অবর্ননীয় কষ্টের মধ্যে আছেন। আমরা যথা সম্ভব চেষ্টা করছি তাদের পাশে দাঁড়ানোর। আজকে গুম দিবসে আমি এই মানবতা বিরোধী অপরাধের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

ইলিয়াস আলী, নিজামুদ্দিন মুন্না ও তারিকুল ইসলাম ঝন্টুর বাসা ছাড়াও নাখালপাড়ায় সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায়ও যান মহাসচিব। এ সময়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, শহিদুল ইসলাম বাবুল, ব্যারিস্টার ফারজানা শারমিন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

বিকালে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বংশালে মো. সোহেল, জহিরুল ইসলাম জহির, পারভেজ হোসেন, মো. চঞ্চল, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সূত্রাপুরের খালিদ হোসেন সোহেল, সেলিম রেজা পিন্টু, সম্রাট মোল্লা এবং সেলিমা রহমান সবুজবাগে মাহবুব হাসান সুজন ও কাজী ফরহাদ হোসেনের বাসায় গিয়ে তাদের পরিবারের খোঁজ খবর নেন।

গুম হওয়া পরিবারদের জন্য নেতৃবৃন্দ তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ফলের ঝুড়ি নিয়ে যান।