বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রীর অনুদান পেতে 'যাতায়াত খরচ'ই লাখ টাকা!


মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের ক্লিভডন বাগানের চা-শ্রমিকদের কাছ থেকে কাগজপত্র ঠিক করার কথা বলে লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাগানের শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতিসহ কয়েকজন মিলে শ্রমিকদের কাছ এ টাকা উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী শ্রমিকরা এর প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগও করেছেন।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সরকার প্রতিবছর চা শ্রমিকদের মাঝে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ক্লিভডন চা বাগানের ৫৬৫ জন চা শ্রমিক অনুদান পাবে। আর এসব উপকারভোগীদের তালিকা করা শুরু করেন বাগানের শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মোহন লাল গোয়ালা, কোষাধ্যক্ষ রামবচন গোয়ালা, বিকাশ মুদি, সুসেন উরাং এবং মুকুল চন্দ্র বুনার্জী। তারা তালিকা করতে গিয়ে বাগানের ৩৮০ জন শ্রমিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন কাগজপত্র ঠিক করার কথা বলে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত উত্তোলন করেছেন। এভাবেই প্রতিবছর বাগানের শ্রমিকদের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এ অনুদান পেতে কোন টাকা-পয়সা লাগে না এমন খবরটি জানাজানি হলে বাগানের শ্রমিকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়।

শ্রমিকরা জানান, এভাবে প্রতিবছর অনুদান আসলেই বিভিন্ন কাগজপত্র ঠিকঠাক ও সরকারি খরচের কথা বলে সাধারণ শ্রমিকদের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। এদিকে একই ইউনিয়নের দিলদারপুর, বিজয়া ও মেরিনা চা-বাগানের শ্রমিকদের কাছ থেকেও কাগজপত্র ঠিকঠাক করার কথা বলে টাকা উত্তোলনের খবর পাওয়া গেছে। নিরীহ শ্রমিকরা জানান, প্রতিবারই যে কোন অনুদান আসলেই বাগানের সভাপতি লোক পাঠিয়ে কাগজপত্র ঠিকঠাক ও সরকারি খরচের কথা বলে টাকা আদায় করেন। অথচ আমরা নিজের খরচে ছবি ও আইডি কার্ডের ফটোকপি করে দেই। এরপরও টাকা না দিলে তালিকা থেকে নাম কেটে দেওয়ার হুমকি দেয় তারা। এ ছাড়াও তাদের (সভাপতি-সম্পাদক) পছন্দের লোকজনের নাম বার বার তালিকায় আসে। যার ফলে প্রকৃত অসহায় শ্রমিকরা অনুদান থেকে বঞ্চিত হয়।

ক্লিভডন চা-বাগানের শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মোহন লাল গোয়ালা বলেন, ছবি প্রিন্ট, ফটোকপি করা এবং মাস্টার রুল রেডি করার জন্য শ্রমিকদের কাছ থেকে সামান্য টাকা নিয়েছি। এটাতো আমরা খাইনি, তাদের কাগজপত্র ঠিকঠাক করা এবং কুলাউড়ায় যাতায়াত করতে খরচ করছি। স্থানীয় ইউপি সদস্য শংকর উরাং জানান, বিভিন্ন শ্রমিকদের কাছ থেকে জানতে পারলাম যে, অনুদান পেতে বিভিন্ন কাগজপত্র ঠিক করা এবং সরকারি খরচের জন্য টাকা নেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সমাজসেবা অফিস থেকে জানতে পারলাম পঞ্চায়েতের লোকজন এসব তালিকা করার কথা নয়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান/সদস্য এবং বাগান ব্যবস্থাপকের সমন্বয়ে তালিকাটি করা হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সমাজসেবা কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে এই অনুদান সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এখানে কোনো প্রকার টাকা-পয়সার প্রয়োজন হয় না। অফিসিয়াল কোনো খরচও এতে নেই। তাই এটা নিয়ে কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এলএ বাংলা টাইমস/এম/বিএইচ