ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বাংলা ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’র মোটিফ নির্মাণকারী শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বত্তরা। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া বাজার এলাকায় এই শিল্পীর বাড়িতে আজ বুধবার ভোররাত আড়াইটার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষ এবারের বর্ষবরণের শোভাযাত্রায় বাঘের মোটিফ নির্মাণ করেছিলেন। তবে সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয় যে, এবারের বাংলা নববর্ষের আযোজনে ‘ফ্যাসিবাদের প্রতিকৃতি’র যে মোটিফ ছিলো সেটি তিনি তৈরি করেছেন।
আগুনে বাড়ির আধপাকা কাচারিঘর এবং ঘরে থাকা অন্তত ৩০টি ভাস্কর্য এবং অন্যান্য জিনিস পুড়ে গেছে।
শোভাযাত্রার জন্য বাঘের মোটিফ বানানোর কথা জানিয়ে শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, পয়লা বৈশাখের আগের দিন রাজ্যসভা নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে আমার সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়। বলা হয় আমি নাকি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি তৈরি করেছি।
একবার পুড়িয়ে দেওয়ার পর আনন্দ শোভাযাত্রায় ঠাঁই পাওয়া ওই মুখাকৃতির সঙ্গে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখাবয়বের মিল রয়েছে বলে অনেকের ভাষ্য।
শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষ জানান, ফেসবুক পেইজে তার সম্পর্কে ওই প্রচারণা দেখে তিনি তা পুলিশকে অবহিত করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, নিরাপত্তার ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হয়। মধ্যরাতে আমার বাড়ির কাচারি ঘরে আগুন লাগে। খবর পেয়ে দ্রুত আমার বাড়িতে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ততক্ষণে শিক্ষাজীবন থেকে এ পর্যন্ত আমার হাতে তৈরি সব ভাস্কর্যসহ ঘরের আসবাবপত্র পুড়ে যায়।
মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে’ বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর।
বুধবার এক বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়, দ্রুততম সময়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিবৃতিতে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার ইয়াছমিন খাতুনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, 'ইতোমধ্যেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। তদন্তকাজ চলমান রয়েছে, কারো জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে দ্রুততম সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
এইদিকে ঘটনাটি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়ীতে যারা হামলা করেছে তাদের প্রত্যেককে ধরার জন্য পুলিশ কাজ শুরু করেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছে। তিনি পুলিশের আইজিকে পরিষ্কার নির্দেশনা দিয়েছেন।
ফেসবুক পোস্টে উপদেষ্টা আরও বলেন, গত কয়েকদিন জুলাইয়ে বিতাড়িত আওয়ামী লীগ অনলাইনে শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষকে আক্রমণের উস্কানি দিচ্ছিল তাদের ভাষ্যে "হাসিনার এফিজি বানানোর অপরাধে'! এদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।
মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িটির অবস্থান পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বাড়ির কাছাকাছি।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস