লন্ডনের সময় রোববার সন্ধ্যা ৬:৪৫। ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামের উজ্জ্বল আকাশের নিচে, অধিনায়ক ব্রুনো গিমারায়েসের হাতে স্বপ্নের ট্রফিটা। আবেগ ধরে না রাখতে পেরে তিনি সেটা মাথার ওপর তুললেন, তখন সময় যেন থমকে গেল নিউক্যাসল ইউনাইটেডের জন্য। সাত দশকের ব্যর্থতা, হাহাকার, লিগ থেকে ছিটকে পড়ার হতাশা, সব অতীত হয়ে গেল এক নিমেষে।
যে ক্লাবের, পরিচয় ছিল দুঃখ আর ব্যর্থতায়, ক্লাব শিরোপা জিততে না পারার জন্য যে কটু কথা শুনতে হতো সমর্থকদের, সেটা যেন এক মুহূর্তের মধ্যেই বদলে গেল। গ্যালারিতে উপস্থিত দর্শকরাও যেন কিছু অনুভব করতে পারছিল না, কেউ কাউকে জড়িয়ে কান্না করছিল, কেউ চোখ মুছছিল আর তালি দিচ্ছিল, তারা হয়তো মুহূর্তটা নিজেরাও বিশ্বাস পারছিল না। তাদের কাছে এই অনুভূতিটা ছিল হয়তো কিছুটা অন্যরকম!
এক ম্যাচেই উইম্বলির সবুজ গালিচায় দাঁড়িয়ে, কালো-সাদা জার্সির দলটা যেন নিজেদের পরিচয়ই বদলে ফেলল। মৌসুমের শুরু থেকেই অপ্রতিরোধ্য লিভারপুল। ইপিএলের টাইটেল রেসেও সবার থেকে এগিয়ে আছে তারা। সেই শক্তিশালী লিভারপুলকেই নিউক্যাসল পেয়েছে এফএ কাপের ফাইনালে। আর ম্যাচে অসম্ভব লড়াইয়ে তারা শুধু টিকে থাকেনি, বরং প্রতিপক্ষকে নুইয়ে ফেলেছে। দাপট দেখিয়েই জয় তুলে নিয়েছে ২-১ গোলের ব্যবধানে। পুরো ম্যাচে ৬৫ শতাংশের বেশি সময় বল দখলে রেখেও গোলের জন্য নিতে পারে কেবল সাতটি শট, এর দুইটি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে নিউক্যাসলের ১৭ শটের ছয়টি ছিল লক্ষ্যে।
এর আগে ১৯৫৫ সালে এফএ কাপ জেতার পর ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ফুটবলে এটাই নিউক্যাসলের প্রথম শিরোপা। পরে জেতে ১৯৬৯ সালে ফেয়ার্স কাপ। তারপর কেটে গেছে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ সাফল্যের স্বাদ কেমন? নিউক্যাসল ভক্তদের কাছে এই প্রশ্নটা ছিল স্বপ্নের মতো। উত্তরটা এতদিন অধরা ছিল। কিন্তু এখন? এখন উত্তরটা ডিফেন্ডার ড্যান বার্নের উল্লাসে, অ্যালান শিয়েরারের ছেলের সঙ্গে নাচে, এডি হাওয়ের মুষ্টিবদ্ধ উদযাপনে, আলেকজান্ডার ইসাকের জালে বল পাঠানোতে। এটা যেন এক আবেগের বিস্ফোরণ!
শুধু যে মুহূর্তগুলো মাঠেই ছিলো তা কিন্তু নয়, গ্যালারির ভেতরও ছিল আবেগের ঢেউ। এক নারী বাবার ছবিকে স্পর্শ করছেন সৌভাগ্যের আশায়, এক ব্যক্তি হাতজোড় করে আছেন সারাক্ষণ, কেউ বার্তা পাঠাচ্ছেন বন্ধুদের: "আমার হৃদস্পন্দন এত বেড়ে গেছে!" আরেক জন বলছেন, "আমার চারপাশে সবাই কাঁদছে-আমি প্রায় অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছি।' আর ম্যাচের পর? নিউক্যাসল ইউনাইটেড গ্রেট অ্যালান শিয়েরার বলেছেন, 'আমি জীবনে এত কান্না করিনি, যতটা আজ করেছি।'
এইদিকে দুই বছর আগে এফএ কাপের ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে হেরে গিয়েছিল নিউক্যাসল। সেদিন তারা শুধু ম্যাচ জিততে পারেনি, বরং আবেগের ভারেই যেন ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এইবার? এবারের নিউক্যাসল ছিল অন্যরকম-শক্ত, সাহসী, নিয়ন্ত্রিত। লিভারপুলের মতো দলও পারেনি তাদের থামাতে। কালো-সাদা মিডফিল্ডার জোয়েলিনটন বললেন, 'আমি আমার কোচের জন্যই খেলি। হাওয়ে আমার জীবন বদলে দিয়েছেন।'
অধিনায়ক গিমারায়েস ম্যাচ শেষে নিজের আবেগ প্রকাশ করে বলেন, 'এই সবকিছুই সমর্থকদের জন্য। তাদের সবকিছু প্রাপ্য। এখানে প্রথম এসেই আমি বলেছিলাম, ইতিহাসে নিজের নাম লেখাতে চাই। এখন আমরা বলতে পারি, আমরা আবারও চ্যাম্পিয়ন।' কথাগুলো বলতে বলতেই যেন শব্দ হারিয়ে ফেলছিলেন তিনি।
নিউক্যাসলের হয়ে এই শিরোপা জেতা গিমারায়েসের কাছে বিশ্বকাপ শিরোপা জেতার মতো। তিনি বলেন, 'ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আমার জীবনের সেরা দিন। আর তাদের (সমর্থকদের) কাছে এটা তো বিশ্বকাপের মতো। মানুষ (যারা ছোট ছিল) বড় হয়ে গেছে, কিন্তু আমাদের চ্যাম্পিয়ন রূপে দেখেনি। এই ক্লাবে অধিনায়ক হিসেবে আমার প্রথম বছর এবং এটা আমার সেরা দিনগুলোর একটি। অবিশ্বাস্য। আমরা ইতিহাস গড়ছি।যখন আমি এখান থেকে চলে যাব, আমি চাই সমর্থকরা আমার নাম ধরে গান গাইবে যেমনটা তারা করে শিয়েরারের জন্য।'
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস