সিলেট

সিলেটে বিএনপির ৬ কাউন্সিলরের মনোনয়নপত্র জমা

বিএনপির সিদ্ধান্ত ছিলো- এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না দলীয় নেতাকর্মী। সিলেট করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষেও দফায় দফায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের এ বিষয়ে সতর্ক ও নিষেধ করে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ কয়েকজন নেতাকর্মী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও অন্ততঃ নেতাকর্মী দলের অবাধ্য হয়ে কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন বর্তমান ৬ কাউন্সিলর বিএনপি নেতা। তবে সিলেট বিএনপি বলছে- এখনও প্রত্যাহারের সময় রয়েছে। অনেকে হয়তো দলের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন। আর যারা নির্বাচন করবেন তাদের ব্যাপারে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে দল। জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম এবং ২১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রকিব তুহিন ফরম জমা দেন। এর আগের দিন (সোমবার) মনোনয়নপত্র জমা দেন মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌফিকুল হাদী, ১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মুনিম, ১৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল। এছাড়া সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর, সদ্য বিদায়ী সিলেট মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রোকসানা বেগম শাহনাজ এবার ২৫ নং ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বর্তমান ৬ কাউন্সিলর ছাড়াও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাধারণ ৪২টি ও সংরক্ষিত ১৪টি ওয়ার্ডে বিএনপির অন্তত ৩০ জন নেতাকর্মী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বর্তমান মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরীর পর একে একে বিএনপি নেতারা নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দেন। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত বিএনপির ১৪ নেতা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ১ জুন প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময়ের আগে আরও অনেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে পারেন বলে সিলেট বিএনপির শীর্ষ নেতাদের প্রত্যাশা। সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে দলের সম্ভাব্য ৩২ নেতা-কর্মীকে চিঠি দেয় মহানগর বিএনপি। এর আগে ঢাকায় ডেকে নিয়ে মহানগর নেতৃবৃন্দকে ভার্চুয়াল মিটিংয়ের মাধ্যমে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ বিষয়ে সতর্ক ও নিষেধ করেন। প্রার্থী হলে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের কথাও জানানো হয় তাঁদের। এরপর গত শনিবার মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলে সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীদের আরও বেশি চাপ তৈরি হয়। আরিফুল হক নিজেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করছেন। এ ছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইনের সম্মিলিত তৎপরতায় কাউন্সিলর প্রার্থীরা গত কয়েকদিন মতবিনিময় সভা বা সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ১৪ জন নেতকার্মী। তবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় বিএনপির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করে বেশিরভাগ নেতাকর্মীদের সম্ভাব্য প্রার্থিতা ঠেকাতে পারেননি। বিএনপিপন্থী অন্ততঃ ৩০ জন নেতা-কর্মী এখনও সিলেটে ভোটের মাঠে রয়েছেন। মনোনয়ন পত্র জমা দেয়া প্রসঙ্গে ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম বলেন, এলাকার মানুষ তো আমাকে ছাড়ছে না। আমি এখানকার দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর। আর কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয় না। তাই কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে দলের আপত্তি থাকা ঠিক নয়। মনোনয়ন জমা দেওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌফিকুল হাদী বলেন, দলের পাশাপাশি আমাকে এলাকার মানুষের মতামতকেও গুরুত্ব দিতে হয়। এলাকাবাসীর চাপেই আমি প্রার্থী হয়েছি। এসব বিষয়ে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না জেনেও পাতানো ফাঁদে পা দিচ্ছেন অনেকে। আমরা আশা করবো- শেষ পর্যন্ত তারা বিষয়টি বুঝতে পারবেন এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে এই পাতানো নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা। উল্লেখ্য, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন ছিলো মঙ্গলবার (২৩ মে)। উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ দিন প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। নির্ধারিত সময় পর্যন্ত মেয়র পদে ১১ ও কাউন্সিলর পদে ৩৭৬ জন দাখিল করেছেন মনোয়ন ফরম। এর আগে গত ২৭ এপ্রিল থেকে সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ শুরু করেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ২৭ দিনে মেয়র পদে মোট ১১ ও কাউন্সিলর পদে ৪৫৬ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। তবে ৮০ জন ফরম দাখিল করেননি। সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের মিডিয়া সেল (সিটি নির্বাচন) কর্মকর্তা সৈয়দ কামাল হোসেন জানান, মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন ১১ জন। এর মধ্যে দলীয় প্রতীকের প্রার্থী ৪ জন। তারা হলেন- মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (নৌকা), নজরুল ইসলাম বাবুল (লাঙ্গল), হাফিজ মাওলানা মাহমুদুুল হাসান (হাতপাখা) ও মো. জহিরুল আলম (জাকের পার্টি)। এর মধ্যে নৌকার প্রার্থী মঙ্গলবার মনোনয়ন দাখিল করেন। আর জাপা মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল দাখিল করেন সোমবার। মনোনয়ন দাখিল করা স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীরা হলেন- মোহাম্মদ আবদুল হানিফ কুটু, মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান খান, সামছুন নুর তালুকদার, মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন, মাওলানা জাহিদ উদ্দিন চৌধুরী, মো. শাহজাহান মিয়া ও মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা। আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন ইভিএমে হবে। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৫ মে, প্রত্যাহারের শেষ সময় ১ জুন। সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০২ সালে। ৭৯ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই নগরে ওয়ার্ড আছে ৪২টি। মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৩ হাজার ৭৬৩ জন এবং নারী ২ লাখ ৩২ হাজার ৮৪২ জন। মোট কেন্দ্র ১৯০টি এবং ভোটকক্ষ ১ হাজার ৩৬৪টি। আগামী ২১ জুন পঞ্চমবারের মতো সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।



এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস