ফুল ভাসিয়ে পাহাড়ে শুরু হল বৈসাবি উৎসব
বছর ঘুরে আবারও
এসেছে পাহাড়ের প্রাণের উৎসব বৈসাবি। পার্বত্যচট্টগ্রামের চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়েরঅন্যতম প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবি’কে ঘিরেখাগড়াছড়ি জেলার পাহাড়ি পল্লীগুলোতে এখন উৎসবেরআমেজ। পুরনো দুঃখ, গ্লানি ভুলে নতুন বছরকেস্বাগত জানাতে খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলায়মহাসমারোহে বৈসাবি ও বাংলা নববর্ষ উদযাপন করেএখানকার পাহাড়ি বাঙালিরা। প্রতিবছরের মতোএবারও সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগে আয়োজনকরা হয়েছে বর্ণিল সব অনুষ্ঠানমালার। আরজলদেবতার উদ্দেশ্যে স্থানীয় ছড়া ও নদীতে ফুলভাসানোর মধ্য দিয়েই গতকাল থেকে খাগড়াছড়িতে শুরুহয়েছে বৈসাবির মূল আনুষ্ঠানিকতা।উৎসব একই হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ভিন্নভিন্ন সম্প্রদায়গুলো ভিন্ন নামে অভিহিত করেছে এইউৎসবকে। চাকমা সম্প্রদায়ের কাছে অন্যতম সামাজিকএই উৎসবের নাম “বিঝু”, মারমাদের কাছে এটি সাংগ্রাইআর ত্রিপুরা সম্প্রদায় একে বৈসু নামেই পালন করে।বৈসু, সাংগ্রাই আর বিঝু এই তিনটি নামের আদ্যক্ষরনিয়েই স্থানীয়দের কাছে এটি “বৈসাবি”। বাংলা সনেরচৈত্র মাসের শেষ দুই দিন এবং পহেলা বৈশাখেউদযাপন করা হয় বৈসাবি উৎসব। গতকাল ভোরেসূর্যোদয়ের সাথে সাথে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেখাগড়াছড়ি জেলার স্থানীয় ছড়া, খাল কিংবা নদীতেজলদেবতার উদ্দেশ্যে ফুল ভাসিয়ে বিঝু উৎসবের মূলআনুষ্ঠানিকতা শুরু করেছে পাহাড়ি তরুণ-তরুণীরা।চাকমারা এই দিনটিকে বলেন “ফুল বিঝু”।ত্রিপুরারা হিন্দু ধর্মের অনুসারী হলেও উৎসব পার্বণেরয়েছে ভিন্নতা। গরিয়া দেবতার পূজার মাধ্যমে শুরু হয়ত্রিপুরাদের বৈসু উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। পাড়ায়পাড়ায় গরিয়াদের আগমনে ত্রিপুরা পল্লীগুলোতে চলেবৈসুর আমেজ। পিনন-খাদি ও ধুতি পড়ে ঢোল আরবাঁশি বাজিয়ে নানা মুদ্রায় নৃত্য করে গরিয়া দেবতারপ্রার্থনা করা হয়। ত্রিপুরাদের বিশ্বাস গরিয়াদেবতার পূজা করলে গ্রামে শান্তি-সম্প্রীতি এবং আয়উন্নতি বৃদ্ধি পাবে এবং জুমের ফলন ভালো হবে।গরিয়া দেবতা তাদের মানস পূর্ণ করবে এই বিশ্বাসেজেলার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ত্রিপুরা নর-নারীরাদেখতে আসে গরাইয়া নৃত্য। এবছরও খাগড়াছড়িতেগরাইয়া নৃত্য প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে ১৩ ও ১৪এপ্রিল। এছাড়াও এই উৎসবে বাড়ির আঙ্গিনায় ফুললাগিয়ে এবং সাজসজ্জা করে ত্রিপুরারা। তৈরি করা হয়নানারকম সবজির পাঁচন, পিঠাপুলি, মিষ্টান্ন এবংপানীয়।চাকমা ও ত্রিপুরাদের মতো মারমা সম্প্রদায়েরওরয়েছে নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। বাংলানববর্ষের একদিন পরে মঘাব্দ শুরু হওয়ায় ১৫-ই এপ্রিলথেকে শুরু হয় মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসব।ঐতিহ্যবাহী কাপড় এবং বর্ণিল সাজগোজে তরুণীরা-তরুণদের সাথে জলকেলি উৎসবে মেতে উঠে। একেঅন্যকে পানি ছিটিয়ে এবং নেচে গেয়ে পুরনো বছরকেবিদায় এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানায় তারা।বৈসাবি-বৈশাখী মেলা উদযাপন কমিটির সমন্বয়কআব্দুর রহমান তরফদার জানান, বৈসাবি এবং বাংলানববর্ষ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, ঐতিহ্যবাহীখেলাধুলা, সপ্তাহব্যাপী মেলা এবং এপার-ওপারবাংলার সংগীত শিল্পীদের নিয়ে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিকঅনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে খাগড়াছড়ি পার্বত্যজেলা পরিষদ।সকল সম্প্রদায়ের মানুষ যেন নিরাপদে এই উৎসবউদযাপন করতে পারে সেই লক্ষ্যে জেলার নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশসুপার শেখ মো. মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার,খাগড়াছড়ি।বৈসাবি’র মহিমায় উদ্ভাসিত হোক পাহাড়েরমানুষগুলোর জীবন। পুরনো বছরের দুঃখ, গ্লানি,হতাশা ভুলে নববর্ষ সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিলসুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি এমনটাই প্রত্যাশা পার্বত্যচট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি বাঙালি সকলসম্প্রদায়ের।
শেয়ার করুন