বিশ্বের 'মোড়লগিরি' হারাতে বসেছে যুক্তরাষ্ট্র
ছবি: এলএবাংলাটাইমস
বিশেষ করে 'ওয়ার্ল্ড পুলিশ' এবং 'মোরাল চ্যাম্পিয়ন'- যুক্তরাষ্ট্রের এই দুইটি তকমা ইতোমধ্যে খসে পড়েছে।
বিশ্বের সুপারপাওয়ার দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম। সামরিক শক্তি ও বৃহৎ অর্থনীতির কল্যাণে গোটা বিশ্বই কম-বেশি সমীহ করে চলে দেশটিকে। প্রতিপক্ষ দেশগুলো মানুক কিংনা না-ই মানুক, গত সাত দশক ধরে বিশ্বে অদৃশ্য 'মোড়লগিরি' ফলিয়েছে দেশটি।
যদিও এই মোড়লগিরি কোনো পদবি নয় বরং অদৃশ্য শক্তি। সেই হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র তার মোড়ল ভাবমূর্তি হারাতে বসেছে বিশ্বে। বিশেষ করে 'ওয়ার্ল্ড পুলিশ' এবং 'মোরাল চ্যাম্পিয়ন'- যুক্তরাষ্ট্রের এই দুইটি তকমা ইতোমধ্যে খসে পড়েছে। আর এর জন্য বিশ্বের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দায়ি করছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরের শাসনামলকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতির কারণে বিশ্বে আমেরিকার গ্রহণযোগ্যতা কমে গেছে৷ বিশ্বের অন্যান্য দেশ এখন আমেরিকার উপর ভরসা রাখতে পারে না। বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে দূর্বল দেশগুলো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না আমেরিকা সত্যিই তাদের কল্যাণে কাজ করতে চায় কী না!
বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে জলবায়ু ও পরিবেশসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বিশ্বের সামনে দেশটির ইমেজ আরো ক্ষুণ্ণ করেছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ফলে একে একে বড় বড় বৈশ্বিক সংগঠন থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বে একতা বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্র যে ভূমিকা রেখেছিলো- ট্রাম্পের শাসিত চার বছরে এটিও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এছাড়াও বানিজ্যিকভাবে অনেক দেশ চীনের সাথে নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলায় রপ্তানী খাতও হুমকির মুখে রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের চীন বিদ্বেষী বিবৃতির কারণে চীনের বন্ধুপ্রতীম দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরো দূরে সরে যাচ্ছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে চলমান কোল্ড ওয়ার জিতে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে নতুনভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিলো। প্রায় ৩০ বছর সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তারের পর একচ্ছত্রবাদ অল্প কমে যায় দেশটির। বিশ্বের অন্যান্য দেশ দ্রুততার সাথে বিশ্বে জায়গা করে নেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র খানিকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও সেটি সামলে নিয়েছিলো। কিন্তু ট্রাম্পের গত চার বছরের শাসনামনে সেটি অনেকটাই ফিঁকে হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এছাড়াও চলমান করোনা মহামারি সামলাতে ব্যর্থ হওয়ায় বিশ্বের সামনে অনেকটাই খেলো হয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের মোড়লগিরি। করোনা সামলাতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা। এছাড়া করোনার ধাক্কা সামলে বিশ্বের সামনে তেমন কোনো পরিকল্পনাই প্রকাশ করতে পারেনি দেশটি।
করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠার সাথেসাথে এই খাতের কর্তৃত্বও হারিয়েছে দেশটি। জার্মানি বিশ্বের সামনে নতুন করে 'গ্লোবাল হেলথ লিডার' হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এছাড়াও করোনার টিকা আবিষ্কারের ক্ষেত্রে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন টেক্কা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে রাশিয়ার টিকা নিতে সম্মতি জানিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের একগুঁয়েমি ও উদ্ধত আচরণের কারণে ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে 'আমেরিকান ইমেজ'৷ আসন্ন নির্বাচনে ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় আসলে কর্তৃত্ববাদীতা আরো কমে যাবে আমেরিকার।
এলএবাংলাটাইমস /ওএম
শেয়ার করুন