আপডেট :

        পাঁচ জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে

        নিউ ইয়র্কে বন্দুকধারীর গুলিতে ২ বাংলাদেশির মৃত্যু

        কিছু জেলার স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা আগামীকাল বন্ধ

        লাউয়াছড়ায় শতাধিক গাছ বিধ্বস্ত

        শহীদ লেফটেন্যান্ট শেখ জামালের ৭১তম জন্মদিন উপলক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন

        কোনো জেলা তাপমাত্রা যদি ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠে, সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে

        কোনো জেলা তাপমাত্রা যদি ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠে, সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে

        পদ্মা সেতুতে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা টোল আদায়ের মাইলফলক অর্জন

        প্রচণ্ড গরমে মৃত্যু হলো স্কুল শিক্ষকের

        মে মাস থেকে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স ও এয়ার চায়না বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করবে

        দিল্লি প্রধান লাভলির পদত্যাগ

        দিল্লি প্রধান লাভলির পদত্যাগ

        বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর মন্তব্য

        আজ বিকেল ৪টায় শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ

        ব্যাংক খাতে ডলারের সরবরাহ বাড়ায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে মার্চে এলসি খোলা এবং নিষ্পত্তি উভয়ই বেড়েছে

        বিশ্ব চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার অস্কার

        চট্টগ্রামে গণপরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘট চলছে

        সমকামী সম্পর্ককে অপরাধ ঘোষণা করে আইন পাস করেছে ইরাকের পার্লামেন্ট

        আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে চীন প্রভাব বিস্তার ও হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে

        ৫ দিনের মধ্যে কমতে পারে দিনের তাপমাত্রা

অর্থনৈতিক করিডোরের অনুন্নয়ন: ত্রিশ বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার বঞ্চিত হবে বাংলাদেশ

অর্থনৈতিক করিডোরের অনুন্নয়ন: ত্রিশ বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার বঞ্চিত হবে বাংলাদেশ

অর্থনৈতিক কাঠামোগত রূপান্তর ও ভারসাম্যপূর্ণ আঞ্চলিক উন্নয়নে অর্থনৈতিক করিডোর গড়ে তোলার ওপর জোর দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটি বলছে, শুধু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক করিডোর বাস্তবায়ন না হলে চলমান ব্যবসায়িক গতিতে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার থেকে বঞ্চিত হবে বাংলাদেশ। পাশাপাশি সম্ভাব্য কর্মসংস্থানের সুযোগবঞ্চিত হবে আড়াই কোটি মানুষ। প্রাথমিক এক সমীক্ষার ভিত্তিতে ‘রিয়েলাইজিং দ্য পটেনশিয়াল অব বাংলাদেশ থ্রু ইকোনমিক করিডোর ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি।

এডিবি বলছে, কাঠামোগত রূপান্তর ও ভারসাম্যপূর্ণ আঞ্চলিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে অর্থনৈতিক করিডোর। শিল্পের বিস্তার, কর্মসংস্থান, অবকাঠামোর উন্নয়ন, শহুরে অবকাঠামোর উন্নয়নে সামঞ্জস্যতা রক্ষা, অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থার একীভূতকরণ ও বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর সংযুক্তি— এর সবই ত্বরান্বিত হবে অর্থনৈতিক করিডোরের উন্নয়নের মাধ্যমে। পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে ছড়িয়ে পড়বে। ফলে এসব অঞ্চলেও শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে।

এডিবির প্রক্ষেপণ বলছে, ২০১৭ সালে দেশের শিল্প খাতের আয় ছিল ১৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থনৈতিক করিডোর উন্নয়ন-পরবর্তী আয়ের সঙ্গে অপরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শিল্প থেকে আয়ের মধ্যকার ব্যবধান দৃশ্যমান হবে ২০২২ সাল নাগাদ। ব্যবসার বর্তমান গতিতে ২০২২ সাল নাগাদ শিল্পের আয় দাঁড়াবে ২২ বিলিয়ন ডলার। অর্থনৈতিক করিডোরের মাধ্যমে ব্যবসায়িক পরিস্থিতির উন্নয়ন হলে তা দাঁড়াবে ২৫ বিলিয়ন ডলারে। ২০২৫ সালে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আয় দাঁড়াবে ৩০ বিলিয়ন ডলারে। আর কাঠামোগত পরিবর্তন হলে তা উন্নীত হবে ৩৫ বিলিয়ন ডলারে। চলমান গতিতে ২০৩০ সালে শিল্পের আয় হবে ৩৮ বিলিয়ন ডলার, করিডোর উন্নয়ন করা হলে দাঁড়াবে ৪২ বিলিয়নে। এ ব্যবধান আরো প্রকট হবে ২০৪০ সাল নাগাদ। ওই সময় চলমান ব্যবসায়িক গতিতে শিল্প থেকে আয় ৪০ বিলিয়নে সীমিত থাকলেও ব্যবসায়িক পরিস্থিতির উন্নয়নে তা দাঁড়াবে ৮০ বিলিয়ন ডলারে। চলমান গতিতে ২০৫০ সাল নাগাদ শিল্পের আয় দাঁড়াবে প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার। শুধু অর্থনৈতিক করিডোর উন্নয়নের মাধ্যমে তা ১৪৮ বিলিয়নে তুলে নেয়া সম্ভব।

দেশে অর্থনৈতিক করিডোর উন্নয়নের প্রথম ধাপ হিসেবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অর্থনৈতিক করিডোরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সাউথ-ওয়েস্ট বাংলাদেশ ইকোনমিক করিডোর (এসডব্লিউবিইসি) শীর্ষক মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এসডব্লিউবিইসি কম্প্রিহেনসিভ ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান (সিডিপি) অনুযায়ী, এ অঞ্চলে ১৪টি খাতকে গুরুত্বের দাবিদার বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ (মাছ ও কাঁকড়া), কৃষিভিত্তিক খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, তৈরি পোশাক, বাইসাইকেল, অটোমোবাইল, জাহাজ নির্মাণ, ওষুধ, পাদুকা, চামড়াজাত পণ্য, আসবাবপত্র, সিরামিক, কাচ, প্লাস্টিক পণ্য ও টায়ার কারখানা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনৈতিক করিডোর উন্নয়নের অনুষঙ্গগুলোর অন্যতম হলো কার্যকর পরিবহন ব্যবস্থা। অথচ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্যমান সড়ক ও রেল যোগাযোগ অবকাঠামোকে অর্থনৈতিক করিডোরের জন্য উপযোগী করা হয়নি। অপ্রশস্ত ও ভাঙাচোরা সড়কের কারণে এ অঞ্চলে পণ্য পরিবহনের সময় ও ব্যয় লাগছে বেশি। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে স্থল বাণিজ্যের ৮০ ভাগই হয় বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে। সড়কপথে বন্দরটিকে রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত করেছে বেনাপোল-যশোর ও যশোর-ঢাকা মহাসড়ক। সড়কটির রুগ্ণ দশা পণ্য পরিবহনকে বিলম্বিত করছে।

দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোল। এ বন্দর দিয়ে তুলা, রাসায়নিক, মোটরগাড়ি, গাড়ির যন্ত্রাংশ, খাদ্যশস্য, মাছ, মসলা, কাগজসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি হয়। অন্যদিকে রফতানি হয় পাট ও পাটজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, ব্যাটারি, নির্মাণসামগ্রীসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য।

যশোর থেকে বেনাপোল পর্যন্ত জাতীয় মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ৩৮ কিলোমিটার। পরিবহনচালকরা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ে যশোর থেকে বেনাপোল যেতে ৪০ মিনিট সময় লাগলেও, বর্তমানে লাগছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। যশোর-ঢাকা মহাসড়কটি আগে থেকেই খারাপ দশায় ছিল। বন্যার পর ভাঙাচোরা দশা আরো খারাপ হয়েছে। এ সড়কটি দিয়েও পণ্য পরিবহনে চার-পাঁচ ঘণ্টা বেশি সময় লাগছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভাঙাচোরা সড়কের কারণে স্থলবন্দরগুলো থেকে আমদানি বা রফতানি করা পণ্য পরিবহনে বাড়তি সময় ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্দর থেকে বিভিন্ন শহরের সংযোগ সড়কগুলোর ভাঙাচোরা দশার কারণে যেমন আমদানি-রফতানি কার্যক্রমের গতি কমছে, তেমনি বাড়ছে পণ্যের মূল্য।

এডিবি বলছে, অর্থনৈতিক করিডোর উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যবসায় পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আনা হলে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে তিন গুণ। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪ সাল নাগাদ বিদ্যমান ব্যবসায় পরিস্থিতিতে নতুন কর্মসংস্থান হবে ৯০ লাখ মানুষের। অন্যদিকে পরিস্থিতি উন্নয়নের মাধ্যমে তা ২ কোটি ১০ লাখ পর্যন্ত তুলে নেয়া সম্ভব। ব্যবসার স্বাভাবিক গতিতে ২০৫০ সাল নাগাদ নতুন কর্মসংস্থান হতে পারে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের। অথচ অর্থনৈতিক করিডোর বাস্তবায়ন হলে উন্নততর ব্যবসায় পরিস্থিতিতে আরো ৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারে।

জানা গেছে, দেশে বর্তমানে আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সরকারি উদ্যোগে ১৬টি ইকোনমিক করিডোর নির্মাণ পরিকল্পনাধীন আছে। এর সবগুলোই গুরুত্বপূর্ণ হলেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে এডিবি। সংস্থাটির মতে, করিডোরগুলো দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে উদ্দীপ্ত করবে।

এজন্য অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে মোট নয়টি অর্থনৈতিক করিডোর বাস্তবায়নের প্রস্তাব করেছে এডিবি। এর অন্যতম হলো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক করিডোর। আনুষঙ্গিক মূলধনি ব্যয়সহ এসব করিডোর নির্মাণে মোট মূলধনি ব্যয় হবে ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের বেশি। এখানে আনুষঙ্গিক মূলধনি ব্যয় বলতে বোঝানো হয়েছে টোল বুথ, বর্ডার ক্রসিং পয়েন্ট ও স্থলবন্দর এবং ট্রাকবহরের আধুনিকায়নকে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) বক্তব্য হলো, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বা ইকোনমিক করিডোরের ব্যাপ্তি অনেক বড়। বিশাল এ কর্মযজ্ঞের আওতায় সড়ক, রেল, বিমানবন্দর, জলপথ, বিশ্ববিদ্যালয়-স্কুল-কলেজ, প্রশিক্ষণকেন্দ্র, হাটবাজার থাকে। জীবন ও জীবিকার সবকিছুই একসঙ্গে সমন্বিত করে করতে হয় করিডোর। ইকোনমিক জোনের মধ্যে শুধু শিল্পায়ন কার্যক্রম সক্রিয় থাকে। অন্যদিকে ইকোনমিক করিডোর বাস্তবায়ন করতে হয় অন্য সব বিষয়সহ। এক্ষেত্রে বড় বিষয় হলো কানেক্টিভিটি বা একটির সঙ্গে অন্যগুলোর সংযুক্তি।

বিআইডিএ জানিয়েছে, সাউথ-ওয়েস্ট করিডোরটি সীমান্ত থেকে শুরু করে বেনাপোল, পায়রা ও মোংলা বন্দর হয়ে ঢাকা পর্যন্ত আসবে। আর একটি হবে নর্থ-ইস্ট ইকোনমিক করিডোর, এটা হবে ঢাকা থেকে তামাবিল পর্যন্ত। সাউথ-ওয়েস্টের ওপর এরই মধ্যে একটি স্টাডিতে করিডোর ঘিরে কী ধরনের সম্ভাব্য প্রকল্প হতে পারে আর কী পরিমাণ ইকোনমিক আউটপুট হতে পারে, সে প্রক্ষেপণও করা হয়েছে। প্রক্ষেপণে দেখানো হয়েছে এখনকার তুলনায় অনেক বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। সড়কের সঙ্গে রেলের কানেক্টিভিটি হবে, সড়ক-রেলের সঙ্গে আকাশপথের কানেক্টিভিটি হবে। জলপথের কানেক্টিভিটি হবে এবং অন্যান্য ফ্যাসিলিটি গড়ে উঠবে। প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, বিকল্প পরিস্থিতিতে যদি নীতিসহায়তা দেয়া যায় এবং অন্যান্য ফ্যাসিলিটিকে ইনটেনসিভ ব্যবহারের সুযোগ যদি করে দেয়া যায়, তাহলে ১৫০ বিলিয়ন ডলার আয় হতে পারে। এছাড়া সার্বিকভাবে ইকোনমিক করিডোর উন্নয়নে একটি বিধিমালা তৈরির কাজও করছে বিআইডিএ।

ইকোনমিক করিডোর এক বিশাল কর্মযজ্ঞ, এমন মন্তব্য করে বিআইডিএ নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজি এম আমিনুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, এখন পর্যন্ত সাউথ-ইস্ট করিডোরের প্রাথমিক একটি সমীক্ষা হয়েছে। আমরা এখন যে ফেজে আছি এখানে তিনটা কাজ, একটা হলো এ ইকোনমিক করিডোরের জন্য প্রজেক্ট আইডেন্টিফাই কর। এর ধারাবাহিকতায় আরো অনেক প্রজেক্ট শনাক্ত করা যাবে। সবগুলো একসঙ্গে করা যাবে না, শনাক্ত করার পর তাই অগ্রাধিকারযোগ্য প্রকল্প বেছে নিতে হবে। যেগুলো অগ্রাধিকারযোগ্য বলে বিবেচিত হবে, সেগুলোর মধ্যে ফ্ল্যাগশিপ কিছু প্রজেক্ট নিয়ে আমরা শুরু করব। এখন পর্যন্ত স্টাডি হয়েছে, সম্ভাব্য কী হতে পারে তাও চিহ্নিত করা গেছে। এখন যেটা করতে হবে সেটা হলো প্রজেক্টগুলো আইডেন্টিফাই করতে হবে, অগ্রাধিকারযোগ্য চিহ্নিত করতে হবে। এরপর একটা-দুটো ফ্ল্যাগশিপ প্রজেক্ট নিয়ে বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে। পাশাপাশি নর্থ-ইস্ট ইকোনমিক করিডোর নিয়েও স্টাডি শুরু করব। এখন আমরা বিজনেস অ্যাজ ইউজুয়াল সিনারিওতে আছি। ইনডিউসড সিনারিওর জন্য কার্যক্রমগুলো হাতে নেয়ার পর্যায়ে আছি। কারণ যখন বাস্তবায়ন পর্যায়ে আসবে তখন ইনডিউসড অবস্থায় যাওয়ার চেষ্টা করব।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের বিদ্যমান গ্রোথ জোন বা ইকোনমিক করিডোর বলতে আমরা যেটা বুঝে থাকি সেটা মূলত পূর্বাঞ্চলকেন্দ্রিক, যা বর্তমানে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বেল্টেই বেশি কেন্দ্রীভূত। অন্যান্য অঞ্চল সামঞ্জস্যহীনভাবে পিছিয়ে আছে। পিছিয়ে থাকার কারণে এ অঞ্চলগুলোর মাধ্যমে প্রবৃদ্ধিতে যে অবদান আসার কথা, তা হচ্ছে না। এর ফলে আমাদের দুই রকমের ক্ষতি হচ্ছে, একটা হলো আমরা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় জিডিপিতে অবদান রাখতে পারছি না, যা স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগের সঙ্গেও যুক্ত। আরেকটা হলো অপর্যাপ্ত উন্নয়নের কারণে ওই অঞ্চলগুলো দরিদ্রতার প্রেক্ষাপটেও পিছিয়ে থাকছে। উচ্চমাত্রার প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য দূরীকরণ— এ দুই উদ্দেশ্যে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করা দরকার। সে লক্ষ্যে সরকারেরও মনোযোগ রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ঘিরে। বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো উন্নয়ন শুরু হয়েছে। এটা ইতিবাচক। বলা হয়ে থাকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলোর অন্যতম। বিশেষ করে বরিশাল অঞ্চল। সুতরাং সে জায়গা থেকে এ অঞ্চলকে অগ্রাধিকার দেয়ার যৌক্তিকতা রয়েছে। এখানকার আরেকটি সুবিধা রয়েছে, যা মূলত বঙ্গোপসাগরভিত্তিক। সরকার ব্লু ইকোনমি নিয়ে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে চায়, সে প্রেক্ষাপটেও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সুবিধা রয়েছে। আমাদের একটি অঞ্চলের ওপর যে ওভার কনসেনট্রেশন রয়েছে, সেটিকে ছড়িয়ে দেয়ার সুযোগ তৈরি হবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ইকোনমিক করিডোরের মাধ্যমে। এ কারণেই এ অঞ্চলকে ঘিরে বন্দর, অর্থনৈতিক অঞ্চল, বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনসহ অনেক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। ভারতের বিগ বি উদ্যোগও এর সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। আবার চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগের অংশ হওয়ারও সুযোগ রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ইকোনমিক করিডোরের মাধ্যমে। সরকারের যদি সবগুলো অঞ্চল নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে সম্পদের ঘাটতি থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করা হলে জিডিপি, দারিদ্র্য বিমোচন, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান তথা সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা সম্ভব হবে।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত