সুফিউর রহমানকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ পররাষ্ট্র দূত, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অসন্তোষ
সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সুফিউর রহমানকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এদিকে, এই খবরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিশ্রুতিশীল ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের মহলে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। স্বৈরাচারি হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত সুফিউর রহমানকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে এমন গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার প্রস্তাবে কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অনেকেই হতাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, এতে করে কূটনৈতিক সফলতা থেকে পিছিয়ে পড়তে পারে বর্তমান সরকার। শুধু তাই নয়, দিল্লির মদদে এরকম আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত বিপদও ডেকে আনতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সুফিউর রহমান নবম বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় চারটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রদূতীয় দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এবং বিশ্বাসযোগ্য কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
১৯৯১ সালের জানুয়ারিতে তিনি বাংলাদেশ পররাষ্ট্র দপ্তরে যোগ দেন। তিনি তার ব্যাচের পদক্রম তালিকায় শেষের দিকে থাকা সত্ত্বে¡ও ২০১২ সালে হাসিনা সরকার কয়েকজনকে ডিঙ্গিয়ে তাকে রাষ্ট্রদূত বানায়।
হাসিনার আশীর্বাদে সুফিউর রহমান অক্টোবর ২০২২ থেকে মে ২০২৪ পর্যন্ত সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং জেনেভার জাতিসংঘ অফিসসমূহ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তিনি ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধে জবাবদিহি নিশ্চিত করেন। তিনি মানবাধিকার কাউন্সিলে জাতিসংঘের জেনেভা অফিসে হাসিনা সরকারের নিপীড়নের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
সুফিউর রহমান ২০১৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফিজি এবং দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। সে সময় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে। এমনকি তার সময়ে মিয়ানমারের সাথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের নামে একটা ‘ছেলে ভোলানো’ চুক্তি সম্পাদিত হয়।
সূত্রে জানা গেছে, সুফিউর রহমান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বোঝাতে সমর্থ হন যে বাংলাদেশের রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলে তিনি শান্তিতে নোবেল পেতে পারেন। নানাভাবে সাবেক রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন এবং নানা সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে থাকেন।
সুফিউর রহমান ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ও প্রভাবশালী রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত হাসিনা সরকার তার অবসরোত্তর মেয়াদ বাড়িয়ে দেন।
এদিকে, সাবেক রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমানকে প্রধান উপদেষ্টার পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাবের খবর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিশ্রুতিশীল ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে সুফিউর রহমান বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এমন গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য উপযুক্ত পছন্দ নন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিশ্রুতিশীল ও আদর্শবান কর্মকর্তারা মনে করছেন। তাদের ধারনা দিল্লির অ্যাসাইনমেন্টেই সরকার এমন আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে। যেটা বর্তমান সরকারের মাত্র দুই মাসের বিশাল কূটনৈতিক সাফল্যকে নিমিষেই ম্লান করে দিতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, সরকারের উচিত এমন আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত না নেয়া। এতে করে বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বর্তমান উপদেষ্টা হিসাবে যিনি আছেন তাঁর কাজের গতিও কমে যাবে।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন