লন্ডন থেকে সিঙ্গাপুরগামী একটি ফ্লাইট তীব্র ঝাঁকুনির কবলে পড়েছে
বৃহস্পতিবার নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন
নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আগামীকাল ২২শে ডিসেম্বর। এই নির্বাচনে সরকারি দল ও বিএনপি এখন পর্যন্ত নমনীয়তা দেখিয়ে এসেছে। ভোটের আগের দিন বুধবার রাতে কি ঘটে এবং ভোটের দিন ভোটার সাধারণ নিরাপদে, নির্বিঘেœ ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দিতে পারেন কিনা সেটাই দেখার বিষয়। এ নির্বাচন অবাধ, সুষ্টু নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্তভাবে অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন এবং সরকার কঠোর মনোভাব নিয়ে আছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন নারায়নগঞ্জের নির্বাচন আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যবাহী। এ নির্বাচনে সরকার বদল হবে না, তবে আগামীর নির্বাচন ও সরকার গঠনে তা যথেষ্ট প্রভা সৃষ্টিকারি হবে। অপরদিকে নির্বাচন কমিশনের অধীনে এটিই শেষ প্রত্যক্ষ ভোটের নির্বাচন। পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তার প্রয়োগে নির্বাচন কমিশনের দুর্বলতা, সাহসিকতার অভাব, রাজনৈতিক আনুগত্য প্রবলভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ ও ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কমিশনের ভূমিকা কমিশনকে কলঙ্কিত করেছে। বিদায় বেলায় কিছুটা হলেও কলঙ্কের কালিমায় প্রলেপ দিতে চায় কমিশন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবেলায় এই কমিশন কতটা সফল সে সংশয়-শঙ্কা থেকেই যত উদ্বেগ। ভোট জালিয়াতি, কারচুপি, বিএনপির প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে আসা থেকে বিরত রাখতে আগের রাতেই হুমকি দেয়া, ভোট কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দেয়া, প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসারদের অস্ত্রের মুখে প্রানের ভয় দেখিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া অথবা অন্যায়, অনৈতিক কাজে সহায়তা করতে বাধ্য করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা করছে বিএনপি। ভোটারদের ভোট দানে বাধা দেয়া, হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোটারদের হুমকি দেয়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন সম্ভাব্য সকল দিক বিবেচনায় রেখেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে। নারায়ণগঞ্জে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দশ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী অধুষ্যিত এলাকায় জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিজিবি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে শহরময় টহল দিচ্ছে। এপর্যন্ত তেমন কোন অপ্রীতিকর ঘটনা, বাক বিতন্ডা, ছোটখাটো হাতাহাতির মতো ঘটনাও ঘটেনি। নারায়নগঞ্জের মত স্পর্শকাতর এলাকায় এটাও নজিরবিহীন। বিএনপির প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং তাদের কর্মী-সমর্থকরা নিরাপদে, নির্বিঘেœ নির্বাচনী প্রচারনামূলক কার্যক্রম চালিয়েছেন। বড় দুই দলেরই কেন্দ্রীয় নেতারা প্রচার কাজ চালিয়েছেন। এমপি, মন্ত্রীরা যাননি। কোথাও কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেনি। শান্তিময় এই সহ অবস্থান ভোটার সাধারনের মনে নিরাপত্তা, আস্থার মনোভাব জাগিয়েছে। বিএনপি প্রার্থী এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান মনোননয়নপত্র জমা দেয়ার আগে থেকেই সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে আসছেন। মাঠে নেমে সর্বশেষ প্রচারাভিযানেও তিনি একই দাবি করেন। কোথাও ন্যূনতম গোলযোগ, অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটার পরও অব্যাহতভাবে সেনা মোতায়েনের দাবি নিতান্তই রাজনৈতিক কৌশলগত অবস্থান বলেই মনে করছেন তার প্রতিপক্ষ। অপরদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভি ফলাফল তার পক্ষে আসার ব্যাপারে অনেক বেশি প্রত্যয়ী। তিনি সেনা মোতায়েনের দাবি সরাসরি না করলেও নির্বাচন গোলযোমুক্ত শান্তিপূর্ণভাবে হয় কিনা সে সংশয়ও প্রকাশ করেন। এই সংশয় ভীতি অবশ্য তার নিজ দলের মধ্যে থেকেই। নাম প্রকাশ না করলেও তার কর্মী সমর্থকদের আশঙ্কা নিজ দলের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ শামীম ওসমানের লোকজন কারনে অকারনে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো অঘটন ঘটায় কিনা সে শঙ্কা তাদের রয়েছে। অবশ্য আইভি এ কথাও বলেছেন যে, শামীম ওসমান তার বিপক্ষে কাজ করছেন না। পক্ষেই ভূমিকা রাখছেন। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কোনরকম গোলযোগ, সন্ত্রাস, কারচুপি, জালিয়াতি প্রভাবমুক্ত সুষ্ঠু, সুন্দর, ভোট নিশ্চিত করার কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শামীম ওসমান, তার কর্মীবাহিনীর সদস্যদের কার্যকলাপ মনিটরিং করা হচ্ছে। বিএনপির কোন অংশ বা বাইরের কোন পক্ষ যাতে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সে দিকে সার্বক্ষনিক নজরদারি করা হচ্ছে। সরকারি মহল মনে করেন বিএনপি ইস্যু খুঁজছে। নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ না হওয়ার অভিযোগ তুলে তারা শক্তিসালি নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠনে তাদের দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে জনমত প্রভাবিত করা ও প্রতিষ্ঠা করতে চাইবে। অভ্যন্তরীনভাবে জনমত প্রভাবিত করা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পক্ষে টানাই তাদের উদ্দেশ্যে। নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ হলেও তারা একই অভিযোগ আনবে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন। কিন্তু সরকার বিএনপির উদ্দেশ্য সম্পর্কে সজাগ থেকেই দেশি বিদেশি প্রায় সাড়ে তিনশ পর্যবেক্ষককে নির্বাচন পর্যবেক্ষন সুযোগ দিতে বাধা হয়নি। নিরপেক্ষ সুষ্ঠু ভোটে পরাজয় হলেও তারা তা মেনে নেবে। যাতে বিএনপি ইস্যু তৈরির সুযোগ না পায়। অপরদিকে বিএনপি প্রার্থী বলেছেন, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ফলাফল যাই হোক মেনে নেবেন। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন, ঢাকার দুই এবং ঢাকার বাইরের ৫ সিটি কর্পোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতার আলোকেই নারায়নগঞ্জ সিটি নির্বাচন নিয়ে তাদের আশঙ্কা। তারা মনে করেন সরকারের উদ্দেশ্যে সৎ হলে সেনা মোতায়েনের দাবিকে সরকার এড়িয়ে যেতনা। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের অবস্থান হচ্ছে সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় সরকারের কোন নির্বাচনেই যেখানে সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন হয়নি সেখানে নারায়নগঞ্জে কেন। সেনা মোতায়েনের কোন পরিস্থিতিতেই এখানে সৃষ্টি হয়নি।
এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি
শেয়ার করুন