৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বিশাল বাজেট
দেশের অর্থনীতির সব খাতের সুষম ও সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন নিশ্চিত করার প্রত্যয় নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন জাতীয় সংসদে।
এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় বাজেট। অর্থমন্ত্রী নিজেই তার দেওয়া বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বাজেট বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি মনে করেন জনগণকে বড় সেবা দিতে হলে বড় বাজেটের প্রয়োজন।
আর তাই জনগণের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করার প্রত্যয় নিয়ে আগামী ২০২১ সালে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করেন। বাজেট ঘাটতি এবারও পাঁচ শতাংশই ধরা হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার প্রস্তাব করা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।
এর আগে সকালে জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের অনুমোদন নেওয়া হয়। এরপর অর্থমন্ত্রী বর্তমান সরকারে টানা দুই মেয়াদে নবম বাজেট উপস্থাপন করতে দাঁড়ান।
‘উন্নয়ন সড়কে বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের’ শীর্ষক মোট ১৩৮ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তৃতা দশম জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন তিনি। এটা ছিল বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে টানা নবম এবং তার ১১তম বাজেট।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সঙ্গে নিয়ে দুপুর ১টা ৩২ মিনিটে সংসদ ভবনে ঢুকেন। এরপর আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অর্থমন্ত্রীকে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করার আহ্বান জানান। অফহোয়াইট রঙের পাঞ্জাবি, সাদা পায়জামা এবং কালো মুজিবকোট পরিহিত অর্থমন্ত্রী দশম জাতীয় সংসদের ১৬তম অধিবেশনে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের সম্পূরক এবং ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতার শুরুতেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ এবং অন্যান্য আন্দোলনে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় তিনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের অপ-রাজনীতির শিকার হয়ে অকালে প্রাণ হারিয়েছেন কিংবা অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন যারা, তাদের প্রতি সমবেদনা জানান।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত স্পিকারের অনুমতি নিয়ে নিজ আসনে বসে পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে তার বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন।
অর্থমন্ত্রী ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের জন্য মোট ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে প্রস্তাব করেছেন। অনুন্নয়ন রাজস্ব ব্যয় ২ লাখ ৭ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা আর উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ১ লাখ ৫৩ হজার ৩৩১ কোটি টাকা এবং অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ১১৫ কোটি টাকা।
অন্যদিকে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর কর থেকে আয় হবে ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভুত কর থেকে আসবে ৮ হাজার ৬২২ কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৩১ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ হাজার ১২ লাখ ২৭৫ কোটি টাকা।
বাজেটের অর্থায়নে বৈদেশিক উৎস থেকে আসবে ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা, এর মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো, অর্থনীতির সব খাতের সুষম ও সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন। আমরা সাধারণত একটি মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর আওতায় বাজেট কাঠামো প্রস্তুত করে এ লক্ষ্য অর্জন করতে চাই। মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো প্রতি বছরই হালনাগাদ করা হয়। এ ক্ষেত্রে সামষ্টিক অর্থনীতির অন্যান্য খাত যথা প্রকৃত, মুদ্রা ও বহিঃখাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি আয় ও ব্যয় সীমা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার স্বার্থে আমরা বাজেটের আয় ও ব্যয়ের পরিমাণকে একটি নিরাপদ সীমার মধ্যে নির্ধারণ করি। পাশাপাশি, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ও ঘাটতি অর্থায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকি।’
তিনি বলেন, ‘বাজেট কাঠামো প্রস্তুতের ক্ষেত্রে আমরা সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাগুলোও বিবেচনায় নিয়েছি। আমার বিশ্বাস প্রস্তাবিত বাজেট কাঠামো, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাসহ টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চালনে সক্ষম হবে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট কাঠামো যেসব অনুমানের ভিত্তিতে প্রণয়ন করা হয়েছে, আমি তা উল্লেখ করতে চাই, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হবে ৭ দমমিক ৪ শতাংশ এবং বছর শেষে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে।
তিনি বলেন, সুদের হার ক্রমহৃাসমান ধারায় ও নমিনাল বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকবে। ভোগ ও বিনিয়োগ ব্যয় বৃদ্ধির প্রভাবে অভ্যন্তরীণ ভোগ আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়বে। ফলে, চলতি হিসাবের ভারসাম্যে সামান্য ঘাটতি সৃষ্টি হবে। তবে, মূলধন ও আর্থিক হিসাবে পর্যাপ্ত উদ্বৃত্ত থাকায় সার্বিক লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত থাকবে।
মুহিত বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রবৃদ্ধি সহায়ক মুদ্রা ও ঋণ নীতি অব্যাহত থাকবে। কর-রাজস্ব আয় জিডিপির ১ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। করের পরিধি সম্প্রসারণ এবং নতুন মূল্য সংযোজন কর আইনের বাস্তবায়ন হবে। কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ ক্রমান্বয়ে প্রত্যাহার করা হবে। প্রতিশ্রুত বৈদেশিক সাহায্যের অবমুক্তি বৃদ্ধি পাবে। বিশ্ব উৎপাদন প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধার অব্যাহত থাকবে এবং লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রপ্তানি ও প্রবাস আয় অর্জিত হবে। সর্বোপরি জনগণের কর্মোদ্যম এবং কৃষক ও শ্রমিকের কাজের প্রতি আগ্রহ দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিঘ্ন হতে দেবে না।
এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি
শেয়ার করুন