আপডেট :

        হজের ফ্লাইট শুরু আগামি মাস থেকে

        ধর্ষণ মামলায় হার্ভকে দোষী সাব্যস্ত করে ২০২০ সালে দেওয়া রায় বাতিল

        ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভের জেরে স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করল সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়

        ট্রাম্পের বিচার নিয়ে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট

        যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ দমনে মারমুখী পুলিশ

        ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেফতার শতাধিক

        পশ্চিম ভারত মহাসাগর অঞ্চলে মাদক পাচার এবং মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার বিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে

        গাজা উপকূলে অস্থায়ী বন্দর যুক্তরাষ্ট্রের !

        রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করার নির্দেশ

        জাতীয় নেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের অবদান কখনোই ভুলবার নয়

        ৮৮ আসনে দুপুর পর্যন্ত কত ভোট পড়লো

        ২৬ জেলার ওপর তাপপ্রবাহ

        চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ রেকর্ড ৪২.৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা

        চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ রেকর্ড ৪২.৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা

        কেন্দ্রীয় কি ঋণখেলাপি ও অর্থপাচারের সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করছে, প্রশ্ন টিআইবির

        ইসরায়েল বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার

        বিমান হামলায় নিহত এক নারীর গর্ভ থেকে প্রসব হওয়া সন্তানটি মারা গেছে

        ফেনীতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে কিশোর গ্যাং গ্রেফতার

        তাপ্প্রবাহে ভাঙল ৭৬ বছরের রেকর্ড

        তিন দিনের সফরে বর্তমানে চীনে রয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন

বিশ্বে প্রতি ৫ সেকেন্ডে ১ শিশু মারা যায়

বিশ্বে প্রতি ৫ সেকেন্ডে ১ শিশু মারা যায়

জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিভাগ ও বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রকাশিত শিশু মৃত্যুর নতুন হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ১৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৬৩ লাখ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি ৫ সেকেন্ডে মারা গেছে একজন শিশু। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব মৃত্যু হয়েছে প্রতিরোধযোগ্য কারণে।

এই শিশুদের একটি বড় অংশের মৃত্যু হয়েছে তাদের জীবনের প্রথম পাঁচ বছরের মধ্যে, যা সংখ্যায় ৫৪ লাখ। মৃত্যুবরণকারী এই শিশুদের মধ্যে নবজাতকের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক।

ইউনিসেফের তথ্য, গবেষণা ও নীতিমালা বিষয়ক পরিচালক লরেন্স চ্যান্ডি বলেন, ‘জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এখন থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময়ে পাঁচ বছরের কমবয়সী ৫ কোটি ৬০ লাখ শিশুর মৃত্যু হবে। শিশুদের রক্ষায় আমরা ১৯৯০ সাল থেকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি। তারপরও লাখ লাখ শিশু এখনো মৃত্যুবরণ করছে, কেবলমাত্র তারা কারা এবং কোথায় জন্মগ্রহণ করছে- এই কারণে। ওষুধ, পরিষ্কার পানি, বিদ্যুৎ ও টিকার মতো সহজ সমাধান নিশ্চিত করে আমরা প্রতিটি শিশুর এই বাস্তবতা বদলে দিতে পারি।’

বিশ্বব্যাপী ২০১৭ সালে মৃত্যুবরণকারী পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রায় অর্ধেকই সাব-সাহারান আফ্রিকার এবং আরো ৩০ শতাংশ এশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের। সাব-সাহারান আফ্রিকায় প্রতি ১৩ জন শিশুর মধ্যে ১ জন তার বয়স পাঁচ বছর হওয়ার আগেই মারা যায়। উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে এই সংখ্যাটি ছিল প্রতি ১৮৫ শিশুর মধ্যে ১ জন।

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সী শিশুর মৃত্যুহার ছিল প্রতি ১ হাজার জীবিত জন্মে ৩২। এটা ১৯৯০ সালে ৫ লাখ ৩২ হাজার থেকে ২০১৭ সালে কমে ১ লাখে দাঁড়ায়। এসব মৃত্যুর অর্ধেকের কিছু বেশি হচ্ছে নবজাতকের, যাদের জন্মের প্রথম ২৮ দিনের মধ্যেই মৃত্যু হয়েছে।

নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে জাতীয় নবজাতক ক্যাম্পেইন অন্যতম। এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সরকার প্রতিটি নবজাতকের জন্য ব্যয়সাশ্রয়ী জরুরি স্বাস্থ্যসেবা কমিউনিটি ও বাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চেষ্টা করছে।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের শুরুতে সরকার জাতীয় নবজাতক স্বাস্থ্য কর্মসূচি শুরু করে, যা জরুরি কার্যক্রমগুলোকে বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় সম্প্রসারণ করে। জরুরি মাতৃ ও নবজাতকের সেবাকে যথাযোগ্য অগ্রাধিকার দিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, ইউনিসেফ ও অংশীদার সংস্থা বাংলাদেশের জেলাসমূহে অসুস্থ নবজাতকের অত্যাবশ্যকীয় সেবা নিশ্চিত করতে স্ক্যানু প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। স্ক্যানুর মাধ্যমে অসুস্থ নবজাতকদের অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে।

ডব্লিউএইচওর পরিবার, নারী ও শিশু স্বাস্থ্যবিষয়ক সহকারী মহাপরিচালক ড. প্রিন্সেস নোনো সিমেলেলা বলেন, ‘পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, যথাযথ পুষ্টি অথবা মৌলিক স্বাস্থ্যসেবার অভাবে এখনো প্রতি বছর লাখ লাখ শিশু মারা যাওয়া উচিত নয়। প্রতিটি শিশুকে, বিশেষ করে জন্মের সময় এবং প্রারম্ভিক বছরগুলোতে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির সুযোগ প্রদানের বিষয়টিকে আমাদের অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে, যাতে তারা বেঁচে থাকার এবং স্বাস্থ্যবান হয়ে বেড়ে ওঠার সর্বোত্তম সুযোগ পায়।’

৫ বছরের কম বয়সী বেশিরভাগ শিশুর মৃত্যু হয় জন্মকালীন জটিলতা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, নবজাতকের সংক্রমণজনিত সমস্যা ও ম্যালেরিয়ার মতো প্রতিরোধযোগ্য অথবা নিরাময়যোগ্য কারণে। তুলনামূলকভাবে ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর একটি বিশেষ কারণ হচ্ছে আঘাত, বিশেষ করে পানিতে ডুবে যাওয়া এবং সড়ক দুর্ঘটনার মাধ্যমে।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের জ্যেষ্ঠ পরিচালক এবং স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যার বৈশ্বিক চর্চা বিভাগের প্রধান টিমোথি ইভানস বলেন, ’৬০ লাখের বেশি শিশু তাদের পঞ্চদশ জন্মদিনের আগেই মৃত্যুবরণ করে, যা আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর অবসান ঘটানো এবং শিশুদের স্বাস্থ্যের পেছনে বিনিয়োগ করা সব দেশেরই মানবসম্পদ গড়ে তোলার মৌলিক ভিত্তি। আর এই বিনিয়োগ তাদের ভবিষ্যৎকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করবে।’

সর্বত্রই শিশুদের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময় হচ্ছে তাদের জীবনের প্রথম মাস। ২০১৭ সালে ২৫ লাখ শিশু তাদের জীবনের প্রথম মাসে মৃত্যুবরণ করে। উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে জন্মগ্রহণকারী একটি শিশুর তুলনায় সাব-সাহারান আফ্রিকা অথবা এশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলোতে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের জীবনের প্রথম মাসেই মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল ৯ গুণ বেশি। এছাড়া, পাঁচ বছরের কম বয়সী অন্য শিশুদের তুলনায় নবজাতকদের বাঁচানোর ক্ষেত্রে অগ্রগতি ১৯৯০ সাল থেকে বেশ ধীর গতির।

এক্ষেত্রে এমনকি দেশের ভেতরে ও বৈষম্য রয়েছে। শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার গড়ে ৫০ শতাংশ বেশি। এছাড়া, মাধ্যমিক বা আরো উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা গ্রহণ করা মায়ের সন্তানের তুলনায় অশিক্ষিত মায়ের সন্তানের বয়স পাঁচ বছর হওয়ার আগেই মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ।

এসব চ্যালেঞ্জ থাকা সত্বেও প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী শিশুমৃত্যু কমেছে। ১৯৯০ সালে যেখানে পাঁচ বছরের কম বয়সে ১ কোটি ২৬ লাখ শিশুর মৃত্যু হতো সেখানে ২০১৭ সালে তা নাটকীয়ভাবে কমে ৫৪ লাখে নেমে এসেছে। একই সময়ে আরেকটু বেশি বয়সে অর্থাৎ ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সে মারা যাওয়া শিশুদের সংখ্যা ১৭ লাখ থেকে কমে ১০ লাখের নিচে নেমে এসেছে।

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল লিউঝেন মিন বলেন, ‘১৯৯০ সাল থেকে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মৃত্যুহার কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির বিষয়টি নতুন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। শৈশবকালীন প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর অবসান ঘটানো সংক্রান্ত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং কেউ যাতে পিছিয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করার জন্য সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা নবজাতক, শিশু ও মায়েদের সহায়তা করার মাধ্যমে বৈষম্য কমানো অপরিহার্য।’

এলএবাংলাটাইমস/আই/এলআরটি

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত