আপডেট :

        চিকিৎসা বিজ্ঞানে সাফল্য অর্জনে রোবটিক আর্ম বা মানব দেহে সংযোজনের জন্য কৃত্রিম হাত

        বাংলা সাহিত্য জগতের চর্তুপাশেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিচরণ করেছেন

        প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক

        মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত হলে তার প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে বলে প্রধানমন্ত্রী আশঙ্কা

        তথ্য অধিকার আইনের আওতায় গণমাধ্যমের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত প্রসঙ্গে

        দেশে ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ

        দেশে ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ

        বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলন বয়কট করেছেন ব্যাংক রিপোর্টারা

        বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ সম্মেলন বয়কট করেছেন ব্যাংক রিপোর্টারা

        ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে

        সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিঃ বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু

        নড়াইল জেলা যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ২৮ মে

        ডলারের অফিসিয়াল মূল্য ৭ টাকা বাড়িয়ে ১১০ থেকে ১১৭ টাকা নির্ধারণ

        বাল্টিমোর সেতুতে আটকা সর্বশেষ শ্রমিকের মৃতদেহ উদ্ধার

        দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, অর্ধশত ককটেল বিস্ফোরণ

        প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হচ্ছে আজ

        বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে অংশ নিতে এখন পর্যন্ত সাতটি আন্তর্জাতিক কোম্পানি দরপত্র কিনেছে

        দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, অর্ধশত ককটেল বিস্ফোরণ

        প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হচ্ছে আজ

        ডিজিটাল বাংলাদেশের কারণেই হয়রানি ছাড়াই ঘরে বসে হজের সব কাজ করা যাচ্ছেঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নিজের নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ

নিজের নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ

মহান আল্লাহর বাণী_ এটা নিঃসন্দেহ যে, নফস মানুষকে কুকাজের- প্রতি নির্দেশ দিয়ে থাকে। কিন্তু যাকে আল্লাহ্ পাক দয়া করেন সে-ই রক্ষা পায়। (সূরা ইউসুফ ৫৩) রোজার মাধ্যমেই কুকাজের নির্দেশদাতা এ নফসকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতেই জিহাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শরীয়তের পরিভাষায়, প্রকাশ্য শত্রু অর্থাৎ কাফির মুশরিকদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের যে সংগ্রাম ও লড়াই তার নাম জিহাদে আজগর বা ছোট জিহাদ; আর মানুষের ভেতরকার নফসের বিরুদ্ধে রূহের যে জিহাদ তার নাম জিহাদে আকবর বা সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ। হযরত নবী করীম (সা.)-এর একটি হাদিসের আলোকেই এই নামকরণ করা হয়েছে।
সূরা আনকাবুতের শেষ আয়াতেও আল্লাহ্পাক ইরশাদ করেছেন- 'ওয়াল্লাজিনা জা-হাদু ফিনা লানাহদীয়ান্নাহুম সুবুলানা।' যারা আমার জন্য জিহাদ করে আমি তাদের অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয়ই আল্লাহ্
সৎ কর্মপরায়ণদের সঙ্গে আছেন।' তাফসীরে কাদেরীতে এ আয়াতের তফসীর প্রসঙ্গে বলা হয়েছে এখানে জা-হাদু এর শব্দমূল মোজাহেদা শব্দটি মুতলক (ব্যাপক অর্থবোধক) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যাতে জাহেরী ও বাতেনী উভয় প্রকার জিহাদ বুঝা যায়। ফলে এর অর্থ দাঁড়ায়, যে ব্যক্তি আমার রাস্তায় দীনের দুশমনদের সঙ্গে এবং নফস ও কামনা বাসনার বিরুদ্ধে জিহাদ করে আমি তাদের আমার সঙ্গে মিলনের সহজ পথ দেখিয়ে দিই। হযরত আবদুল্লাহ্ তাশতারী (রহ.) বলেন- যে ব্যক্তি মুজাহেদা (আত্মিক সাধনার) দ্বারা নিজের বাইরের দিককে সুন্দর করে নেয় আমি মুশাহেদার (সৃষ্টি রহস্য দেখানোর) মাধ্যমে তার বাতেন ও ভেতরের জগৎকে সাজিয়ে দিই।
হাদিস শরীফে নফসের সঙ্গে জিহাদকারীর পরিচয় প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, প্রকৃত মুজাহিদ ওই ব্যক্তি, যে নিজের নফসের সঙ্গে জিহাদ করে। নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও সাধনাকে সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ বলার আরো একটি তাৎপর্য হলো, কাফির, মুশরিক ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের পরিচালিত যুদ্ধ কোনো বিশেষ সময়েই সংঘটিত হয়। যখন ইসলাম ও মুসলমানদের ওপর শত্রুদের আঘাত আসে। যুদ্ধের জয় পরাজয় নির্ধারিত হওয়ার পর সে জিহাদ বন্ধ থাকে। কিন্তু নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ ও সংগ্রাম হরদম চালিয়ে যেতে হয়। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এ জিহাদের বিরাম নেই, শেষ নেই। এ হিসেবেও নফসের সঙ্গে জিহাদকে জিহাদে আকবর বা সর্বোত্তম জিহাদ বলার সার্থকতা উপলব্ধি করা যায়।
হাদিসে এসেছে, মানুষের কুপ্রবৃত্তির তাড়না থেকে আত্মশুদ্ধির উপায় এবং উন্নততর জীবনাদর্শের অনুসারী হওয়ার জন্যই মাহে রমজানে রোজা রাখার বিধান করা হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেছেন, 'প্রকৃত মুজাহিদ ওই ব্যক্তি যে (সব জিহাদের পাশাপাশি) নফসের সঙ্গে জিহাদ করে অর্থাৎ মনচাহি জীবনের বিরোধিতা করে।
রোজার মাধ্যমে কুপ্রবৃত্তির ওপর বিবেকের পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়, এর দ্বারা মানুষের পাশবিক শক্তি অবদমিত হয় এবং রুহানি শক্তি বৃদ্ধি পায়। মুমিন বান্দা একমাত্র আল্লাহর ভয় ও তার সন্তুষ্টির জন্য কুপ্রবৃত্তি দমন এবং যাবতীয় খারাপ কাজ পরিত্যাগ করে নিজেকে আল্লাহর কাছে বিলিয়ে দেয়ার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালান। তখনই প্রতিটি সৎ কাজ ও আল্লাহর বিধান পালনে মানুষ প্রশান্তি খুঁজে পায়।
রোজার মূল লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি আর রোজার ব্যবহারিক উদ্দেশ্য হলো কুপ্রবৃত্তি দমন, আত্মসংশোধন, আত্মসংযম ও খোদাভীতি অর্জন। রমজান মাসের রোজার মাধ্যমে রোজাদার খোদাভীতি অর্জন করেন, সৃষ্টিকর্তার শোকর আদায় করতে শেখেন এবং আল্লাহর হুকুমের কদর বুঝতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে সব কাজকর্মের মধ্য দিয়ে রোজাদার মানুষ মূলত আল্লাহর আদেশ-নিষেধগুলোকে মেনে চলার চেষ্টা করেন। একসময় তাতে তিনি সফলকাম হন, তখন তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করেন। এভাবেই রোজাদার বান্দা আল্লাহর সানি্নধ্যে এগিয়ে যান, আর এটাই হলো মাহে রমজানে মানুষের পরম লক্ষ্য। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেছেন, 'যে ব্যক্তি আহার করে (আল্লাহর) শোকর করে, তার মর্যাদা ধৈর্যশীল রোজাদারের সমপরিমাণ।' (সহীহ বুখারি)
তাবুক যুদ্ধ থেকে মদিনায় ফেরার পর হযরত নবী করীম (সা.)-এর সাহবায়ে কেরামের উদ্দেশে বলেন- 'রাজা'আনা মিনাল জিহাদিল আছগর ইলা জিহাদিল আকবর' -আমরা ছোট জিহাদ হতে বড় জিহাদে ফিরে এসেছি। এ হাদিসে প্রকাশ্য শত্রু অর্থাৎ কাফির মুশরিকদের সঙ্গে লড়াই করাকে ছোট জিহাদ বলা হয়েছে এবং নফস ও তার সহযোগী শয়তানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও সাধনাকে জিহাদে আকবর নামে অভিহিত করা হয়েছে। কুরআন মজীদের বিভিন্ন আয়াতেও এই জিহাদের হুকুম রয়েছে। সূরা হজের ৭৮ নং আয়াতের প্রথমাংশে আল্লাহ্পাক ইরশাদ করেন- 'ওয়াজাহেদু ফিল্লাহে হাক্কা জিহাদিহি' তোমরা আল্লাহর জন্য জিহাদ কর, যেভাবে জিহাদ করা উচিত।
তাফসিরে মাআরেফুল ক্বোরআনে এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, জিহাদ ও মোজাহেদা শব্দের অর্থ কোনো লক্ষ্য অর্জনের জন্য পূর্ণ শক্তি নিয়োগ করা এবং এজন্য কষ্ট স্বীকার করা। কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও মুসলমানরা তাদের কথা, কর্ম ও সর্বপ্রকার সম্ভাব্য শক্তি ব্যয় করে। তাই এই যুদ্ধকে জিহাদ বলা হয়। 'হাক্কা জিহাদিহি' বা যেভাবে জিহাদ করা উচিত এ উক্তির অর্থ সম্পূর্ণ আল্লাহর ওয়াস্তে জিহাদ করা। তাতে জাগতিক নাম, যশ ও গনিমতের অর্থলাভের লালসা না থাকা চাই। হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মুবারক বলেন, এ স্থলে জিহাদ বলতে নিজ প্রবৃত্তি (নফস) ও অন্যায় কামনা-বাসনার বিরুদ্ধে জিহাদ করা বুঝানো হয়েছে। এবং এটাই 'হাক্কা জিহাদিহি' অর্থাৎ যথাযোগ্য জিহাদ। ইমাম বগভী (রহ.) প্রমুখ এই উক্তির সমর্থনে একটি হাদিস ও হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, একবার সাহাবায়ে কেরামের একটি দল কাফিরদের বিরুদ্ধে অভিযান শেষে ফিরে এলে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বললেন- তোমরা ছোট জিহাদ থেকে বড় জিহাদের দিকে চমৎকারভাবে ফিরে এসেছ। প্রবৃত্তির অন্যায় বাসনা কামনার বিরুদ্ধে এই জিহাদ এখনো অব্যাহত রয়েছে।
তাফসিরে মাযহারীতে এই তাফসীর অবলম্বনে ওই আয়াত থেকে একটি তত্ত্ব উদ্ঘাটন করা হয়েছে। তা এই যে, সাহাবায়ে কেরাম যখন কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদরত ছিলেন প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ তখনও চালু ছিল; কিন্তু হাদিসে একে ফিরে আসার পরে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে ইঙ্গিত আছে যে প্রবৃত্তির বাসনার বিরুদ্ধে জিহাদ যদিও রণক্ষেত্রে অব্যাহত ছিল; কিন্তু স্বভাবতই এই জিহাদ শায়খে কামেলের সংসর্গলাভের ওপর নির্ভরশীল। তাই জিহাদ থেকে প্রত্যাবর্তন ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খিদমতে উপস্থিতির পরই তা শুরু হয়েছে।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত