এশিয়ান কাপের ইতিহাস গড়ে নারী ফুটবল দলকে মধ্যরাতে বাফুফের সংবর্ধনা
কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনায় হরিলুট
ধানের দাম অপ্রত্যাশিতভাবে কমে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। খাদের কিনারে পড়ে যাওয়া কৃষকদের এ বছর উৎপাদন খরচই উঠছে না। আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ধান চাষের বিকল্প ভাবছেন। এ অবস্থায় তারা একবার ধানচাষে বিমুখ হলে তা পুরো কৃষির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। এতে সরকারের চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা যেমন ব্যাহত হবেÑ তেমনি দেশে খাদ্য ঘাটতির শঙ্কাও বাড়বে।
এ দিকে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনা নিয়ে হরিলুট চলছে। শুরু থেকেই ক্ষমতাসীনদের কবজায় চলে গেছে ধান সংগ্রহ অভিযান। শুধু সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতারাই ধান সরবরাহ করতে পারছেন। ধান বেচার সিøপও থাকছে তাদের হাতেই। তারা কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে সরকারি গুদামে বেশি দামে বিক্রি করছেন। তাই সরকারের ধান কেনায় কৃষক নয়, আওয়ামী লীগের নেতারাই বেশি লাভবান হচ্ছেন। ধান-চাল সংগ্রহ নীতিমালা পরিবর্তন না হলে সরকারের এ সহায়তা কৃষকের কাছে পৌঁছাবে না।
এমনটা আশঙ্কা করে দেশের কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কৃষির এ অবস্থা থেকে উত্তরণে লক্ষ্যে প্রথমেই চালের উৎপাদন খরচ কমানোর দিকে নজর দিতে হবে। কৃষি শ্রমিকের ব্যবহার কমিয়ে কৃষিকে আধুনিকীকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ ও যান্ত্রিকীকরণে নিয়ে যেতে হবে। কৃষি উৎপাদনের বড় একটা খরচ হচ্ছে কৃষি শ্রমিক। ধান কাটার মওসুমে কৃষি শ্রমিকের সঙ্কট চরম আকার ধারণ করে। শুধু ধান কাটতেই প্রতি মণে ১০০ টাকারও বেশি খরচ বেড়ে যায়। ফলে এ পরিস্থিতিতে কৃষকের জন্য ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হলে সরকারের উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ধান কেনা এবং চাহিদা ও উৎপাদনের সুস্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি। একই সাথে কৃষকের চাষের খরচ কমাতে আরো বেশি যান্ত্রিকীকরণ এবং সমবায় ভিত্তিতে চাষাবাদ করার বিকল্প নেই।
এ বছর এক বিঘা বোরো জমি চাষ করতে কৃষকের খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে একজন কৃষি শ্রমিকের পারিশ্রমিক হিসেবে প্রতিদিন ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে। এ বছর ধান উৎপাদন হয়েছে প্রতি বিঘায় ১৫ থেকে ১৮ মণের মতো। বাজারে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা দরে ধান বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বিঘায় কৃষকের লোকসান চার-ছয় হাজার টাকা। বাজারে ধানের দাম অপ্রত্যাশিতভাবে কমে যাওয়ার কারণে কৃষকরা বিপাকে পড়ায় সরকারও বিব্রত। সরকারের ব্যাপক অর্জনের পরও কোথায় যেন ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। সরকারের নানামুখী কর্মপরিকল্পনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফোটার কথা, অথচ তাদের মুখে হাসি নেই। কৃষকরা বলছেন, উৎপাদন খরচই উঠছে না। কৃষকের এ সমস্যাটি এক দিনের বা কোনো এক বছরের নয়। প্রায়ই এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয় কৃষককে। কিন্তু এর স্থায়ী সমাধানের কোনো উপায় খুঁজে এখনো বের করতে পারেনি সরকার। সঙ্কট হলেই শুধু এ নিয়ে নানামুখী উদ্যোগের কথা বলা হয়, আর সঙ্কট কেটে গেলে বা সময় পার হলেই সেসব উদ্যোগ সেই তিমিরেই থেকে যায়।
এ দিকে ধানের দরপতন ঠেকাতে গত মাসের ২৬ তারিখে সরকারিভাবে ধান-চাল কেনা শুরুর কথা থাকলেও তা গত সপ্তাহে গড়ায়। যা চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার বোরো মওসুমে সাড়ে ১২ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহ করা হবে। কিন্তু অভিযানের শুরু থেকেই ক্ষমতাসীনদের কবজায় চলে যায় ধান সংগ্রহ অভিযান। শুধু সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতারাই ধান সরবরাহ করতে পারছেন। ধান বেচার সিøপও থাকছে তাদের হাতেই। বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। নেতারাও কৃষকদের কাছ থেকে ওই দামে ধান কিনছেন। সেই ধান সরকারি গুদামে সরবরাহ করে তারা প্রতিমণে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। অনেক জেলা-উপজেলায় স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ধান-বাণিজ্য ও ধানের সিøপ বিক্রির টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে অন্তর্কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে।
খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের চাপে তাদের কাছ থেকে ধান নিতে তারা বাধ্য হন। সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে রাজনৈতিক প্রভাব থাকার কথা স্বীকার করে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। তা ছাড়া সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান মনিটর করে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানিয়েছেন, ধান কেনার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব বরদাশত করা হবে না। প্রকৃত কৃষক ছাড়া অন্য কারও কাছ থেকে ধান না কেনার জন্য প্রশাসনকে কড়াভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দলীয় মধ্যস্বত্বভোগীরা যেন ফায়দা লুটতে না পারে, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনা তদারকির জন্য মনিটরিং টিম কাজ করছে। পূর্বঘোষণা ছাড়াই তারা বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করছে। ধান ও চালের মজুদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশে ২০০ স্থানে প্যাডি সাইলো স্থাপন করা হবে। প্যাডি সাইলো নির্মাণ করা হলে কৃষক সেখানে নিজের ধান শুকিয়ে বিক্রি করতে পারবেন।
শেয়ার করুন