ইউনূস সরকারের মেয়াদ কতদিন?
শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নিয়েছে গত ৮ আগস্ট। ইতিমধ্যে উপদেষ্টা পরিষদে ১৭ জন অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন। বাইরে থেকে যুক্ত হয়েছেন আরও অনেক কর্মকর্তা। পূর্ববর্তী সরকার থেকে ইতিমধ্যে অনেককে বিদায় বা চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তালিকায় আরও অনেকের নাম আছে বলে জানা গেছে। প্রশাসনে রদবদল চলছে ব্যাপকভাবে।
ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা এবং তাঁর একাধিক মন্ত্রী ও ঘনিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। আরও মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানা গেছে। গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হয়েছে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানকে। আদালত তাঁদের ১০ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
এদিকে জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার উত্তাল বিক্ষোভ দমনে সংঘঠিত হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতার তদন্ত করবে জাতিসংঘ। শিগগির একটি তদন্ত দল গঠন করে তাকে বাংলাদেশে পাঠাবে জাতিসংঘ। আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সহিংসতার তদন্ত জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে করার চেষ্টা চলছে। জাতিসংঘ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিচারের সত্যিকারের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে দেশের তদন্ত দল কাজ করবে। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, যাঁরা আদেশ দিয়েছেন, বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব।
বর্তমান সরকার পূর্বতন সরকারের প্রশাসনকে সরিয়ে নতুন করে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছে। পাশাপাশি আগের সরকারের নানা অপকর্মের সাথে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়টিও বিশাল কাজ। এর সাথে যুক্ত হয়েছে সরকারের দৈনন্দিন কাজ পরিচালনা।
এসবের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আসলে কতদিন থাকবে বা থাকতে চায়? এই প্রশ্নের উত্তর কেউ জানে না। অথচ প্রথম দিন থেকেই সবাই এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে। যদিও বাংলাদেশের সংবিধানের কোনো আইনে এই সরকার এবং এর মেয়াদ সম্পর্কে কিছুই বলা নেই। যে কারণে সরকারের মেয়াদ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলছেন, “নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার করার জন্য যতদিন থাকার দরকার হবে, অন্তর্বর্তী সরকার ততদিন থাকবে।” অর্থাৎ আইন উপদেষ্টাও বিষয়টি নিয়ে পরিস্কার নন। কারণ কাজটি জটিল ও সময় সাপেক্ষ।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বক্তব্য, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কতদিন, এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যেহেতু গণঅভ্যুত্থানের ভিত্তিতে গঠিত একটি সরকার এবং অনেকগুলো সংস্কারের কথা আমরা বলেছি-সেগুলো আমাদেরকে করতে হবে।’
মেয়াদ যতদিনই হোক এক পর্যায়ে এসে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেটা যত দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্ভব, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি সুন্দর সুশৃঙ্খল ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে আসার মাধ্যমে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে এই সরকারের মেয়াদ শেষ করব।’
গত সোমবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে বিশেষ পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে তার সময়সীমা নির্ধারণ করা সম্ভব নয় বলে মত দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে সাধারণ নির্বাচনের পর গঠিত সংসদে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়া হবে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়সীমা তারা নিজেরাই নির্ধারণ করবে।
ইউনূস সরকারে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের প্রশ্নটি উঠে এসেছে জাতিসংঘের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে। জাতিসংঘ মহাসচিবের উপমুখপাত্র ফারহান হক গত সোমবার এ বিষয়ে বলেন, জাতিসংঘ আশা করে, গণতান্ত্রিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় দ্রুত একটি সময়সীমা জানানো হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি। আশা করছি, সরকার গঠনের জন্য একটি উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। গণতান্ত্রিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় দ্রুত একটি সময়সীমা জানানো হবে।’
বিশিষ্ট আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বিবিসি বাংলাকে বলেন, “যখন ওনাদের মনে হবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পরিবেশ তৈরি হয়েছে তখন ওনারা নির্বাচনের ঘোষণা দেবেন। তার আগে এই সরকারের মেয়াদ নিয়ে কোনো ধারণা পাওয়া যাবে না।”\
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন