সরকার পতনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফর
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে এসেছে। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করা এবং অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে বাংলাদেশের পাশে থাকার বার্তা দেওয়া দেশটির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ঢাকার আলোচনা হবে খোলামনে।যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের সহকারী মন্ত্রী ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্র দপ্তরের সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লু ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার (ইউএসএআইডি) উপ-সহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কর ও যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ রয়েছেন। ১৪ সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল ও বিকেলে পৃথক সময়ে তারা বাংলাদেশে এসে পৌঁছেন।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন যমুনায় ১৫ সেপ্টেম্বর রোববার বৈঠক করে মার্কিন প্রতিনিধিদলটি। এ সময় সরকারের নেওয়া সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, দ্রুততার সঙ্গে ঝুঁকির মুখে থাকা অর্থনীতি পুনর্গঠন, আর্থিক খাত, নির্বাচনী ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন ও পুলিশে সংস্কারের পাশাপাশি সংবিধান তৈরির প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা দরকার। ড. . ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিদলের ভাষ্য তুলে ধরে ঢাকায় দেশটির দূতাবাস তাদের ফেসবুক পেজে বলেছে, ‘বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রতিষ্ঠান গঠন ও উন্নয়ন সহযোগিতার বিষয়ে নিশ্চিত করেছে আমাদের প্রতিনিধিদল। যেহেতু বাংলাদেশ আরও ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে চাইছে, যুক্তরাষ্ট্র সে প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে প্রস্তুত।’ বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত জুলাই ও আগস্ট মাসে আঁকা গ্রাফিতির ছবিসংবলিত একটি আর্টবুক মার্কিন প্রতিনিধিদলকে উপহার দেন ড. ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়। পরে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানান, পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে মার্কিন সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দেশে আর্থিক খাত ও কর কাঠামোয় সংস্কার, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, রপ্তানি বহুমুখী করা ও বাজার উন্নয়নসহ সার্বিক ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা নিয়ে কথা হয়েছে। তাদের কাছে অর্থসহায়তাও চাওয়া হয়েছে। মার্কিন প্রতিনিধিরা এসব বিষয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা চেয়েছেন। আর এই বৈঠকের পর প্রতিনিধিদলের তরফ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের নতুন উদ্যমে প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র পৃষ্ঠপোষকতা করবে। আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও টেকসই উন্নয়নকে ঘিরে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে সহায়তার বিষয়গুলো আলোচনায় গুরুত্ব পায়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনও। এ বৈঠকের পর বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অংশীদার’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রতিনিধিদল বলেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণের পাশাপাশি এখানে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনও। এ বৈঠকের পর বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘অংশীদার’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রতিনিধিদল বলেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণের পাশাপাশি এখানে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর তাঁর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। এ ছাড়া পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত দুটি আলাদা বৈঠকে নেতৃত্ব দেন ব্রেন্ট নেইম্যান ও ডোনাল্ড লু। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাণিজ্য ও শ্রমসচিবসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা মার্কিন প্রতিনিধিদলের সদস্যদের সঙ্গে আরও দুটি বৈঠকে অংশ নেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। আর ডোনাল্ড লু এবার ঢাকায় এসেছেন দিল্লি হয়ে। এমন প্রেক্ষাপটে ভারতের তোলা কোনো বিষয় নিয়ে বৈঠকে কথা হয়েছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন ও দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন আছে। ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বিষয় আলোচনার জন্য এ মিশনগুলো ভালো মাধ্যম। প্রতিবেশী একটি দেশ বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ সহযোগিতা চেয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, বাংলাদেশ এ ধরনের কোনো আলোচনায় কখনো যায়নি। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার মাসখানেক পরই অনুষ্ঠিত এ বৈঠকগুলো যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতার ভিত্তি হিসেবে দেখছেন স্থানীয় কূটনীতিকেরা।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন