আপডেট :

        শনিবার খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

        বৃষ্টি কামনায় ব্যাঙের বিয়ে নিয়ে প্রচলিত আছে নানা গল্পকথা

        ১৯৩ জন নারী ও কন্যা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ

        কংগ্রেসকে পাকিস্তানের ‘মুরিদ’ বলে অভিযুক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

        নোবেল জয়ী বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস

        নাফ নদীতে মাছ শিকাররত ১০জন বাংলাদেশি জেলেকে অপহরণ

        টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষে বিশ্বকাপের উদ্দেশে যাত্রা করবে টাইগাররা

        রাজধানীতে সন্ধ্যার মধ্যে বৃষ্টির পূর্বাভাস

        রাঙ্গামাটিতে স্বস্তির বৃষ্টি নামলেও এসময় বজ্রপাতে ৩জন নিহত

        কেউ কেউ আন্দোলন করে যাচ্ছে ফিজিক্যালি এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে, আমরা কাউকে বাধা দিচ্ছি না

        কেউ কেউ আন্দোলন করে যাচ্ছে ফিজিক্যালি এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে, আমরা কাউকে বাধা দিচ্ছি না

        অতি বামদের কাছে আমার প্রশ্ন, তারা আমাকে উৎখাত করে কাকে ক্ষমতায় আনবে?

        মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী

        শ্রম অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের অগ্রগতির পর্যায়

        কক্সবাজারের পেকুয়ায় বজ্রপাতে নিহত হলেন দিদারুল ইসলাম

        ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে

        ফিরছে নিহত আট বাংলাদেশির কফিনবন্দি লাশ

        বন্যহাতির আক্রমণে কিশোরের মৃত্যু হলো

        চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংডং প্রদেশে একটি মহাসড়কের অংশ ধস

        চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংডং প্রদেশে একটি মহাসড়কের অংশ ধস

স্মরণ : সমাজসেবী ও শিক্ষাবিদ হালিমা খাতুন

স্মরণ : সমাজসেবী ও শিক্ষাবিদ হালিমা খাতুন

অপরূপ শ্যামলিমায় শীতলক্ষ্যার তীরে অবস্হিত 'প্রাচ্যের ড্যান্ডি' বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জ। যুগযুগান্তরের ঐতিহাসিক পটভূমিতে শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সাংবাদিকতায় নারায়ণগঞ্জের রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য ও গৌবরগাঁথা। সেসব গৌরবজ্জ্বল ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক এই জেলার স্মরণীয় বরণীয় ব্যক্তিবর্গের অন্যতম হলেন বিশিষ্ট সমাজসেবী ও শিক্ষাবিদ হালিমা খাতুন।

অনন্য সাধারণ গুণাবলী সম্পন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারিণী ছিলেন শিক্ষাবিদ হালিমা খাতুন। তিনি ছিলেন একজন সত্যিকারের 'মানুষ গড়ার কারিগর'; ছাত্রজীবন থেকেই তিনি বিভিন্ন জনহিতকর, নারী শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বহুমাত্রিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানকালে শিক্ষা ব্যবস্হার ব্যাপক প্রসার ঘটলেও স্বাধীনতাপূর্ব কিংবা তারও আগের পরিস্হিতি এমনটা ছিলো না, বিশেষকরে জেলা পর্যায়ে নারী শিক্ষার ঘাটতি কাটিয়ে তোলার জন্য হালিমা খাতুনের অবদান অবিস্মরণীয়। নারায়ণগঞ্জের শিক্ষা প্রসারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাজে নারীদের অধিকার ও সুশিক্ষা, কর্মক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ, শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। পদে পদে এসেছে বাধা-বিপত্তি, তবুও দমে যাননি; আত্মবিশ্বাস আর বিজয়ের প্রেরণা নিয়ে লড়াই করে গেছেন আজীবন।  তিনি ধার্মিক, দয়ালু, সৎ, কর্মঠ, সজ্জন ও স্পষ্টভাষী মানুষ হিসেবে সমাজে পরিচিত ছিলেন।  কোন প্রকার অন্যায় ও দুর্নীতিকে তিনি কখনও প্রশ্রয় দেননি।

শিক্ষাবিদ হালিমা খাতুন প্রকৃতিপ্রেমী ছিলেন, গাছপালা ভালোবাসতেন, রন্ধন শিল্পেও তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তার বাড়ীতে নিজ হাতে গড়া বাগানে তিনি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে প্রতি শীতে বনভোজনের আয়োজন করতেন। তিনি কর্মজীবনে সুদীর্ঘকাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিষ্ঠা, সুনাম ও সাফল্যের সাথে শিক্ষকতা করেছেন। সর্বশেষ তিনি চাষাঢ়া আদর্শ সরঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে(আইন কলেজ সংলগ্ন) কর্মরত অবস্হায় অবসর গ্রহণ করেন। বদলির চাকুরীর সুবাদে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাদান করেছেন জনপ্রিয় এ শিক্ষাবিদ। আর এজন্যই তার ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ব্যাপক, যারা ছড়িয়ে আছেন জেলা ও দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে ও স্তরে। একজন সমাজসেবী ও সমাজসংস্কারক হিসেবে তিনি দেশে বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ জেলার মানুষের মনে চির অম্লান হয়ে থাকবেন। সমগ্র পৃথিবীতে আজ ছড়িয়ে আছে তার মহান জ্ঞানের উত্তরসূ্রিরা। তার ছাত্রদের মধ্য দিয়ে চিরদিন বয়ে যাবে তার জ্ঞানের ধ্বজা। শিক্ষকের মৃ্ত্যু রয়েছে, কিন্তু শিক্ষার মৃ্ত্যু নেই।

১৯৪৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারী নারায়ণগঞ্জ জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন বরেণ্য শিক্ষাবিদ হালিমা খাতুন। তার পিতা মরহুম মাওলা বক্স মিয়া সাহেব ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলার তৎকালীন সময়ের অন্যতম ধনী ব্যবসায়ী ও দানশীল ব্যাক্তি। হালিমা খাতুনের মাতার নাম ছিল আলিমুন্নিসা। জনাব মাওলা বক্স মিয়া ছিলেন দূরদর্শী ও দক্ষ ব্যবসায়ী, তিনি ছিলেন নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জের তেলের পাইকার আমদানিকারকদের একজন, এছাড়াও ঢাকার কেরাণীগঞ্জের পানগাঁও এলাকার বৃহৎ ৫টি ইট খোলা'সহ নানাবিধ ব্যবসাবাণিজ্য এবং নারায়ণগঞ্জ শহরের নিউ মেট্রো সিনেমা হলের মালিক ছিলেন মাওলা বক্স মিয়া। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে নিজের একাধিক দালানকোঠা থাকলেও মাওলা বক্স মিয়া পরিবারসহ বসবাস করতেন নারায়ণগঞ্জ শহরের আমলাপাড়ার কেবি সাহা রোডের 'মাওলা নিবাস' নামক বাড়িটিতে। মূলত: তাকে কেন্দ্র করেই সেসময় এ এলাকায় গড়ে উঠেছিলো 'মোল্লা বাড়ি'র ব্যপ্তি। ছোটবেলায় পরিবারেই প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন হালিমা খাতুন। পরে নারায়াণগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও মর্গ্যান উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক স্তরের লেখাপড়া শেষ করে হালিমা খাতুন নারায়ণগঞ্জ মহিলা কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে আই.এ. পাশ করেন। পরে নারায়ণগঞ্জ সরকারী তোলারাম কলেজের অধীনে বি.এ.(সম্মান) ডিগ্রী লাভ করেন।

সমাজসেবী ও শিক্ষাবিদ হালিমা খাতুনেরা ছিলেন ছয় ভাইবোন। হালিমা খাতুন ছিলেন পিতামাতার তৃতীয় সন্তান। বড় বোন মরহুমা হাসনা বানু তুলা ছিলেন একজন শিক্ষাণুরাগী ও আধুনিক মানুষ। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্যতম অগ্রগণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, নারী মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠক ছিলেন। কর্মময় জীবনে তিনি পুরান ঢাকার জুবিলী স্কুল ও বদরুননেসা কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। হালিমা খাতুনের বড় ভাই মরহুম সাংবাদিক মুজিবুর রহমান বাদল ছিলেন নারায়নগঞ্জ জেলার মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও সিনিয়র বুদ্ধিজীবী। তিনি নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের আজীবন সদস্য ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে 'দৈনিক সংবাদ' পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন এছাড়াও তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রকাশিত সর্বপ্রথম দৈনিক পত্রিকা 'সকাল বার্তা'র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। শিক্ষাবিদ হালিমা খাতুনের ছোট ভাই আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান ছাত্রজীবনে যেমন মেধাবী ছাত্র ছিলেন, তেমনি পিতার মতো তিনিও একজন সফল ব্যবসায়ী। নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সভাপতি ছিলেন একাধিকবার, এছাড়াও রপ্তানিকারক বস্ত্র ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএ (BKMEA)-এর সহসভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। হালিমা খাতুনের আরেক ছোট ভাই আলহাজ্ব ফয়েজুর রহমান ছিলেন নারায়ণগঞ্জের তুখোঁড় ছাত্রনেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সংগঠক ও ব্যবসায়ী। তিনি দু'বার ছাত্রলীগের প্যানেলে সরকারি তোলারাম কলেজের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। হালিমা খাতুনের সর্বকনিষ্ঠ বোনের নাম মরহুমা নাসিমা খাতুন।

শিক্ষাবিদ হালিমা খাতুনের পারিবারিক জীবন ছিল নান্দনিক; ১৯৬৯ সালে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়ার প্রখ্যাত 'খান বাড়ি'র মুরুব্বী বড় মুন্সী এবারত আলী খাঁ সাহেবের পুত্রের সাথে তার বিবাহ হয়। তার স্বামী মরহুম আলহাজ্ব সামসুর রহমান খান ছিলেন রূপালী ব্যাংকের (Rupali Bank Ltd.) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। শিক্ষাবিদ হালিমা খাতুন তিন সন্তানের জননী; বড় কণ্যা ফাহমিদা রহমান মুনমুন ছাত্রজীবনে সুগায়িকা ও শিল্পী হিসাবে সুনাম করলেও পরবর্তীতে শিক্ষাজীবন শেষে মায়ের আদর্শ লালন করে শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন, তিনি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের এবিসি ইন্টা: স্কুলে (ABC Int. School) কর্মরত রয়েছেন। বড় পুত্র হাছিবুর রহমান খান সজীব যিনি ৯০'র দশকে নারায়ণগঞ্জের ব্যান্ড মিউজিকতারকা হিসাবে সুখ্যাতি পেয়েছিলেন। তিনি 'পার্লস্‌' (Pearls) ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও লিড ভোকালিস্ট ছিলেন, এছাড়াও তিনি 'স্টেপস্‌' (Steps) ও 'রক বার্ডস্‌' (Rock Birds) ব্যান্ডের সাথে অসংখ্য মিউজিক কম্পোজ করেছেন। বর্তমানে তিনি রপ্তানিমূলক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে কর্মরত। সর্বকনিষ্ঠ পুত্র মারুফ খান তন্ময় ছাত্রজীবনে জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লেও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলেসে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। বিশিষ্ট সমাজসংস্কারক ও শিক্ষাবিদ হালিমা খাতুন ডায়বেটিকস ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে ইন্তেকালের আগে নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজ সংলগ্ন আল্লামা ইকবাল রোডে তার স্বামীর বাড়ি 'খান মঞ্জিলে'ই বসবাস করতেন। ১৯৯৯ সালের ৩ ডিসেম্বর, মহান এই শিক্ষক আমাদের সবাইকে কাঁদিয়ে পাড়ি জমান 'না ফেরার দেশে'।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত