আপডেট :

        দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার হোম ডিপো থেকে কোটি ডলারের পণ্য চুরি, ১৪ জন গ্রেপ্তার

        ওষুধ নয়, অস্ত্রোপচারও নয়: সহজ হাঁটার কৌশলেই আর্থ্রাইটিস ব্যথা কমাতে সাফল্য বিজ্ঞানীদের

        জাতিসংঘে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক পরিষদ গঠনের উদ্যোগ

        সনাতন ধর্মীয় তীর্থস্থানে উসকানি প্রতিরোধে প্রশাসনকে নির্দেশ

        বিজরীর প্রতিধ্বনি: নজরুলের গানে নারীর স্বাধীনতার স্বর

        পোষা বিড়ালের মায়া: একাকী মুহূর্তে সত্যিকারের সঙ্গী

        পোষা বিড়ালের মায়া: একাকী মুহূর্তে সত্যিকারের সঙ্গী

        মোদি-ট্রাম্পের বন্ধুত্ব ভেঙে পড়ল: 'অত্যন্ত ভয়ংকর' বলে ট্রাম্পের তিরস্কার, ভারতে রাজনৈটিক ঝড়!

        হিজাব নিয়ে বিতর্কে ভিকারুননিসার শিক্ষিকা বরখাস্ত, তদন্তের প্রতিশ্রুতি

        প্রেমের গল্পে নতুন অধ্যায়: টেলর সুইফট-কেলসের বাগদানে উচ্ছ্বাস!

        ডাচ ক্রিকেট দলে নতুন মুখ: সিলেটে বাংলাদেশ সিরিজের জন্য তিন পরিবর্তন

        শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় আজ থেকে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু

        অস্ট্রেলিয়ার সিদ্ধান্তকে 'দুর্বল নেতৃত্বের ফল' বলে আখ্যায়িত করল ইরান

        দক্ষিণ লস এঞ্জেলেসে গুলিবর্ষণে আহত ৫ জন

        ট্রাম্পের ঘোষণা: ওয়াশিংটন ডিসির খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে

        ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাকটনে গাড়ির ভেতরে দুইজনের মরদেহ উদ্ধার

        মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশের জয়: ৩৭% শ্রমিক বাংলাদেশি

        স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ‘কেজিএফ’ অভিনেতা দিনেশ মাঙ্গালোর

        সাকিবের মনের শান্তি: পরিবারের সঙ্গে কাটানো সময়

        বাংলাদেশ ব্যাংক: গর্ভনর নিয়োগে নতুন নিয়ম, রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার

‘আই হেট পলিটিকস’

‘আই হেট পলিটিকস’

সরকারি দপ্তরে সেবা পেতে হয়রানির অভিজ্ঞতা সম্প্রতি বড়ই হতাশ করেছে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের এক পরামর্শককে। দেশে–বিদেশে শিক্ষা নেওয়া এই তরুণী ভাবতে পারছেন না কেন রাষ্ট্রীয় সিস্টেম এখনো ডিজিটাল গতিতে কাজ করে না!

তাঁর প্রজন্মের কারও কারও আরও প্রশ্ন, কোন যুক্তিতে পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরে তাঁদের বাস করতেই হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা এবং কর্মক্ষেত্র নিয়ে তাঁদের ধারণা যথেষ্টই হতাশাব্যঞ্জক। এরই প্রতিধ্বনি শোনা যায় বিদেশমুখী মানুষের মিছিলে।

দেশের ভেতরের এই অবস্থা বদলাতে কী কী রাজনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা বা কেমন আন্দোলন হওয়া উচিত, সে আলোচনায় তেমন আগ্রহ নেই তাঁদের। এই ‘আই হেট পলিটিকস’ একটি সামাজিক প্রপঞ্চ, যেখানে ঘোষণাকারী স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিচ্ছেন পরিবর্তন আনার নিজস্ব কর্তৃত্ব, তা-ও আবার অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিদের হাতে! কেন রাজনীতি ঘৃণা করেন, সে প্রশ্নও তাঁদের করা হয় না; কেন নাগরিকদের প্রাপ্য কল্যাণ রাষ্ট্র, সে বিতর্ক দূরে থাক।

পূর্ববর্তী অর্থাৎ মিলেনিয়াল (১৯৮১-১৯৯৬) বা ‘ওয়াই’ প্রজন্মের ছাত্রদের আন্দোলন ছিল গোষ্ঠীস্বার্থে—সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর কর (ভ্যাট) প্রত্যাহারের দাবিতে।
এর আগের প্রজন্ম, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ‘বেবি বুমার্স’ (১৯৪৬-১৯৬৪) এবং ‘এক্স’ (১৯৬৫-১৯৮০)—উভয়েরই আন্দোলন–সংগ্রামের গৌরবময় ঐতিহ্য রয়েছে। তাদেরই সুবিধাভোগী কেউ যদি আজকাল রাস্তাঘাট, বাজার, বেসরকারি বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম সবার সামনে দেখেই ফেলেন, ফেসবুকে তাঁরা লিখে দেন দুটি চরণ: ‘এই সব কী হচ্ছে! এটা কি দেখার কেউ নেই!’

যেন ভিন্ন গ্রহের বিজাতীয় কোনো অবতার এসে ‘এই সব’ ঠিক করে দিয়ে যাবেন। যেহেতু একটা সুশীল ইমেজ ধরে রাখতে হবে আর কর্তাকেও খ্যাপানো যাবে না, তাই ওভাবে ওইটুকু বলা, আর কী!


ষাটের দশকের রাষ্ট্রচিন্তার বয়ান দৃশ্যত ছাড়িয়ে যেত ব্যক্তির সংকীর্ণ স্বার্থকে, ঠিক যেন এখনকার উল্টো। প্রেসিডেন্ট হিসেবে উদ্বোধনী ভাষণে জন এফ কেনেডি, কবি কাহলিল জিবরানকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘জিজ্ঞাসা করবেন না আপনার দেশ আপনার জন্য কী করেছে; আপনার দেশের জন্য আপনি কী করতে পারেন, তা জিজ্ঞাসা করুন।’ এই দেশের মালিকানা থাকার কথা ‘আপনার’ মতো কোটি জনতার, কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী গুটিকয়েকের নয়।

‘এক্স’ প্রজন্মের শেষ ভাগ এবং ‘ওয়াই’-এর বিরাট অংশ, দুর্ভাগ্যজনকভাবে হয়ে পড়ে বিরাজনীতিকীকরণ খেলার অগ্রবর্তী ঘুঁটি। ‘জেড’ প্রজন্ম বা ‘জেন জি’–এর নিষ্পাপ অংশীদার। এই ত্রয়ীর অনুগত ‘ছেলেমেয়েরা’ গ্যাজেট, ইটিং আউট, চাকরি ও লাইফস্টাইল চক্রে ব্যস্ত—বড় স্বপ্ন দেখার দরকার কী তাদের!

এই প্রক্রিয়ায় কারসাজি অদৃশ্য হাতের আর চালকের দায় মূলত ‘বেবি বুমার্স’দের (এবং ‘এক্স’-এর ক্ষুদ্র কিন্তু ক্ষমতাবান অংশের)। আর এই চার প্রজন্মের রাজনৈতিক ভাবনা ও কর্মের একটি পরীক্ষাগার এখন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ‘বুয়েট’।

বিরাজনীতিকীকরণ এমন এক পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে, যেখানে ত্যাগী রাজনীতিবিদেরা পর্যন্ত জনগণের সক্রিয় সমর্থন পেতে ধুঁকছেন। শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ ভোটাধিকার দাবি করে কিন্তু মিছিলে যেতে লজ্জা পায়। শিক্ষিতরা দুর্নীতির অবসান চাইলেও প্রতিবাদ করতে অনিচ্ছুক। টাকাওয়ালাদের প্রত্যাশা সমৃদ্ধিশালী জীবন, তবে তার সামাজিক মূল্য দিতে নারাজ তারা। মধ্যবিত্ত নিরাপত্তা ও স্থিতি চায়, প্রধানত পরিবারের জন্য।
২০১৯ সালে আবরার ফাহাদ ছাত্রলীগের ক্যাডারদের হাতে খুন হওয়ার পর বুয়েট কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে। সম্প্রতি ছাত্রলীগের নেতারা ক্যাম্পাসে মহড়া দিলে ‘সাধারণ ছাত্র’রা প্রতিবাদ করেন। অনেকেই ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধ রাখার পক্ষে মত দেন। এই বিতর্কে ছাত্ররাজনীতি চালুর পক্ষে রুলিং দেন হাইকোর্ট। যদিও অধিকাংশ মতামতদানকারী ভুলে যান ২০১৯ সালের ঘটনাটি ছিল একটি হত্যাকাণ্ড, সন্ত্রাসের বিষফল। সে সময় ভিন্ন মতাদর্শের সংগঠনের সক্রিয় উপস্থিতি ভিন্ন রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রমাণ করতে পারত।

অবশ্য ছাত্ররাজনীতির অপমৃত্যু ঘটেছে অনেক আগেই। কয়েক দশক ধরে দেশের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতো তরুণ নেতৃত্বের বিকাশের উদ্দেশ্যে। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝির পর সেই নির্বাচন আর খুব একটা অনুষ্ঠিত হয়নি। সেই সঙ্গে রুদ্ধ হয়ে যায় রাজনৈতিক সহাবস্থানের পথও। ক্যাম্পাসগুলো পরিণত হয় ক্ষমতাসীন দলের লেজুড় সংগঠনের একচেটিয়া রাজত্বে।


ছাত্ররাজনীতি শুধু ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতাসংগ্রাম এবং গণতান্ত্রিক জাগরণেই ভূমিকা রাখেনি, মিছিলের আওয়াজ দুর্নীতিবাজ, অন্যায়কারীদের নিরন্তর চাপে রেখেছে। ১৯৯১ থেকে প্রায় দুই দশক সংসদে কার্যকর বিরোধী দল থাকায় ক্ষমতা প্রয়োগে বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের রাষ্ট্রীয় প্ল্যাটফর্ম ছিল। গণমাধ্যমেও তা প্রকাশের অধিকার ছিল৷

এখন ‘ওয়াই’-‘জি’ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে দরকার ছিল যে রাজনীতি, তা মারা গেছে সবার চোখের সামনেই। ফলে বহুত্ববাদী সমাজ এবং শাসকদের কৈফিয়ত এখন অর্ধমৃত স্বপ্নমাত্র।

শাসনব্যবস্থা থেকে বৈচিত্র্যময় রাজনীতিসহ জনসাধারণকে বিচ্ছিন্ন করার এই প্রক্রিয়াকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলেছেন বিরাজনীতিকীকরণ। বাইরের ইশারায় এর বউনি হয় রাজনীতিকদের একটি অংশ এবং সামরিক–বেসামরিক আমলা ও ব্যবসায়িক অলিগার্কির মাধ্যমে। ফ্যাসিজম প্রসঙ্গে বার্ট্রান্ড রাসেল যেমন বলেছিলেন, প্রথমে তারা ‘মুগ্ধ করে বোকাদেরকে’, এরপর তারা ‘বুদ্ধিমানদের মুখে টুনা (বা ঠুসি) পরিয়ে দেয়’।

বিরাজনীতিকীকরণ এমন এক পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে, যেখানে ত্যাগী রাজনীতিবিদেরা পর্যন্ত জনগণের সক্রিয় সমর্থন পেতে ধুঁকছেন। শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ ভোটাধিকার দাবি করে কিন্তু মিছিলে যেতে লজ্জা পায়। শিক্ষিতরা দুর্নীতির অবসান চাইলেও প্রতিবাদ করতে অনিচ্ছুক। টাকাওয়ালাদের প্রত্যাশা সমৃদ্ধিশালী জীবন, তবে তার সামাজিক মূল্য দিতে নারাজ তারা। মধ্যবিত্ত নিরাপত্তা ও স্থিতি চায়, প্রধানত পরিবারের জন্য।


অধিক ভুক্তভোগীরা বুঝতে পারছেন রাজনীতিহীন সমাজে ক্ষমতাবলয়ের বাইরে থাকা মানুষের স্বপ্ন পূরণের সুযোগ কতটাই সীমিত। তাই ‘আই হেট পলিটিকস’ বলে গালি দিলে আপনার লাভ নেই, অন্য কারও আছে।

আপনি যদি সম্মিলিত ভাগ্য পরিবর্তনে উদ্যোগী হোন, সেটিও হবে আরেক রাজনীতি। তখন তো আপনার প্রয়োজন হবে পূর্বসূরিদের ভুল (এবং অর্জন) থেকে শিক্ষা নেওয়ার। রাজনৈতিক ইতিহাসও জানতে হবে, তা আপনি যে প্রজন্মের মানুষই হোন। আপনার বসবাস করার রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে হলে দরকার আপনি যাকে ঘৃণা করেন, তারই উত্তম রূপ।

আত্মসমালোচনার তাগিদে জাতীয় এবং ছাত্ররাজনীতির একটি করে ঐতিহাসিক ভুলের উদাহরণ দেওয়া যেতেই পারে। ছাত্ররাজনীতির ক্ষেত্রে, একজন নেতা বা কর্মী লেখাপড়া কীভাবে করবেন, সে বিবেচনা বাদ দিয়েই সংগঠনের নেতৃত্বে জড়িয়ে পড়তেন। আর একজন রাজনীতিবিদের পেশা বা আয়ের উৎস কী হবে, সে বিষয়ে তাঁরা ছিলেন বেখবর। ফলে দুর্নীতিপ্রবণ ক্ষমতা এবং অর্থবিত্তের দাপটে তাদের রাজনীতিই অকেজো হয়ে যায়।

রাজনীতির যে ধারাটি আপনি ঘৃণা করছেন, তার বিকল্পটা কী হতে পারে আপনাদের দৃষ্টিতে? তরুণদের অনেকেই তো ‘লিডার’ হতে চান; তাহলে যোগ্যতর নেতৃত্ব নিয়ে হাজির হোন না জনগণের সামনে! আশা করতে চাই নতুনরা উপস্থাপন করবেন ভিন্ন, অনন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। আপনারা অন্য যে সেক্টরেই নেতা হতে চান, রাজনীতি ঠিকঠাক না হলে সহায়ক পরিবেশ ও ব্যবস্থা পাবেন না। এখানে স্বার্থপরতার কোনো স্থান নেই।

এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত