নিউ জার্সির অভিবাসী আটক কেন্দ্র থেকে পালানো ৪ জনের মধ্যে ২ জন পুনরায় গ্রেপ্তার
আসাদের নির্দেশে মার্কিন সাংবাদিক টাইসকে হত্যা: দাবি সাবেক সিরিয়ান সেনা কর্মকর্তার
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
সিরিয়ায় ২০১২ সালে নিখোঁজ হওয়া মার্কিন সাংবাদিক অস্টিন টাইস সম্পর্কে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এনেছে বিবিসির অনুসন্ধান। প্রাক্তন সিরিয়ান সামরিক কমান্ডার মেজর জেনারেল বাসাম আল হাসান দাবি করেছেন যে সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ নিজেই অস্টিন টাইসকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এই দাবি করেছেন এমন ব্যক্তি শুধু আসাদের ঘনিষ্ঠতম সামরিক উপদেষ্টা ছিলেন না, বরং তিনি সিরিয়ার ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্সেস (NDF)-এর চিফ অফ স্টাফ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন—এটি সেই আধাসামরিক বাহিনী, যাদের হাতে ২০১২ সালে টাইস অপহৃত হন বলে বিবিসির তদন্তে প্রকাশ পায়।
অস্টিন টাইস ছিলেন একজন প্রাক্তন মার্কিন মেরিন ক্যাপ্টেন, যিনি ইরাক ও আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন আইন শিক্ষার্থী ছিলেন এবং ২০১২ সালের আগস্টে, মাত্র ৩১তম জন্মদিনের পরই সিরিয়া ছাড়ার সময় দামেস্কের নিকটে নিখোঁজ হন। এতদিন সিরিয়ার সরকার বরাবরই জানিয়ে এসেছে তারা টাইসের কোনো খোঁজ জানে না, কিন্তু এই নতুন তথ্য সেই দাবি ভেঙে দিচ্ছে।
কী বলেছেন বাসাম আল হাসান?
বিবিসি জানায়, ২০২৫ সালের শুরুতে আল হাসান তিনবার মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার (FBI ও CIA) কর্মকর্তাদের সঙ্গে লেবাননে সাক্ষাৎ করেন, যার মধ্যে একটি বৈঠক হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে।
এই বৈঠকে তিনি জানান, টাইসকে হত্যার নির্দেশ আসে সরাসরি প্রেসিডেন্ট আসাদের কাছ থেকে। আল হাসান প্রথমে এই আদেশ পালনে অনীহা প্রকাশ করলেও, শেষ পর্যন্ত আদেশটি কার্যকর করেন বলে দাবি করেন তিনি। তিনি আরও জানান, টাইসের দেহ কোথায় থাকতে পারে, সে বিষয়ে সম্ভাব্য কয়েকটি স্থানের কথাও বলেছেন, যেগুলোর অনুসন্ধান করার পরিকল্পনা চলছে।
তবে পশ্চিমা গোয়েন্দা সূত্রগুলো এই দাবিকে পুরোপুরি নিশ্চিত করছে না। কারণ, আসাদ সরাসরি কোনো হত্যার আদেশ দেন না, বরং নিজের ভূমিকা আড়াল রাখার পদ্ধতি ব্যবহার করেন বলে তাঁরা দাবি করেন।
মায়ের আকুতি ও সংশয়
অস্টিন টাইসের মা ডেবরা টাইস, যিনি ছেলের মুক্তির জন্য বছরের পর বছর ধরে লড়ে যাচ্ছেন, জানিয়েছেন—তিনি লেবাননে গিয়ে আল হাসানের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তিনি বলেন, “আমি শুধু একজন মা হিসেবে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাই, জানতে চাই আমার ছেলের কী হয়েছে।”
তবে তিনি এও মনে করেন, “আল হাসান হয়তো FBI-কে এমন কিছু বলেছেন যা তারা শুনতে চেয়েছিল, যাতে তারা এই মামলাটি বন্ধ করতে পারে।”
কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও অগ্রগতি
একজন প্রাক্তন NDF সদস্য বিবিসিকে বলেন, “টাইস ছিলেন একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক কার্ড, যাঁকে আমেরিকার সঙ্গে দর-কষাকষির জন্য রাখা হয়েছিল।”
আল হাসান বর্তমানে ইরানে অবস্থান করছেন এবং সেখানে অবস্থানকালে একবার ফোন পেয়ে তিনি লেবাননে আসেন এবং মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জানা গেছে, তাঁকে গ্রেফতার করা হবে না—এই আশ্বাস দিয়েই তাঁকে ডাকা হয়েছিল।
অস্টিন টাইসের নিখোঁজ হওয়ার ১৩ বছর পূর্ণ হতে চলেছে, কিন্তু তাঁর মা এখনও বিশ্বাস করেন, “আমার ছেলে বেঁচে আছে এবং একদিন সে মুক্তভাবে ফিরে আসবে।”
এই ঘটনার মাধ্যমে আবারো আলোচনায় এসেছে সিরিয়া সংঘাতের অন্ধকার অধ্যায় এবং সিরিয়ায় আটক থাকা সাংবাদিকদের নিরাপত্তার ঝুঁকি। মার্কিন প্রশাসন এখনও নিশ্চিত নয় আল হাসানের দাবির সত্যতা সম্পর্কে, তবে তাঁরা সবদিক যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন