বছরে ছয়টি গুরুতর আবহাওয়াজনিত দুর্যোগে ক্যালিফোর্নিয়ায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা গভর্নর নিউসমের
দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী বড়দিনের ঝড়: ভারী বৃষ্টি, প্রবল বাতাস ও বন্যার আশঙ্কা
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় মঙ্গলবার গভীর রাতে একটি শক্তিশালী ঝড় আঘাত হেনেছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে বড়দিনের সময় আঘাত করা সবচেয়ে বড় ঝড়গুলোর একটি বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঝড়ের প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টি, ক্ষতিকর দমকা হাওয়া এবং বন্যার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
মার্কিন জাতীয় আবহাওয়া সংস্থা (ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস) জানিয়েছে, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় ৪ থেকে ৮ ইঞ্চি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। পাহাড়ি ও পাদদেশীয় এলাকায় এই পরিমাণ ৮ থেকে ১২ ইঞ্চিতে পৌঁছাতে পারে। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি হবে এবং শনিবার পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি চলবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি পাবলিক ওয়ার্কসের পরিচালক মার্ক পেস্ত্রেলা বলেন,
“গত চার-পাঁচ বছরে আমরা এ ধরনের শক্তিশালী আবহাওয়াজনিত ঘটনা দেখিনি।”
সব এলাকাজুড়ে—অরেঞ্জ কাউন্টি ও ইনল্যান্ড এম্পায়ারসহ—ফ্লাড ওয়াচ জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি ৬০ থেকে ৮০ মাইল প্রতি ঘণ্টা গতির দমকা বাতাসের আশঙ্কায় হাই উইন্ড ওয়াচ কার্যকর রয়েছে।
জাতীয় আবহাওয়া সংস্থার কর্মকর্তারা জানান,
“বড়দিনের আগের রাত ও বড়দিনে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হবে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো হলো দক্ষিণ-পূর্ব সান্তা বারবারা কাউন্টি থেকে শুরু করে সেন্ট্রাল ভেনচুরা কাউন্টি ও সেন্ট্রাল লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি।”
কেটিএলএর আবহাওয়াবিদ ভেরা জিমেনেজ সতর্ক করে বলেন,
“এই বাতাস খুবই বিপজ্জনক। মাটি অতিরিক্ত ভিজে যাওয়ায় ৪০ মাইল গতির বাতাসেও গাছ ও বিদ্যুৎ লাইনের পতন ঘটতে পারে।”
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত (বার্ন স্কার) এলাকা এবং উঁচু পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসকারীদের জন্য বাধ্যতামূলক ও সতর্কতামূলক উচ্ছেদ নির্দেশ জারি করা হয়েছে। বন্যা, ভূমিধস ও কাদা ধসের ঝুঁকিতে থাকা এলাকায় কর্তৃপক্ষ বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিচ্ছে।
ভেনচুরা কাউন্টিতে বন্যাপ্রবণ রাস্তাগুলোতে কংক্রিট ব্যারিকেড (কে-রেল) বসানো হয়েছে এবং বাসিন্দারা বালির বস্তা ব্যবহার করে ঘর রক্ষার চেষ্টা করছেন। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই প্রায় এক বছরের সমপরিমাণ বৃষ্টিপাত হতে পারে।
ভেনচুরা কাউন্টি ফায়ারের কর্মকর্তা অ্যান্ডি ভ্যান স্কিভার বলেন,
“আমরা বছরে গড়ে ১৫ থেকে ১৭ ইঞ্চি বৃষ্টি পাই, আর আগামী তিন থেকে চার দিনে প্রায় সেই পরিমাণ বৃষ্টিই হতে পারে। চলমান পানির মধ্য দিয়ে গাড়ি চালাবেন না। মাত্র ছয় ইঞ্চি পানিতেই একটি গাড়ি ভেসে যেতে পারে।”
ঝড়ের প্রভাবে তুষারপাতের সীমা নেমে প্রায় ৭ হাজার ফুটে আসতে পারে। নিরাপত্তাজনিত কারণে বড়দিনের আগের দিন ও বড়দিনে বেয়ার মাউন্টেন, স্নো ভ্যালি ও মাউন্টেন হাই স্কি রিসোর্ট বন্ধ থাকবে। তবে স্নো সামিট খোলা থাকবে, যদিও রাতের সেশন বড়দিন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
মাউন্টেন হাই রিসোর্ট এক বিবৃতিতে জানায়,
“অতীব শক্তিশালী ঝড়ের কারণে আমরা প্রতিক্রিয়াশীল না হয়ে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি, যাতে অতিথি ও কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।”
ঝড়ের সময় ছুটির ভ্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বাসিন্দাদের অপ্রয়োজনীয় যাতায়াত এড়াতে এবং প্রয়োজনে সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাও দিয়েছে—
পোষা প্রাণীদের ঘরের ভেতরে রাখুন
পাহাড়ি এলাকায় গেলে স্নো চেইন সঙ্গে রাখুন
প্রাণঘাতী পরিস্থিতিতে ৯১১ নম্বরে ফোন করুন
বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন তারকে বিপজ্জনক মনে করে দূরে থাকুন
জেনারেটর কখনো ঘরের ভেতরে বা গ্যারেজে ব্যবহার করবেন না
সর্বশেষ আবহাওয়ার খবর ও পূর্বাভাস জানতে স্থানীয় আবহাওয়া বিভাগের ওয়েবসাইট দেখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার করুন