ক্যালিফোর্ণিয়া বিএনপি'র উদ্যোগে গত ১লা সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্হিত ছিলেন বিএনপি'র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব জনাব হারুন-অর রশিদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ক্যালিফোর্ণিয়া বিএনপি'র সভাপতি মো. আ. বাছিত। যুক্তরাষ্ট্রের মেগাসিটি লস এঞ্জেলেসে বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত বিএনপি'র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ আলোচনা সভায় মুক্তিযোদ্ধা, প্রবাসী কম্যুনিটির বিশিষ্ট নাগরিক ও সিনিয়র লিডারগণ, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রবাসী বাংলাদেশী ও বিএনপি'র কর্মী-সমর্থকেরা উপস্হিত ছিলেন। শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও আমেরিকা, বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো ও বিএনপি'র 'প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ, জীবন বাংলাদেশ আমার মরণ বাংলাদেশ....' গানটি পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত চমৎকারভাবে পরিচালনা করেন ক্যালিফোর্ণিয়া বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক বদরুল এ চৌধুরী শিপলু। কোরআন তেলাওয়াত করেন ওয়াহিদা রহমান।
 
প্রধান অতিথি বিএনপি'র যুগ্ম-মহাসচিব হারুন-অর রশিদ বলেন, বিএনপি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করছে। দেশে আজ রাজনীতি প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র‍্যালি করার অনুমতি দেয়া হয় নাই। সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশকে জঙ্গী রাষ্ট্র হিসাবে তকমা লাগানো হচ্ছে। বাংলাদেশে যদি গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা না যায়, তাহলে কাদের লাভ? বাংলাদেশের নামকরা বিদ্যাপীঠগুলোকে জঙ্গী তৈরীর আস্তানা আখ্যা দিয়ে বন্ধ করে দেয়া ও আমাদের দেশের মেধাবী ছাত্রদের বিদেশে উচ্চ শিক্ষার সম্ভাবনা ও সুযোগগুলি ধুলিস্যাৎ করে দেয়া হচ্ছে। আমাদের সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে গেলে কাদের লাভ? সরকারের বোঝা উচিৎ বাংলাদেশের জনগণ বোকা নয়, তারা অত্যন্ত সচেতন। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কৃতি সন্তান জনাব হারুন-অর রশিদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর আসনের সাবেক নির্বাচিত এমপি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি, তুঁখোড় ছাত্রনেতা হিসাবে ছাত্র ও গণ-আন্দোলনের বিভিন্ন সংকটকালে সামনে থেকে ভূমিকা রেখেছেন, এছাড়া বিএনপি'র রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
ক্যালিফোর্ণিয়া বিএনপি'র সভাপতি মো. বাছিত বলেন, সরকার বিএনপিকে ধ্বংস করতে অনেক চেষ্টা করেছে, এখনো পাঁয়তারা করছে, কিন্তু সরকার সফল হবে না, কারন এই সরকার জনগণের সমর্থিত সরকার নয়। আর বিএনপি বাংলার সাধারণ মানুষের দল। জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভোট ছাড়া সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছে বলেই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে ভয় পায়। কারণ আওয়ামী লীগ ও তার জোটেরা জানে বাংলার মানুষ আর তাদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না। বাংলার মানুষ আওয়ামী দুঃশাসন থেকে মুক্তি চায়। তাই আসুন খালেদা জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের স্বার্থে বিএনপির পতাকা তলে এক হয়ে কাজ করি। আওয়ামী রাহু গ্রাস থেকে দেশকে বাঁচাই।
 
যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি'র সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী কাঞ্চন বলেন, মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে গড়া দল বিএনপি জন্মলগ্ন থেকেই স্বাধীনতা রক্ষা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং গণ-মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া’র নেতৃত্বে চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।

ক্যালিফোর্ণিয়া বিএনপি'র যুগ্ম-সম্পাদক শাহাদাত শাহীন বলেন, বাংলাদেশকে রক্তাক্ত প্রান্তরে পরিণত করেছে এই অবৈধ সরকার। দেশজুড়ে চলছে গুম-খুন আর হামলা-মামলা। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জনগণ রাজপথে নেমে এসেছে। হামলা-মামলা করে আন্দোলনকে দমন করা যাবে না। প্রার্থী বিহীন ৫ তারিখের পাতানো সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করে জনগণ প্রমান করেছেন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সকলে ঐক্যবদ্ধ।
 
আলোচনা সভায় উপস্হিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হান্নান, লস এঞ্জেলেসের নির্বাচিত নেইবারহুড কাউন্সিলর ফয়সাল আহমেদ তুহিন, বিশিষ্ট কম্যুনিটি এক্টিভিস্ট আশরাফ আকবর, LA Bangla Times (এল এ বাংলা টাইমসে)র সিইও আবদুস সামাদ, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মি. জাভেদ প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর রমনা গ্রীনে এক সম্মেলনের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠন করেন। দীর্ঘ ৩৭ বছরের চড়াই-উৎরাইয়ের পথপরিক্রমায় বিএনপি আজ দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল। ১৯ দফা কর্মসূচির আলোকে প্রতিষ্ঠার ৫ মাসের মাথায় ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করে। জিয়াউর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর দলের বর্তমান চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিএনপির হাল ধরেন। বেগম জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন, এবং তার নেতৃত্বে বিএনপি তিনবার ক্ষমতায় আসীন হয়। সবমিলিয়ে সর্বোচ্চ ৫ মেয়াদে ১৮ বছর সফল ভাবে দেশ পরিচালনা করেছে বিএনপি।

অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্হিত ছিলেনঃ সৈয়দ দেলোয়ার হোসেন দিলির, খন্দকার আলম, ডাব্লিউ আমিন, মুর্শেদুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান শাহীন, সামসুজ্জোহা বাবলু, মাহতাব আহমেদ, এম ওয়াহিদ রহমান, জুনেল আহমেদ, সৈয়দ নাসিরউদ্দিন জেবুল, লায়েক আহমেদ, মারুফ খান, মোয়াজ্জেম আহমেদ রাসেল, শাহীন হক, মিকায়েল খান রাসেল, লোকমান হোসেন, মুনিম আহমেদ, বদরুল মাসুদ, সাইফুল আনসারী চপল, সেলিমা ইয়াসমিন, মুরাদ, ইমন, খায়রুল, শহীদ সহ অনেকেই।

অনুষ্ঠান শেষ অতিথিদের জন্য নৈশভোজের আয়োজন ছিল।