সুন্নাহ কেন মানব?
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পক্ষ থেকে পুরো মানবজাতির জন্য কুরআন একটি নিয়ামত ও রহমতস্বরূপ। সেই কুরআনের নির্দেশ-‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সা:-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম অনুপম আদর্শ।’ (সূরা আহজাব-২১)
ইমাম বায়হাকি তার ‘আল মুদখালুস সগির’ গ্রন্থে শবিব ইবনু ফুজালাহ মাক্কি থেকে বর্ণনা করেন, একদিন প্রখ্যাত সাহাবি ইমরন ইবনু হুসায়ন রা: (৫২ হি.) শাফাআতের বর্ণনা করেন। তখন এক ব্যক্তি বলেন, হে আবু নুজায়দ! আপনি আমাদের সামনে এমন সব হাদিস বর্ণনা করেছেন, যার মূল আমরা কুরআনে পাইনি। এ কথা শুনে তিনি রেগে উঠলেন এবং লোকটিকে বললেন, তুমি কি কুরআন পড়েছ? সে বলল, হ্যাঁ। এবার তিনি বললেন, তুমি কি কুরআনে ইশার সালাত চার রাকাত (ফরজ) পেয়েছ এবং মাগরিবের তিন রাকাত ও ফজর এ দুই রাকাত, আর জুুহরে চার রাকাত এবং আসর সালাতে চার রাকাত ফরজ পেয়েছ? সে বলল, না। তখন তিনি বললেন, তাহলে তোমরা ওই সব রাকাতের বর্ণনা কার কাছ থেকে পেলে? তোমরা কি তা আমাদের কাছ থেকে শেখোনি? আর আমরা কী তা রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছ থেকে শিখিনি?
সুতরাং, ওই বর্ণনা থেকে আমরা এটি উপলব্ধি করতে পারি এবং বাস্তবেও লক্ষ করি যে- প্রয়োগ ও পদ্ধতির বিষয়ে কুরআনে বিস্তারিত বিবরণ নেই, সে জন্য আমাদের ফিরে যেতে হবে কুরআনের প্রয়োগ তথা রাসূলুল্লাহ সা:-এর জীবন পদ্ধতির দিকে।
বর্তমানে অনেকেই হাদিস বাদ দিয়ে শুধু কুরআন অধ্যয়নের পক্ষে যুক্তি দেন। কিন্তু এরা কি আদৌ জ্ঞানী? কুরআন বোঝার জন্য হাদিসের গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা প্রমাণের জন্য উমর ফারুক রা: বলেন, অতি শিগগির একটি সম্প্রদায় আসবে যারা কুরআনের বহু অর্থবোধক আয়াত দিয়ে তোমাদের সাথে তর্ক করবে, তখন তোমরা হাদিস দিয়েই তাদের পাকড়াও করবে। কারণ সুন্নাহ তথা হাদিসওয়ালারাই আল্লাহর কিতাবের বেশি জ্ঞানী।’ (আল মিজানুল কুবরা) শুধু তাই নয়, ইমাম আবু হানিফা রহ. (মৃত ১৫০ হিজরি) বলেন, যদি সুন্নাহ না থাকত, তাহলে আমাদের মধ্যে কেউই কুরআন বুঝতে পারত না।’ (আল মিজানুল কুবরা)
তবে যারা হাদিস না মানার পক্ষে যুক্তি দেখান যে, কুরআন নিয়ে বিতর্ক নেই কিন্তু হাদিস নিয়ে বিতর্ক আছে। কোনোটি সহিহ, কোনোটি হাসান, কোনোটি জয়িফ, কোনোটি মাওজু, কোনোটি হাদিসে কুদসি তো কোনোটি মুত্তাফাক আলাইহি। সুতরাং, এত বিতর্কের দরকার নেই, হাদিস মানব না। তাদের উদ্দেশে বলব; দেখুন-ইখতিলাফ থাকবে; কিন্তু উত্তেজিত হওয়া যাবে না। কারণ আমরাই হাদিস থেকে জানি- রাগী মানুষই সবচেয়ে দুর্বল। তাই সহনশীল হয়ে আমল করতে হবে। আমাদের জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান বের করতে কুরআন-হাদিস নিয়ে গবেষণা করতে হবে। বিভিন্ন ইমামের বিভিন্ন হাদিসের কিতাব পড়তে হবে, কারণ এক কিতাবেই সব নেই। আমাদের অধ্যয়ন করতে হবে রিজাল শাস্ত্র। যেখানে হাদিসকে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা করতে সানাদ (ধারা) ও মাতান (শব্দসমষ্টি) পরীক্ষার উপায় বের করা হয়েছে। সুতরাং, এগুলো যাচাই-বাছাই করতে হবে। লক্ষণীয়- হাদিস থেকেই ইসলামী আইনের ভিত্তি তথা উসুলুল ফিকহের উদ্ভাবন। তা না হলে, বিভিন্ন মাসলা-মাসায়েল ও শাস্তির বিধান আমরা জানতাম কোত্থেকে?
তা ছাড়া, হাদিস মানার সর্বশেষ যুক্তি হলো- আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘রাসূল তোমাদের যা দেন তা গ্রহণ করো এবং যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকো।’ (সূরা হাশর-৭) সুতরাং, আল্লাহর নির্দেশ মান্য করে কল্যাণকর ও সহজ সমাজব্যবস্থার জন্য হাদিস মানা জরুরি।
								
 										
										ফাতেমা মাহফুজ									
 								
							
									
									
 
 
												
												
												
												
													
												
													
												
													
												
													
												
													
												
													
												
শেয়ার করুন