আপডেট :

        ধর্ষণ মামলায় হার্ভকে দোষী সাব্যস্ত করে ২০২০ সালে দেওয়া রায় বাতিল

        ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভের জেরে স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করল সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়

        ট্রাম্পের বিচার নিয়ে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট

        যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ দমনে মারমুখী পুলিশ

        ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেফতার শতাধিক

        পশ্চিম ভারত মহাসাগর অঞ্চলে মাদক পাচার এবং মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার বিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে

        গাজা উপকূলে অস্থায়ী বন্দর যুক্তরাষ্ট্রের !

        রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করার নির্দেশ

        জাতীয় নেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের অবদান কখনোই ভুলবার নয়

        ৮৮ আসনে দুপুর পর্যন্ত কত ভোট পড়লো

        ২৬ জেলার ওপর তাপপ্রবাহ

        চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ রেকর্ড ৪২.৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা

        চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ রেকর্ড ৪২.৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা

        কেন্দ্রীয় কি ঋণখেলাপি ও অর্থপাচারের সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করছে, প্রশ্ন টিআইবির

        ইসরায়েল বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার

        বিমান হামলায় নিহত এক নারীর গর্ভ থেকে প্রসব হওয়া সন্তানটি মারা গেছে

        ফেনীতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে কিশোর গ্যাং গ্রেফতার

        তাপ্প্রবাহে ভাঙল ৭৬ বছরের রেকর্ড

        তিন দিনের সফরে বর্তমানে চীনে রয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন

        ভারতীয় দলে হার্দিক পাণ্ডিয়া ও বিরাট কোহলি নেই

ইউরোপ যাওয়া হলো না ফরিদের, লাশ মিললো স্লোভাকিয়ার জঙ্গলে

ইউরোপ যাওয়া হলো না ফরিদের, লাশ মিললো স্লোভাকিয়ার জঙ্গলে

ইউরোপের দেশ ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স যাওয়ার সময় স্লোভাকিয়ার জঙ্গল থেকে নিখোঁজ হওয়া সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার কারিকোনা গ্রামের সমশাদ আলীর পুত্র ও সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন আহমদ (৩৫)’র লাশ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে (১২ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাজ্যের লন্ডন প্রবাসী ফরিদের ভাই আলকাছ আলী (আওলাদ আলী) নিজের বন্ধু সিআইডি পুলিশ মুন্নী ও মুন্নীর স্বামীকে সাথে নিয়ে স্লোভাকিয়ায় গিয়ে সেখানকার পুলিশের সহযোগিতায় নিখোঁজ ফরিদের লাশ সনাক্ত করেন।

এদিকে নিখোঁজের ১২ দিন পর লাশ সনাক্তের সংবাদ পেয়ে দেশে থাকা পরিবারে শোকের মাতম। তার তিন বছরের অবুঝ মেয়ে ইরা তাসফিয়া’র ‘আব্বু-আব্বু’ ডাক পরিবেশ আরো ভারী করে তুলেছে। ‘দালাল ও ৫ সঙ্গীর সাথে’ ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স যাওয়ার চেষ্টা করে গত ২ সেপ্টেম্বর স্লোভাকিয়ার জঙ্গলে নিখোঁজ হন এক কন্যা সন্তানের জনক ফরিদ উদ্দিন আহমদ এবং ৯ সেপ্টেম্বর স্লোভাকিয়ার স্টারিনা জঙ্গল (দূর্গম পাহাড়ি এলাকা) থেকে তার (ফরিদ) লাশ উদ্ধার করে স্লোভাকিয়ার পুলিশ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নিখোঁজ ফরিদ উদ্দিন আহমদের ফুফাতো ভাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী আবু বক্কর বিশ্বনাথের সাংবাদিকদের জানান, গত ৯ সেপ্টেম্বর স্লোভাকিয়ার ‘জওজে টিভি’র বরাত দিয়ে সেদেশের ‘নোভেনী ডট এসকে’ নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদটি প্রচার করে। প্রকাশিত ওই সংবাদে উল্লেখ করা হয় ‘স্লোভাকিয়ার স্টারিনা জঙ্গলে একজন পর্যটক আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী ইউরিপিয়ান নাগরিক নন এমন একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির লাশ দেখতে পান। তাৎক্ষণিক তিনি উদ্ধারকারী ও পুলিশকে বিষয়টি অবিহত করেন। এরপর পুলিশ ও উদ্ধারকারী দল লাশ উদ্ধার করে।’ ওই সংবাদটি যুক্তরাজ্যে থাকা নিখোঁজ ফরিদের স্বজনরা দেখতে পান। তখন স্লোভাকিয়ার পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তারা যোগাযোগ করেন এবং ই-মেইলে ফরিদের তথ্য পুলিশকে প্রদান করেন। উদ্ধারকৃত মরদেহটি নিখোঁজ ফরিদের হিসেবে পুলিশ প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়। এবং ফরিদের স্বজনদের স্লোভাকিয়া গিয়ে লাশ সনাক্ত করার জন্য বলে সেখানকার পুলিশ।

এরপর ফরিদের চাচা আলকাছ আলী (আওলাদ আলী) যুক্তরাজ্য সরকারের অনুমতি নিয়ে বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) নিজের বন্ধু সিআইডি পুলিশ মুন্নী ও মুন্নীর স্বামী’কে সঙ্গে করে যুক্তরাজ্য থেকে স্লোভাকিয়া যান। এরপর স্লোভাকিয়ার কৌচি শহরের একটি মর্গে গিয়ে ফরিদ উদ্দিন আহমদের লাশ সনাক্ত করেন তারা। লাশ বাংলাদেশে আনার জন্য প্রস্তুতি চলছে বলে জানান আবু বক্কর। তবে কিভাবে ফরিদ উদ্দিন আহমদের মৃত্যু হয়েছে এর সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি।

শুক্রবার সকালে সরেজমিন নিহত ফরিদ উদ্দিন আহমদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নিখোঁজ ফরিদের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর থেকে পরিবারের সদস্যদের মাঝে বিরাজ করছে শোকের মাতম। প্রিয়জনকে হারিয়ে স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে আশপাশ। ফরিদের পরিবারের সদস্যদের শান্তনা দিতে এসে  পাড়া-প্রতিবেশি ও আত্মীয়-স্বজনরা হারিয়ে যাচ্ছেন শোকের সাগরে। মৃত্যুর সংবাদটি এলাকার বিভিন্ন মসজিদের মাইকে ঘোষণা করা হলে লোকজন ভিড় করেন ফরিদের বাড়িতে। ৬ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে সবার বড় ফরিদ উদ্দিন আহমেদ’র স্ত্রী সেলিনা সুলতানা উপজেলার রামধানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত আছেন। ফরিদ-সেলিনা দম্পতির দাম্পত্য জীবনের সুখের একমাত্র স্বাক্ষী ৩ বছরের ইরা তাসফিয়া নামে তাদের এক কন্যা সন্তান।

ফরিদের পরিবার সুত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপ দেখতে রাশিয়া যান ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। খেলা শেষ হওয়ার মাস খানেক পর তিনি রাশিয়া থেকে ইউক্রেন যান এবং সেখানে দীর্ঘ কয়েক মাস অবস্থান করেন। সম্প্রতি ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স যাওয়ার জন্য রাসিয়ায় অবস্থানরত দাদা নামে পরিচিত দালাল লিটন বড়–য়া’র সাথে চুক্তি করেন ফরিদ। দালাল লিটন বড়ুয়ার বাড়ি চট্টগ্রাম জেলায়। সেই চুক্তি অনুযায়ী দালাল লিটন বড়–য়ার এজেন্ট বাংলাদেশে থাকা সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার কামাল নামের এক দালালের কাছে ৭ লাখ টাকা জমা রাখেন ফরিদের পরিবার। চুক্তি অনুযায়ী কথা ছিল মাত্র ২ঘন্টা পায়ে হেটে এবং বাকি রাস্তা বৈধভাবে গাড়িতে করে ফরিদকে ফ্রান্স পৌঁছানোর পর জমাকৃত ৭ লাখ টাকা হস্তান্তর করা হবে দালালের কাছে। চুক্তি সম্পাদনের পর ইউক্রেনস্থ দালালের শিবিরে গিয়ে প্রায় ১ মাস সেখানে অবস্থান করেন ফরিদ। সর্বশেষ গত ২৭ আগস্ট পরিবারের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেন ফরিদ। এসময় তিনি জানান- পরদিন (২৮ আগস্ট) ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে সঙ্গিদের সাথে যাত্রা করবেন ফরিদ। এই কথা বলার পর থেকে পরিবারের সাথে আর কোন যোগাযোগ হয়নি ফরিদের।
এরপর সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ফরিদের ফ্রান্স যাত্রাপথের এক সঙ্গী ফোন করে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তার (ফরিদ) ভাই কাওছার আলীকে ফোন করে জানান- গত বুধবার (২৮ আগস্ট) একজন দালালের সঙ্গে ফরিদ উদ্দিন’সহ তারা ৬ জন ইউক্রেন থেকে ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। পায়ে হেঁটে ফ্রান্স পৌঁছতে তাদের ৫ দিন সময় লাগে। কিন্তু তাদের সাথে খাবার ছিল মাত্র দু’দিনের। তাই সাথে থাকা খাবার শেষ হয়ে গেলে তাদেরকে শুকরের মাংস খেতে দেয় দালাল। কিন্তু এই খাবার খেতে অপারগতা জানান ফরিদ। তাই তিনি সাথে থাকা খেজুর খেয়ে আরোও একদিন কাটান। দুই দিন পায়ে হেঁটে তারা পৌঁছেন স্লোভাকিয়ার একটি জঙ্গলে। সেখানে পৌঁছার পর সাথে থাকা খেজুরও শেষ হয়ে গেলে শুকরের মাংস খেতে বাধ্য হন ফরিদ। এই খাবার খাওয়ার সাথে সাথেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ফরিদ। নাকে ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে এবং বমি আর ডায়রিয়া হতে থাকলে একেবারেই দূর্বল হয়ে যান তিনি। ওই জঙ্গলে সেদিন রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে একটি বিকট শব্দ পেয়ে সবার ঘুম ভেঙ্গে যায়। এসময় ঘুম থেকে উঠে ফরিদকে তাদের (সঙ্গিদের) সাথে দেখতে না পেরে রাঁতের অন্ধকারেই খুঁজতে শুরু করেন তারা। কিন্তু কোথাও ফরিদকে খুঁজে না পেয়ে এক পর্যায়ে বাধ্য হয়েই তাকে ছাড়াই ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে দালাল ও ফরিদের সঙ্গিয় অন্য ৫ জন (সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার নাজির, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার সোহাগ, দিলদার, বোরহান, জামাল) এবয় ২ সেপ্টেম্বর তারা সবাই ফ্রান্স পৌঁছেন।

নিখোঁজ ফরিদ উদ্দিন আহমদের ভাই আলা উদ্দিন ও গিয়াস উদ্দিন বলেন ‘আমরা ধারণা করছি আমার ভাইকে স্লোভাকিয়ার ওই জঙ্গলে হত্যা করে সেখানেই ফেলে রেখে দালাল ও তার সঙ্গীরা ফ্রান্সে চলে যায়। নিখোঁজের পর থেকে তারা (দালাল ও ফ্রান্স যাত্রাপথের ফরিদের সঙ্গীরা) আমাদেরকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ভাই (ফরিদ) এখনও জীবিত রয়েছেন বলে আমাদেরকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে আসছে।’ তারা বলেন- মাত্র ২ঘন্টা পায়ে হেটে এবং বাকীটা রাস্তা বৈধভাবে গাড়িতে করে ফ্রান্স পৌঁছানোর কথা বলে দালালেরা আমাদের ভাইয়ের সাথে প্রতারণা করেছে ও হত্যা করেছে। আমরা এর বিচার চাই।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত

এ বিভাগের আরো খবর