আপডেট :

        মাদারীপুরে গাড়ির ধাক্কায় অজ্ঞাতনামা এক পথচারীর মৃত্যু

        রাজধানীতে শুরু হয়েছে বজ্রসহ বৃষ্টি

        টাইটানিক সিনেমার অভিনেতা মারা গেছেন

        আবারো গাজায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল

        দুটি এম্বুলেন্সের একটি নষ্ট গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে

        নিউরোসায়েন্সেস ইনস্টিটিউটে মোট শয্যা হবে এক হাজার

        উপজেলা নির্বাচন: ৩ দিন মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ

        ব্যাটে জয় পেলো বাংলাদেশ

        ব্যাটে জয় পেলো বাংলাদেশ

        সম্পূর্ণ বাংলা সাপোর্টের স্মার্টওয়াচ নিয়ে এলো দেশীয় প্রযুক্তি

        ছায়ানটের অন্যতম সদস্য শ্রী অশোক রায় নন্দীর মৃত্যু

        ইসরায়েলে আল জাজিরার কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশর পর অফিসে পুলিশের অভিযান

        ব্রাজিলে ভয়াবহ বন্যায় নিহত ৫৭, ঘরছাড়া ৭০ হাজার মানুষ

        ইসরায়েলে আল-জাজিরা টিভি বন্ধের সিদ্ধান্ত

        মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে বিক্ষোভ

        ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থীদের ওপর ইসরাইলি সমর্থকদের হামলা

        যুক্তরাষ্ট্রে কিশোরকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে শিক্ষিকা গ্রেপ্তার

        যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি ‘বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ’ বলে উল্লেখ উত্তর কোরিয়ার

        যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তিন কর্মকর্তার মৃত্যু

        বান্ধবী খুঁজে পেতে বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন, ব্যাপক সাড়া

ওরা কেবল কথার পাকে নিত্য যাদের বেঁধে রাখে

ওরা কেবল কথার পাকে নিত্য যাদের বেঁধে রাখে

যেকোনো বিষয় বা যেকোনো উদ্যোগ-অর্জন হারিয়ে ফেলতে কিংবা ঔজ্জ্বল্য ম্লান করে দিতে আমাদের জুড়ি নেই। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দিনটিতে পর্যন্ত যে জাতি শুধু কাজ আর কাজ করত, যুদ্ধের দায়িত্ব সামলাত, তাকে হঠাৎই পেয়ে বসেছে কথা উন্মাদনায়। এত কথা, এত আলাপ, এত পরামর্শ আগে কখনো দেখেনি বাঙালি। পৃথিবীর কোনো দেশে, কোনো জাতিতে এত টক শো ভাবাও যায় না। উন্নত দেশগুলোতে কথা বলার জন্য আলাদা চ্যানেল আছে। শুধু কথা বলার, তারপরও সেগুলো আমাদের মতো নয়। কি এক অজ্ঞাত কারণে রাজনীতি আর উত্তেজনাই হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল বিষয়। এই প্রবণতা, এই ঝোঁক আজ এমন এক পর্যায়ে কেউই ধৈর্য রাখতে পারছে না। এই কিছু আগেও যারা টক শোতে যেতেন তাদের প্রতি মানুষের ভালোবাসা ছিল, আস্থা ছিল, শ্রদ্ধা ছিল, মানুষ বিশ্বাস করত যিনি জানেন তিনিই বলেন, যার যে বিষয়ে জ্ঞান কিংবা ধারণা পরিষ্কার তিনি বলবেন, তারা শুনবেন। সে জায়গাটা বদলে গিয়ে আজ কি চেহারায় দাঁড়িয়েছে? নব ঘুরিয়ে অন্য চ্যানেলে পালাতে পারলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে মানুষ। কারণ সবাই সব বিষয়ে কথা বলছে, যে অর্থনীতি বোঝে সে রাজনীতি নিয়ে বাহাস করছে। যার অতীত বিষয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান তিনি ধমক দিচ্ছেন সমাজ বিজ্ঞানীকে। আর সব কিছু ছাপিয়ে উঠে আসছে রাজনৈতিক দলবাজি। স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান বা মিডিয়াগুলোও নিজেদের সুনাম ধরে রাখতে ব্যর্থ আজ। বিবিসি সংলাপে দেখলাম মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী রীতি মতো ধমক দিয়ে উপস্থাপককে থামালেন। ওই উপস্থাপক কৌশলে বিএনপির পক্ষে বলে যাচ্ছিল। সম্পাদকরা যে এভাবে নির্লজ্জ ও একমুখী হতে পারেন টক শো না হলে বোঝা যেত না। সম্পাদক কে? কারা সম্পাদনা করেন? একটি জাতীয় পত্রিকার সম্পাদক বা ইলেকট্রনিক চ্যানেলের এডিটর তো সবার আশ্রয়। তার মিডিয়ায় সত্য উঠে আসবে, যেকোনো দল ও মতের কথা ঠাঁই পাবে। তিনি ও তার কাগজ বা চ্যানেল বা বৈদ্যুতিক মিডিয়া জনমত গঠন করবে। একমাত্র দেশবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িকতাবিরোধী জঙ্গিগোষ্ঠী ব্যতীত বাকিরা তাদের কাছ থেকে কোনোভাবেই একচোখা নীতি আশা করে না। অথচ আজ আমরা কি দেখছি, ট্যাবলয়েডের এক সম্পাদক খেয়ে না খেয়ে বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে লড়ছেন। আবার সুদর্শন সম্পাদকের মুখে আওয়ামী লীগের স্লোগান। লক্ষ্য করুন এদেশের প্রথিতযশা দিকপাল, দিক নির্দেশক সম্পাদকরা কখনো টক শোতে আসতেন না। এখনো আসেন না। মরহুম তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, আহমেদুল কবীর, বজলুর রহমান বা সন্তোষ গুপ্ত কোনোদিন টিভির মুখও দেখেননি। এখনো তোয়াব খান, রাহাত খান বা এ জাতীয় প্রবীণদের দেখা যায় না। অন্যদিকে কাগজ থুয়ে মিডিয়া ফেলে কথা পাগল কিছু মানুষ রাতদিন দৌড়ঝাঁপ করছে। অবস্থা এমন সোশ্যাল মিডিয়া মানে ফেস বুক ইত্যাদি খুললেই তাদের করুণ মিনতি আছড়ে পড়ে। আজ রাতে আমি অমুক চ্যানেলে তমুক সময়ে আছি। কী আশ্চর্য! সময়ের বাবা বলে কয়ে মানুষের জন্য এমন আকুতি তো আগে দেখিনি আমরা। কেউ কেউ একেক দিনে কয়েকটি চ্যানেলেও টক শো করেন। একজন মানুষের পক্ষে একদিনে কতগুলো বিষয় নতুন কথা বলা সম্ভব? পড়াশোনাহীন এই মানুষজন সকালের দিকে মাথার চুল না আঁচড়িয়ে বাসি শার্ট পিঁচুটি চোখেও টক শোতে চলে আসেন।

নেক নজরে পড়ার জন্য টক শো করেন এমন মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এই যে গড়ে হরিবোল এর জন্য চ্যানেলের সংখ্যা ও অনুষ্ঠানের স্বল্পতাও কম দায়ী নয়। আমার এক বন্ধু জনপ্রিয় একটি টিভি চ্যানেলে প্রায় তৃতীয় প্রধান। আমি একবার তাকে বলেছিলাম তাদের টিভিতে মাঝেমধ্যে ভুল বাংলা বলা হয়, তাদের এক স্বনামখ্যাত উপস্থাপিকা কবির নাম ভুল, কবিতাও ভুল বলেন। বন্ধুটি আমাকে থামিয়ে দিয়ে মজার একটা তথ্য দিয়েছিল। দেশের চ্যানেলগুলোর সংখ্যাকে চব্বিশ গুণ সাত দিয়ে গুণ করে দেখিয়েছিল অত পরিমাণ মানুষ বাংলাদেশে আসলে শুদ্ধ বাংলা, প্রমিত বাংলা কথা বলতে জানেন না। তার এই যুক্তি ফেলনা নয়। গ্যাপ পূরণে, সময় পূরণে তাই কথা আর কথা, প্রায় সব চ্যানেলে সংবাদ, সংবাদপত্র বিশ্লেষণ, মতামত ভোর দুপুর রাত স্মরণ, সেলিব্রেটি নিয়ে আড্ডা সবই এখন প্রকারান্তরে টক শো। এক বিষয় এক ধারণা এক তর্ক নিয়ে অগণিত টক শোর জোয়ারে দর্শক-শ্রোতা দিশেহারা। তাই এখন টক শো বক্তারাও বেপরোয়া, গলাধাক্কা দিয়ে ক্যামেরার সামনে একে অপরকে বের করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। চেয়ার ছেড়ে উঠে যাওয়া, মাইক খুলে ফেলা, হাত পা ছোঁড়া, অশ্লীল উত্তেজিত বাক্যবাণ তো মামুলি ঘটনা। কেউ বুঝতে চাইছে না অর্জনের পরিবর্তে হারানোটাই ব্যাপক হয়ে উঠছে। মান সম্মান ইজ্জত আদর্শ খুইয়ে গোপাল ভাঁড় হওয়ার প্রয়োজন নেই। তারপরও থামছে না।

না থামার কারণ দলবাজি ঢুকে গেছে। রক্তে শিরায় ধমনীতে আওয়ামী বিএনপি জামায়াত ঢুকে যাওয়া বাংলাদেশিরা এখন টক শো নিয়ে বেপরোয়া। সঙ্গে ঢুকেছে অর্থ লোভ লালসা আর চোখে পড়ার উদগ্র বাসনা, তারুণ্যও এর বাইরে নয়। এক সময় স্থির শান্ত প্রজ্ঞাময় জ্ঞানী মানুষেরা কথা বলতেন, বাকিরা শুনতেন। রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু বলতেন, তাজউদ্দিন আহমেদরা দল চালাতেন। মানুষ মানুষকে শ্রদ্ধা করার জায়গাটা পেয়ে  যেত। নষ্ট রাজনীতির টক শোর নামে নিদ্রাহরণ, রক্তচাপ বৃদ্ধি আর হানাহানি ছাড়া কিছুই দিতে পারছে না। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার অর্ধসত্য আর অর্থ পাকি প্রেম মশগুলদের প্রচারণা সুশীল নামে পরিচিত বুদ্ধিবৃত্তির বারোটা বাজিয়েছে এই উপাদানগুলো। বাকি আছে সামান্য কিছু মানুষ আর অপেক্ষায় আছে সমগ্র জাতি।

আমরা কি এই কালচার থেকে মুক্তি পাব কোনোদিন? আবার কি কথা কম কাজ বেশিতে ফিরতে পারবে বাঙালি?

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত