দুই শতাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলো যুক্তরাষ্ট্র
গ্রিন বিল্ডিং: পরিবেশ, স্বাস্থ্য এবং ব্যবসায়িক নিরাপত্তার শক্তিশালী কাঠামো
ছবি: এলএবাংলাটাইমস
গ্রিন বিল্ডিং হচ্ছে মানুষের স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং আর্থিক অবস্থার উপর বিল্ডিং এর প্রভাব কমিয়ে শক্তি, পানি এবং উপাদানের দিক দিয়ে বিল্ডিং এর সম্পদের ব্যবহারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করার একটা হাতিয়ার।
গ্রিন বিল্ডিং পরিবেশবান্ধব হওয়ার কারণে দিন দিন বাংলাদেশের কিছু অংশসহ পৃথিবীব্যাপী এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। কারণ এটা শক্তি, পানি সাশ্রয় করে, পরিবেশ দূষণ কমিয়ে আনে এবং প্রাকৃতিক স্বাচ্ছন্দ্যের যোগান দেয়। যাহোক, পরিবেশবান্ধব নির্মাণকাজের উপাদান, সঠিক পরিকল্পনা, শক্তি ও পানি সাশ্রয়ের কৌশল, জলছাদ বা গ্রিন ছাদের নির্মাণ, শীতল মেঝে নির্মাণসহ অন্যান্য কাজে বিশেষভাবে গবেষণা চালানো দরকার। সরকার এবং আইনপ্রণেতাদের আইনগত ব্যবস্থার মাধ্যমে নগর পরিকল্পনার ক্ষেত্রে গ্রিন বিল্ডিং সম্প্রসারিত করা বাধ্যতামূলক করে দেওয়া উচিত।
ভারতসহ বিভিন্ন দেশে গ্রিন বিল্ডিং এর ধারণা বেশ গুরুত্ব লাভ করেছে। এই কাঠামোর অধীনে বর্জ্য নিষ্কাশনের হার নিয়ন্ত্রণ, খরচ কমানো, শক্তি সাশ্রয়, শীতলীকরণ প্রক্রিয়া এবং পরিবেশ বান্ধব করে তোলা হয়। এছাড়াও, গ্রিন বিল্ডিং পানির ব্যবহার কমানো, পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা, বর্জ্য নিষ্কাশন সর্বনিম্ন হারে নামিয়ে আনা, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক লাভ বৃদ্ধির জন্য কাজ করে। দ্য ইউএস ইপিএ (The U.S. EPA) মতে, "গ্রিন বিল্ডিং একটি কাঠামো নির্মান এবং তা কার্যকর করার মাধ্যমে বিল্ডিং এর মেয়াদকালের বিল্ডিং বানানোর পরিকল্পনায় বসা থেকে শুরু করে উন্নয়ন, কার্যক্রম, পুনর্নিমাণ, ভেঙে ফেলা পর্যন্ত প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার এবং অপচয় কমিয়ে এনে সম্পদের ব্যবহার করে থাকে।"
এখন আমাদের গ্রিন বিল্ডিং এর উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবতে হবে। আমাদের প্রাথমিক উদেশ্যগুলোর একটি হলো, প্ররতিথিবীকে আরো বেশি বাসযোগ্য করে তোলা, যদিও এর উদ্দেশ্য আরো বিস্তৃত। যখন আপনি পরিবেশ সচেতন হয়ে কাজ করার চিন্তা করবেন, আপনার উদ্দেশ্য হবে চারপাশের সাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করে প্ররথিবীকে বাসযোগ্য করে তোলা। যখন আপনি বিল্ডিং এর কাজ শুরু করবেন এবং চারপাশের স্বাভাবিক পরিবেশের কোনো ক্ষতি করবেন, বন্যজীবন এবং পরিবেশের উপরও বিরূপ প্রভাব ফেলছেন, যেটা বাটারফ্লাই ইফেক্টের মত কাজ করে। এমনকি, আপনার করা একটা ছোট্ট পরিবর্তনও পৃথিবীকে আরও ভালো একটা গ্রহ এবং আমাদের প্রত্যেকের জন্য আরো ভালো একটা বাসযোগ্য জায়গায় পরিণত করার জন্য ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এভাবে উদ্ভিদজগৎ এবং বন্যজীবনের জন্যও পৃথিবী বাসযোগ্য হয়ে উঠবে।
গ্রিন বিল্ডিং এমন একটা জিনিস যেটা মানুষের বিল্ডিং ভেঙে আবার নির্মাণের কথা না ভেবে শুধু ঘরের ভেতরের কিছু গ্রিন উন্নয়নকাজ করলেই আপনি যেসব উদ্দেশ্য পূরণ করতে চান এর বিনিময়ে তা পেয়ে যাবেন বলে আশা করা উচিত। গ্রিন বিল্ডিং এর উদ্দেশ্য পূরণ এবং সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে ক্রমাগত বিবর্তনের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই গ্রিন বিল্ডিং এর জন্য দরকারি কিছু ক্ষেত্র এবং একইভাবে পরিবেশের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কাজ নির্দিষ্ট করা দরকার। বর্তমান প্রেক্ষাপটে, নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য যথাযথভাবে নির্দিষ্ট করা দরকারঃ
শক্তি সাশ্রয় এবং নবায়ণযোগ্য শক্তি, পানির সাশ্রয়, পরিবেশবান্ধব বিল্ডিং নির্মাণের উপাদান নির্দিষ্টকরণ, বর্জ্য নিঃসরণ কমানো। ক্ষতিকর দ্রব্যের প্রভাব কমানো, ঘরের ভেতরের বায়ুর গুণমান, দ্রুত এবং টেকসই উন্নয়ন, শিল্প অঞ্চলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব কমিয়ে আনা।
উদ্ভাবনী এবং উন্নত প্রযুক্তির নতুন পদ্ধতিতে কাজ করার বিষয়টি কাঠামোগুলোকে আরো গ্রিন বানানোর সমকালীন চর্চার জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্যের যোগান দেয়। যার কারণে এর সুবিধা প্রকৃতি থেকে আর্থিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রেও পাওয়া যায়। এই গ্রিন পদ্ধতির চর্চাকে স্বাগত জানানোর মাধ্যমে আমরা পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভের জন্য চরম দরকারি এবং একপেশে পদক্ষেপগুলোও নিতে পারি। গ্রিন ডেভেলপমেন্ট কলাকৌশল যখন কার্যকরভাবে সাজানো হয় এবং পরিকল্পনার শুরু থেকে কার্যক্রম চলাকালীন সময়েও তা কার্যকর করা হয় তখন প্রচুর লাভজনক হয়ে উঠে। এই গ্রিন বিল্ডিং গুলো সরাসরি বা পরোক্ষভাবে বিভিন্ন মাত্রায় লাভজনক হয়ে উঠে। এর মধ্যে কিছু কিছু নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
কার্যকর প্রযুক্তি, সহজতর ব্যবস্থাপনা, প্রকল্প থেকে বিনিয়োগের পুরোটা উঠিয়ে আনা, ঘরের ভেতরের বায়ুর গুণগত মানের উন্নয়ন, শক্তির সাশ্রয়, পানির সাশ্রয়, বর্জ্য নিষ্কাশন কমানো, পরিবেশ দূষণ, পানি এবং বিভিন্ন সম্পদের কার্যকর ব্যবহার, বসবাসকারী জীবগুলোর সুরক্ষা, পানি সংরক্ষণ, গরিবদের জন্য অর্থনৈতিক কাঠামো, স্বাস্থ্যকর জীবন পদ্ধতি এবং বিনোদন, স্বাস্থ্যের উন্নতি।
গ্রিন বিল্ডিংকে অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী বিল্ডিংও বলা যায় যেটা বিল্ডিং এর ভেতরের এবং বাইরের পরিবেশগত বিষয়গুলোকে আমলে নেয়। এই প্রাকৃতিক বিষয়গুলো প্রকল্পগুলোর কার্যকরিতার গুরুত্ব বাড়ায়, পানির সুরক্ষা এবং কার্যকরী ব্যবহার বৃদ্ধি করে, ঘরের ভেতরের গুণগত মান, বিল্ডিং এর বায়ু এবং আলো চলাচলের ব্যবস্থা, আরো ভালো বাসযোগ্য পরিবেশ, শিল্প অঞ্চলের তাপ বৃদ্ধির হার এবং তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব কমিয়ে আনে।
অনন্ত আহমেদ
ইউএসজিবিসি ফ্যাকাল্টি স্ট্যাটাস এবং ৫ টি ইউএসজিবিসি ক্রেডেনশিয়ালস প্রাপ্ত বাংলাদেশের প্রথম এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় পেশাজীবী।
আন্তর্জাতিক গ্রিন বিল্ডিং বিশেষজ্ঞ
ইউএসজিবিসি ফ্যাকাল্টি মেম্বার
লীড এপি বিডি+সি, ইবি ও+এম, আইডি+সি , হোম, এনডি
শেয়ার করুন