ট্রাম্পের ইরান নীতি: শান্তির আশায় জুয়া, কিন্তু সামনে ঘরোয়া ও বৈশ্বিক বিপদের ছায়া
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আড়াই সপ্তাহের একটি ‘ডিপ্লোমেটিক উইন্ডো’ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা রাজনৈতিক ও কৌশলগতভাবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিভক্তমূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে । তার সরকারের হিসাব অনুযায়ী, এই সময় ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরনের কার্যক্রম ধীর করতে পারে; আর না হলে, কূটনৈতিক ব্যর্থতা হলে সামরিক আক্রমণের দরজা খোলা রেখে তিনি একটি স্থিতাবস্থা তৈরি করেছেন ।
ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দলের অনেকেই এই পদক্ষেপে দ্বিমুখী প্রতিক্রিয়া দেন। MAGA নীতির প্রবক্তা যেমন টাকার কার্লসন ও স্টিভ বাননেরা তা বিক্ষোভ করেছেন, অন্যদিকে ঐতিহ্যগত “হক” রিপাবলিকান নেতারা ইরানের উপর সামরিক হামলা চালানোর পক্ষে আছেন । সেনেটর লিন্ডসে গ্র্যাহাম এবং টেড ক্রুজের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ট্রাম্পকে “আগ্রাসী ভূমিকা” পালন করতে চাপ দিচ্ছেন, কিন্তু অন্যপথের সমর্থকরা মনে করছেন এতে MAGA নীতির প্রাতিষ্ঠানিক “অসম্পৃক্ত অবস্থা” নীতি লঙ্ঘিত হচ্ছে ।
আন্তর্জাতিকভাবে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের স্ত্রীহীন পারমাণবিক প্ল্যান্টগুলোতে হামলার আহ্বান জানাচ্ছেন । সে দিক থেকে ট্রাম্পের ‘বা তো সেনা কর্ম, না কূটনীতি’ এই রূপরেখা রেখেই ইসরায়েল–ইরান সংঘাত আরও তীব্র হচ্ছে। তবে জাতিসংঘ, ইউরোপ এবং টুবিলাক রাষ্ট্রগুলো এই ধরনের পদক্ষেপকে “ভয়াবহ বৃদ্ধি” হিসেবে সমালোচনা করেছেন এবং কূটনৈতিক শান্তির আহ্বান জানিয়েছেন ।
ট্রাম্পের দুই-সপ্তাহের এই বিলম্ব সিদ্ধান্ত হাতে–আঁকড়ে রয়েছেঃ একদিকে সময় দিয়ে দেয়া হয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনীকে প্রস্তুত হওয়ার, অন্যদিকে তার MAGA নির্বাচনী ভিত্তি দুই পথে বিভক্ত—হাতে প্রভাব বিস্তার বন্ধ না করা হলে অস্ত্রে ঝুঁকতে পারে, এবং শান্তির নীতি থেকে সরে গেলে তার রাজনৈতিক বিশ্বাসের ব্যাখ্যা কঠিন হবে ।
যদিও ইরান বার্তা দেওয়া হয়েছে যে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি "শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্য" ভিত্তিক, তবে তারা ইসরায়েলি হামলা বন্ধ না হলে আলোচনায় বসবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে । এই অবস্থায়, ফোর্ডো–নাটানজ–ইসফাহানের মতো কেন্দ্রীয় স্থাপনায় আক্রমণ হলে বড় ধরনের প্রতিহিংসা ও জ্বলন্ত প্রতিক্রিয়া আতঙ্ক সৃষ্টি হবে, যা মধ্যপ্রাচ্য এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা দেয়ার সম্ভাবনা রাখে ।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, এই পদক্ষেপ একদিকে ইরানের প্রতিক্রিয়া ডেকে আনতে পারে—যেমন মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, গ্লোবাল তেল সরবরাহে ব্যাঘাত, এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে শক—অপরদিকে এটি ট্রাম্পের “নতুন যুদ্ধ নয়” প্রতিশ্রুতির বিপরীতে যায় এবং তার ঐতিহ্যগত অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ।
সার্বিকভাবে, ট্রাম্পের এই ইরানজাত ‘গ্যাম্বল’ হলো একটি দ্বিমাত্রিক সমস্যা: এটা কৌশলগত সুযোগ তৈরি করতে পারে, তবে সেই সুযোগ ব্যর্থ হলে তা বিদেশ ও অভ্যন্তরে তার রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অবস্থানকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিতে পারে।
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন