সিডনিতে হনুক্কা অনুষ্ঠানে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা, নিহত ১৬; দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় নিরাপত্তা জোরদার
সিডনিতে হনুক্কা অনুষ্ঠানে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা, নিহত ১৬; দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় নিরাপত্তা জোরদার
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে হনুক্কা উদযাপন চলাকালে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন সন্দেহভাজন হামলাকারীও রয়েছে। এ ঘটনায় আরও অন্তত ৪২ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুইজন পুলিশ সদস্য। অস্ট্রেলীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোববার গভীর রাতে সিডনির বন্ডাই বিচে অনুষ্ঠিত একটি প্রকাশ্য হনুক্কা অনুষ্ঠানে এই গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে এবং এটিকে ইহুদি সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে চালানো সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানায়, হনুক্কার প্রথম রাত উপলক্ষে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে এক হাজারেরও বেশি মানুষ উপস্থিত ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণ করা ভিডিওতে দ্রুত গুলির শব্দ শোনা যায় এবং আতঙ্কিত মানুষজনকে সমুদ্রতীরবর্তী অনুষ্ঠানস্থল থেকে পালাতে দেখা যায়।
নিহত ১৬ জনের পাশাপাশি অন্তত ৪২ জন আহত হয়েছেন, যাদের বয়স ১০ থেকে ৮৭ বছরের মধ্যে। আহতদের মধ্যে শিশুদেরও থাকার কথা জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “একটি শিশু ছিল, বয়স আনুমানিক আট বছর। তার পায়ে গুলি লেগেছিল, সে মাটিতে পড়ে কাঁদছিল।”
রোববার বিকেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মকর্তারা জানান, তদন্তে জানা গেছে দুই সন্দেহভাজন বন্দুকধারী বাবা ও ছেলে। ৫০ বছর বয়সী বাবা পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তাঁর ২৫ বছর বয়সী ছেলে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন এবং তার অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানানো হয়েছে।
তদন্তকারীরা জানান, ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহজনক কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্যে সন্দেহভাজনদের একটি গাড়িতে পাওয়া একটি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) রয়েছে। অনুষ্ঠানের ধরন ও ব্যবহৃত অস্ত্রের কারণে এই হামলাকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে নিহতের সংখ্যা ১১ বলা হলেও রোববার সকালে পুলিশ হালনাগাদ তথ্য দিয়ে ১৬ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে।
নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার বলেন, এই হামলা পরিকল্পিতভাবে সিডনির ইহুদি সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে। সিডনির এক স্থানীয় রাবাই, রাবাই লেভি উলফ বিশ্বব্যাপী ইহুদিবিদ্বেষ বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, নিয়ন্ত্রণহীন ঘৃণা শেষ পর্যন্ত সহিংসতায় রূপ নেয়। তিনি বলেন, “বিশ্বজুড়ে এখন ভয়াবহ মাত্রায় ইহুদিবিদ্বেষ দেখা যাচ্ছে। দুঃখজনকভাবে, এসবকে অবহেলা করলে এমন ঘটনাই ঘটে।”
এই হামলার প্রভাব দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়াতেও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ ইহুদি জনগোষ্ঠীর বসবাস। লস এঞ্জেলেস পুলিশ বিভাগ (এলএপিডি) জানিয়েছে, বর্তমানে লস এঞ্জেলেসে কোনো নির্দিষ্ট হুমকি নেই, তবে শহরজুড়ে ইহুদি স্থাপনা, স্কুল, সিনাগগ এবং হনুক্কা অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত টহল জোরদার করা হয়েছে।
এলএপিডি এক বিবৃতিতে জানায়, “আমাদের বহুমাত্রিক জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সতর্ক ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” একই সঙ্গে নাগরিকদের সতর্ক থাকতে, সন্দেহজনক কিছু দেখলে ৯১১-এ জানাতে এবং কমিউনিটি অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনার আহ্বান জানানো হয়।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এই হামলাকে “ঘৃণ্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড” হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ক্রমবর্ধমান ইহুদিবিদ্বেষী সহিংসতার বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার বিশ্বজুড়ে ইহুদি সম্প্রদায়ের পাশে রয়েছে।
লস এঞ্জেলেসের মেয়র কারেন ব্যাসও হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, এটি ইহুদি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আরেকটি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা। তিনি জানান, অস্ট্রেলিয়ায় নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানাতে ও সহায়তা দিতে লস এঞ্জেলেসে অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ার কনসাল জেনারেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, হনুক্কার প্রথম রাত ও পুরো উৎসবজুড়ে উপাসনালয় ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় টহল বাড়ানো হয়েছে।
বেভারলি হিলস পুলিশ বিভাগও উপাসনালয় ও জনসমাগমস্থলে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। শহরের মেয়র শারোনা নাজারিয়ান হামলাটিকে “জঘন্য ও নৃশংস সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড” আখ্যা দিয়ে বলেন, ইহুদিবিদ্বেষ কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না।
এ ছাড়া সান বার্নারডিনো কাউন্টি শেরিফ বিভাগ জনগণকে “সন্দেহ দেখলে জানান” নীতিতে দ্রুত তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। অস্ট্রেলীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলার তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার করুন