আপডেট :

        নরওয়াকে পালশালার বাইরে গুলি বর্ষণের ঘটনায় দুইজন আহত, বন্দুকধারীকে খুঁজছে পুলিশ

        লস এঞ্জেলসের ‘No Kings’ প্রতিবাদে সমাবেশ ভাঙার নির্দেশ, অন্তত একজন গ্রেপ্তার

        ২০২৬ সালে বাড়ছে মেডিকেয়ার খরচ: ওপেন এনরলমেন্টে যেভাবে সাশ্রয় করা যায়

        প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য যৌনবিষয়ক কনটেন্ট চালুর ঘোষণা দিল OpenAI

        রিভারসাইড কাউন্টির শেরিফ ডেপুটি গাড়ি চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার

        বারব্যাঙ্কে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১, বন্ধ ৫ ফ্রিওয়ের উত্তরমুখী লেন

        কলম্বিয়ার জলসীমায় মার্কিন হামলা: ‘খুনের অভিযোগ’ তুললেন প্রেসিডেন্ট পেত্রো

        গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের’ অভিযোগে ইসরায়েলের বিমান হামলা

        যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী ‘নো কিংস’ আন্দোলনে লাখো মানুষের অংশগ্রহণ

        ‘রাজা চাই না, গণতন্ত্র চাই’ স্লোগানে তোলপাড় যুক্তরাষ্ট্র

        "সময়ের খেলা: সন্ধ্যা থামে, বছর ছোটে"

        দুর্নীতির ছায়ায় বাংলাদেশ ফুটবল: বিনিয়োগের অভাবে লিগের পতন ও খেলোয়াড়দের হতাশা

        সেন্টমার্টিন দ্বীপ উন্মুক্ত হচ্ছে নভেম্বর থেকে, পর্যটকদের জন্য সুসংবাদ দিলেন উপদেষ্টা

        রিয়াদের প্রত্যাশা: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে 'আক্রমণ-সমান' চুক্তি

        জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচারে রোববার থেকে সাইট ব্লক

        নিউইয়র্কে সিলেটিদের প্রতিবাদ: উন্নয়ন বঞ্চনায় ক্ষোভ

        নিউইয়র্কে ডমেস্টিক সহিংসতা রোধে নতুন বিশেষ ইউনিট

        জুলাই সনদ সই শেষ, বাস্তবায়ন পদ্ধতি এখনও অনিশ্চিত

        ‘জুলাই সনদ’ বাংলাদেশের রাজনৈতিক মাইলফলক: ইইউ

        জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে সং ঘ র্ষ: ৯০০ জনের বিরুদ্ধে মা ম লা

দুর্বৃত্তায়ন রাজনীতি দেশকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায় : হাইকোর্ট

দুর্বৃত্তায়ন রাজনীতি দেশকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায় : হাইকোর্ট

দুর্বৃত্তায়ন রাজনীতি দেশকে ধ্বংস ছাড়া অন্য কোনো দিকে নিয়ে যেতে পারে না, আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার রায়ে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে এমন মন্তব্য করা হয়েছে। হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি বুধবার  প্রকাশ পেয়েছে।

প্রায় এক যুগ আগে সংঘটিত লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের পর ঘোষিত দণ্ডের রায়ের সঙ্গে আদালত কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করেছেন। আহসান উল্লাহ মাস্টারের হত্যা মামলায় বাংলায় লেখা রায়ে আদালত বলেছেন, কোনো দ্বিধা ছাড়াই বলা যায় যে, যারা রাজনীতিকে বা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে কলুষিত করেন, দুর্বত্তায়নের আবর্তে ঠেলে দিতে উৎসাহিত করেন তারাই রাজনৈতিক দুর্বত্তদের শিরোমনি।

আরো বলা হয়, দেশ যখন ক্রমেই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বার্থে সকলেরই যখন নিবিষ্ট হওয়া উচিত, সেই সময়ে রাজনীতিতে এই ধরনের দুর্বত্তায়ন কোনভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়। দুর্বত্তায়িত রাজনীতি দেশকে ধ্বংস ছাড়া অন্য কোনো গন্তব্যে নিয়ে যেতে পারে না।

চলতি বছর ১৫ জুন হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই মামলায় হাইকোর্টে করা ডেথরেফারেন্স ও জেল আপিলের রায় দেন। রায়ে মোট ২৮ জন আসামির মধ্যে ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রয়েছে। এছাড়া ৮ জন খালাস যাবজ্জীবন দণ্ড ও ১১ জন খালাস পেয়েছেন। বিচার চলাকালে দুজন মারা যাওয়ায় তাদের মামলা নিস্পত্তি করে দেওয়া হয়েছে। আর যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামি পলাতক থাকায় আপিল করেননি।

এই হত্যাকাণ্ডকে ইতিহাসের জঘন্যতম ঘটনা আখ্যা দিয়ে আদালত বলেন, এই হত্যাকাণ্ড নিঃসন্দেহে জঘন্যতম ও কাপুরুষোচিত ঘটনা। এই নির্মম ঘটনা কেবল ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের প্রাণ কেড়ে নেয়নি রক্তাক্ত করেছে সভ্য সমাজকে, মানুষের সুস্থ চেতনাকে, মানবতাকে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের পৈশাচিক সুসংগঠিত হত্যাকাণ্ড অতীতে খুব কমই সংঘটিত হয়েছে। এ ঘটনায় রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের স্পষ্ট চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে।

দিবালোকে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে তারা রাজনৈতিকভাবে সহিংস ও বেপরোয়া ছিল বলেও আদালতের রায়ে উল্লেখ করা হয়। আদালত বলেছেন, প্রকাশ্য দিবালোকে জনসভাস্থলে সংঘটিত এই আক্রমণ পরিচালনায় অভিযুক্তরা কোন মুখাবরণও (মাস্ক) ব্যবহার করেনি। এটি অভ্রান্ত ভাবে ইঙ্গিত করে যে, অপরাধ সংঘটনকারী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার কোন ভয় বা শঙ্কা তাদের ছিল না। তারা নিশ্চিত ছিল যে, চিহ্নিত হলেও দলীয় সুরক্ষায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় তারা আইনের বাইরেই থেকে যাবে। তাদের এই আচরণ প্রমাণ করে যে, তারা কতটা বেপরোয়া ও সহিংস ছিল। চরম বেপরোয়া উশৃঙ্খল রাজনৈতিক দুর্বত্তরাই কেবল এ ধরনের শক্তির ধারণ ও চর্চা করতে পারে।

আর এ ধরনের রাজনীতি চলতে থাকলে সুষ্ঠু রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে আদালতের রায়ে ওঠে এসেছে। রায়ে উল্লেখ করা হয়, আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ প্রকৃতির বর্বর উশৃঙ্খলতার অপচর্চাকারী দলীয় কর্মীদের পরিহার করার প্রবণতা দেখা যায় না। বরং অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক দলগুলো এই প্রকৃতির উশৃঙ্খল কর্মীদের উপরই নির্ভরশীল, যা কিনা দেশে সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ ও চর্চার পথে এক বিরাট অন্তরায়। এরূপ রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির চর্চা অব্যাহত থাকলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধকতা দেখা দেবে। সামাজিক সুরক্ষা হুমকির মুখে পড়বে। মুখ থুবড়ে পড়বে জনমানুষের প্রত্যাশিত গণতন্ত্র।

রায়ে আহসান উল্লাহ মাস্টারের ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন দিকও ওঠে এসেছে। আদালত বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সবশেষে জাতীয় সংসদের একজন সদস্য হিসেবে একাধিকবার নির্বাচিত হয়েছিলেন। এলাকায় তিনি ছিলেন দলমত নির্বিশেষে সকলের প্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব। সংসদ সদস্য হিসবে জনকল্যাণে তিনি পালন করেছেন তার পবিত্র গুরু দায়িত্ব। জীবনের শেষ মুহূর্তেও মাদক ব্যবসায়ী তথা সন্ত্রাসীদের নির্মূলে তার কণ্ঠ ছিল সোচ্চার। রাজনীতির অঙ্গনে এমনই এক নিষ্কলুষ ও জনকল্যাণে সদা উদ্যমী একজন মানুষকে হত্যা করা হয়। সমাজ হারায় এক দিক নির্দেশককে।

তাকে হত্যার ফল বিশ্লেষণ করে রায়ে উল্লেখ করা হয়, এই হত্যাকাণ্ডে সমাজ হারায় এক দিক নির্দেশককে। একই সাথে তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে তার স্ত্রীকে স্বামীর ভালবাসা থেকে, সন্তানদের পিতৃস্নেহে থেকেও বঞ্চিত করা হয়। আহসান উল্লাহ মাস্টার বেঁচে থাকলে আ্ইন সভায় অবদান রাখার মাধ্যমে জনকল্যানে নিবেদিত হওয়ার আরো সুযোগ পেতেন, করতে পারতেন আরো অনেক সুকর্ম। সমাজ ও জাতি হতে পারত আরো উপকৃত। সাজাপ্রাপ্তরা তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে সমাজ, জাতি ও এলাকার মানুষকে সমৃদ্ধির পধে হাঁটার সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে। ব্যক্তিকে হত্যার পাশাপাশি হত্যা করা হয়েছে আদর্শকে, নৈতিক উদ্যমকে। আজকের সমাজে আহসান উল্লাহ মাস্টারের মতো আদর্শবান রাজনীতিকের বড়ই অভাব।

দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টারকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ৭ মে দুপুরে একদল সন্ত্রাসী টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রকাশ্যে গুলি ছুড়ে হত্যা করা হয়।

শেয়ার করুন

পাঠকের মতামত