প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য যৌনবিষয়ক কনটেন্ট চালুর ঘোষণা দিল OpenAI
বাংলাদেশের বাজেটে কমছে বিদেশ নির্ভরতা
কয়েক বছর ধরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশ ঘাটতি ধরে বাজেট পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ ঘাটতি ২ থেকে ৩ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। তবে গত অর্থবছরে এ ঘাটতি কিছুটা বেড়ে সাড়ে ৩ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়েছিল।
অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখার ক্ষেত্রে বাজেট ঘাটতি কমে আসা ইতিবাচক। তবে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য উন্নয়ন খাতে অর্থ ব্যয়ের দরকার রয়েছে। বিদেশনির্ভরতা কমে আসা দেশের জন্য ভালো। তবে অবকাঠামো ও সামাজিক উন্নয়নে কম সুদের বিদেশি অর্থায়নও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত অর্থবছর (২০১৫-১৬) দেশি-বিদেশি উৎস মিলে সরকার বাজেট ঘাটতি অর্থায়ন করেছে ৫৮ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বাজেট অর্থায়ন হয়েছে ৩৪ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। আর বিদেশি উৎস থেকে অর্থায়ন এসেছে ২০ হাজার ২১৩ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চলতি বাজার মূল্যে জিডিপির আকার ছিল ১৭ লাখ ২৯ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশি-বিদেশি উৎস মিলে সরকার বাজেট ঘাটতি অর্থায়ন করেছে ৪৪ হাজার ৪২০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ ছিল। ওই অর্থবছরে চলতি বাজার মূল্যে জিডিপির আকার ধরা হয়েছিল ১৫ লাখ ১৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এছাড়া ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি অর্থায়ন ছিল ৩৬ হাজার ২০৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, যা জিডিপির ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
গত অর্থবছর অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক থেকে সরকারকে খুব বেশি ঋণ নিতে হয়নি। অর্থবছর শেষে ব্যাংক থেকে মাত্র ৪ হাজার ৩২৬ কোটি টাকার ঋণ করে সরকার। তবে ওই অর্থবছরের পুরো অর্থায়নই এসেছে ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে। বিশেষ করে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে সরকারের রেকর্ড পরিমাণ ঋণ আসে। যার পরিমাণ ছিল রেকর্ড ৩৩ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা।
এদিকে চলতি অর্থবছর বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশ। বড় অঙ্কের এ ঘাটতি অর্থায়নে অভ্যন্তরীণ উৎসের ওপরই সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে। বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬১ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা সংগ্রহের কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী, যা জিডিপির ৩ দশমিক ১ শতাংশ। আর বৈদেশিক উৎস থেকে ৩৬ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা পাওয়ার কথা জানান অর্থমন্ত্রী।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, সরকারের টাকার প্রয়োজন কম হলে ঘাটতি অর্থায়নও কম হয়। সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত (অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, জ্বালানি) অনেক প্রকল্প রয়েছে, যেখানে বরাদ্দ রাখার পরও প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় না করার নজির রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, উন্নয়ন খাতে ব্যয় কম হলে তা কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন বাধাগ্রস্ত করে। এজন্য উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের স্বার্থে উন্নয়নসহায়ক ব্যয় হতে হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদেশনির্ভরতা কমা দেশের জন্য ভালো। তবে অবকাঠামো ও সামাজিক উন্নয়নে কম সুদের বিদেশি অর্থায়নও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ঘাটতি অর্থায়নে বিদেশনির্ভরতা কমার অর্থ অর্থনৈতিকভাবে দেশের সক্ষমতা বাড়ছে। তবে কম সুদের বিদেশি সহায়তারও দরকার রয়েছে। দেশীয় উৎস থেকে অর্থায়ন বেশি হলে সরকারের সুদ বাবদ ব্যয় বেশি হয়।
এদিকে চলতি বছরের বাজেটে মোট ব্যয় খাতের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সুদ পরিশোধ। যার পরিমাণ ৩৯ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা। গত বছর মূল বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৩৫ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা ৩১ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা করা হয়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৩ হাজার ৯১৫ কোটি; ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৯৮৭ কোটি; ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৯৭৩ কোটি ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩১ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা। এনিয়ে পাঁচ বছরে সরকারের সুদের ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের বাজেটের প্রায় অর্ধেক। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) চেয়ে ৪৭ হাজার কোটি টাকা বেশি।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার পর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জাগো নিউজকে বলেন, যেহেতু বিশাল বাজেট বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে ঋণ নিতেই হবে। তাই এক্ষেত্রে নমনীয় উৎসই বেছে নেয়া উচিত। তাতে বেশি ঋণ না পেলে উচিত ব্যাংকব্যবস্থা দিকে নজর দেয়া।
এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি
শেয়ার করুন