কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে তীব্র গরমে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অসুস্থ
বিএনপি নেতাদের ওপর হামলা করছে কারা?
সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানসহ শীর্ষস্থানীয় বিএনপি নেতাদের গাড়ি, কার্যালয় ও বাড়িঘরে হামলাকারীদের পরিচয় নিয়ে পুলিশের ভেতরেই নানা প্রশ্ন ও সন্দেহ। পুলিশ মনে করছে, হামলাকারীরা কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী নয়।গত মঙ্গলবার রাতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানের ওপর হামলা চালায় একদল দুর্বৃত্ত। গুলিবিদ্ধ রিয়াজ এখন ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, কোনো ধাতববস্তু শরীরের দুটি স্থানে এক দিক দিয়ে ঢুকে অন্য দিক দিয়ে বেরিয়ে গেছে।ঘটনাস্থলে আলামত সংগ্রহ করতে আসা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একজন কর্মকর্তা মিডিয়াকে বলেন, ‘এটা ছিল অত্যন্ত দক্ষ হাতে নির্ভুল আঘাত। কারা করেছে তা জানি না। তবে যারা করেছে তারা সব বুঝেশুনেই করেছে।’জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এ এস এম শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, দেশে যখন কোনো সংকট শুরু হয়, তখন সুযোগসন্ধানী মহল নানা ধরনের অঘটন ঘটায়। অতীতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সরকারের উচিত এদের শক্ত হাতে দমন করা। না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।রিয়াজ রহমানের ওপর হামলার ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যায় মামলা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় অজ্ঞাতনামা সাত-আটজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা ও অপরাধীদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পরিবার মামলা না করায় পুলিশই মামলা করেছে। পুলিশ এ ঘটনা তদন্ত করছে। মামলা না করার ব্যাপারে জানতে চাইলে রিয়াজ রহমানের মেয়ে আমেনা রহমান বলেন, ‘সবার সঙ্গে আলোচনা করেই যা করার করব। এখন আপাতত বাবার চিকিৎসা নিয়েই ব্যস্ত আছি।’গুলশান থানা পুলিশ জানায়, রিয়াজ রহমানের ঘটনা তদন্তে নেমে গতকাল পুলিশ বেশকিছু তথ্য পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া একটি গুলির খোসা ও ব্যবহৃত বুলেটের অংশ। গতকাল আলামত সংগ্রহে আসা সিআইডি কর্মকর্তারা এসব পরীক্ষা করেন। ঘটনাস্থলের পাশের একটি ভবনের সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও চিত্রও পুলিশ হাতে পেয়েছে। ওই ভিডিও চিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে, ঘটনার পর চারটি মোটরসাইকেলে করে লোকজন চলে যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি মোটরসাইকেলে একটি কম বয়সী ছেলে আছে। তবে ছবিতে এদের চেহারা স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছে না। রিয়াজ রহমানের গাড়িচালককে পুলিশ এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি। উদ্ধার করা গাড়িটি পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। সিআইডির কর্মকর্তারা গতকাল গাড়ি থেকে বিভিন্ন ছাপ সংগ্রহ করেন।ইউনাইটেড হাসপাতালের পরিচালক (ক্লিনিক্যাল অপারেশন) দবির উদ্দিন আহমেদ মিডিয়াকে বলেন, রিয়াজ রহমান এখন শঙ্কামুক্ত। তাঁর দেহে চারটি ক্ষত আছে। তবে শরীরে মেটালিক বা ধাতব কোনো বস্তুর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। কোনো ধাতববস্তু শরীরের একদিকে ঢুকে আরেক দিক দিয়ে বের হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছয় সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে। গতকাল এমআরআই ও সিটিস্ক্যান করা হয়। রিপোর্ট অনুসারে তাঁর সফট ও নার্ভ টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁ পায়ে অনুভূতি কম। গোড়ালি নাড়াতে পারছেন না। তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।এ বিষয়ে হাসপাতালের ব্রিফিংয়ের আগে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির পররাষ্ট্র-সংক্রান্ত বিষয়গুলো যাঁরাই দেখছেন, বেছে বেছে তাঁদের ওপরই হামলা চালানো হচ্ছে, যা উদ্বেগজনক। যারা এ ঘটনা ঘটাচ্ছে, সরকারের উচিত তাদের খুঁজে বের করা। এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন বলছেন, সরকারের মদদপুষ্টরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।১০ জানুয়ারি রাত নয়টার দিকে গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহউদ্দীন আহমেদের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এর এক ঘণ্টা পর রাত ১০টার দিকে আরেক উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর গুলশান অ্যাভিনিউয়ে বাড়ি লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি ছুড়ে মোটরসাইকেল আরোহী দুই যুবক। পরদিন রাত ১০টার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ও খন্দকার মোশাররফ হোসেনের গুলশান-২ নম্বরের বাসার সামনে ফাঁকা গুলি ছুড়ে দুর্বৃত্তরা। একই দিন বেলা তিনটার দিকে আরেক উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেনের রামপুরার মালিবাগ চৌধুরী পাড়ার চেম্বারের সামনে চারটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। ওই দিন রাত ১১টার দিকে ধানমন্ডিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকারের বাসার সামনে ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। সাবিহউদ্দীনের গাড়িতে অগ্নিংযোগ এবং মিন্টু, মঈন খান ও মোশাররফ হোসেনের বাসার সামনে গুলি ছোড়ার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে গুলশান থানায় চারটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে। মাহবুব হোসেনের চেম্বারের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় রামপুরা থানায় জিডি করেছে পুলিশ। তবে জমির উদ্দিন সরকারের বাসার সামনে গুলির ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ কিংবা জিডি হয়নি। গুলশানের চারটি ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, কারা এসব ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের এখনো শনাক্ত করা যায়নি, চেষ্টা চলছে। একই কথা বলেন রামপুরা থানার ওসি মাহবুবুর রহমান।সাবিহউদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘৯০ নম্বর সড়কে গাড়ি রেখে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। এরপর কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, সে ব্যাপারে কাউকে সন্দেহ করতে পারছি না।’প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে এরা কারা? এরা কী ভাড়াটে সন্ত্রাসী না অন্য কেউ? জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা মিডিয়াকে বলেন, হামলাকারীদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন তাঁরা। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। দুটি ঘটনায় হামলাকারীদের ছবি সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা আছে। এসব ভিডিও এখনো পুলিশের হাতে আসেনি। ছবি পেলে সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।
শেয়ার করুন