ট্রাম্পের বাণিজ্য চাপের মুখে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কড়া বার্তা
মামুনুর রশীদের জন্মদিন
বাংলা সংস্কৃতিতে নাটক নিয়ে শতবর্ষ পরে গবেষণা হলেও যার কাজ, যার অবস্থান, যার বিচরণ আলোচ্য থাকতেই হবে—তার নাম মামুনুর রশীদ। বরেণ্য এই নাট্যজন জন্মগ্রহণ করেছেন লিপ ইয়ারের বিশেষ তারিখ। জন্মদিন নিয়ে সারাজীবনে কোনো আড়ম্বর রাখেননি তিনি।
কিন্তু দীর্ঘ ৪ বছর পর পর তাকে শুভেচ্ছা জানাতে, ভালোবাসা জানাতে তার ছাত্র-ছাত্রী, শিষ্য, ভক্ত-অনুরাগীরাই এদিনটাকে একটি উত্সবে পরিণত করেন। মামুনুর রশীদকে নিয়ে লিখেছেন তানভীর তারেক।
শিল্পের সাথে নিজের জীবনটা সমান্তরাল রেখেছেন। মঞ্চের আলো-আঁধারের যে প্রক্ষেপণ, সংলাপ, করতালি কিংবা নিস্তব্ধ হয়ে থাকা দর্শকচোখ যখন তার দিকে—একজন মামুনুর রশীদ তখন মোহমুগ্ধতা ছড়ান তার সংলাপে, অভিনয়ে, নির্মাণে।
স্বাধীনতা উত্তর ১৯৭২-এ মামুনুর রশীদ তার নাট্যদল গড়ে তোলেন। ‘আরণ্যক নাট্যদল’। যে দলটি এদেশের অগণিত শিল্পীর জন্ম দিয়েছে। কোন ভাবনা থেকে সেই নাট্যদল শুরু করা? এমন প্রশ্নে মামুনুর রশীদ বলেন, ‘কলকাতায় নিয়মিত নাট্যচর্চা দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। এরপর প্রথম ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে কবর মঞ্চস্থ করলাম। এরপর থেকে চলতে থাকল।’
নাট্যজগতে তার মতো এত বিস্তৃতি খুব কম এদেশে। আশির দশকে যখন গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন চালু হয়। সেটি ছিল নতুন ধারণা। তিনি প্রথমে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন সংগঠনটির। পরবর্তীকালে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। মামুনুর রশীদ বলেন, ‘এটি সারা দেশের নাট্যকর্মীদের প্ল্যাটফর্ম। প্রতিটি দল থেকে একজন সদস্য নিয়ে ফেডারেশন গঠিত হয়েছে। আমরা অনেক কাজ করতে পেরেছি। নাটকের ওপর সেন্সরশিপ ছিল, আন্দোলন করে ২০০১ সালে সেটি ওঠাতে পেরেছি। এই যে শিল্পকলা একাডেমির ভবন হয়েছে, এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগ চালু হয়েছে—এসবই আমাদের আন্দোলনের ফসল।’
সত্য ভাষণে অকপট
একজন মুক্তিযোদ্ধার ওপরে কোনো বড় দেশপ্রেমিক কেউ হতে পারে না। মামুনুর রশীদও যেন তাই। এদেশের যেকোনো সংকটে যখন যা বলা প্রয়োজন তিনি বলেছেন। কারো প্রতি ভয়-ডর রেখে কোনোকিছু লুকাননি। যেমন গত নির্বাচনের আগে মঞ্চে দাঁড়িয়ে সোজাসাপ্টা বলে দিলেন, ‘টাকা দিয়ে ব্যবসায়ীরা সবকিছু কিনে নিয়েছে। এই দেশপ্রেমহীন ব্যবসায়ীদের ভোট দেওয়া উচিত নয়, কেউ দেবেন না এবং আমলাদের দেবেন না। এই সাবেক আমলারা সারাজীবন মানুষের বিপক্ষে কাজ করেছে। চাকরি থেকে রিটায়ার্ড করার পর তারা কলাম লেখা শুরু করে। এদের থাপড়ানো দরকার। এই তুই যখন ডিসি ছিলি, সচিব ছিলি তখন তুই কী করেছিস, এখন কলাম লিখিস।’
মামুনুর রশীদ আরো বলেন, ‘লর্ড ক্লাইভ লুণ্ঠন করে দেশে ফিরলে তার বিচার হয়েছিল, তাকে সবাই থুতু দিত। কিন্তু আমাদের দেশে দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিকে কি কেউ ঘৃণা করে? পাজেরো গাড়িতে করে এমপি ঘুরছে, তাকে কি কেউ থুতু দেয়, তুমি এত টাকা কেমনে করলা, কয়দিন আগে তুমি পানের দোকান করতা, এত অল্প সময়ে এত টাকা কেমনে করলা?’
এভাবে স্পষ্ট কথা বলে দিতে কখনো মনে হয় না আপনার যে কে কী ভাববে? নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেন, ‘সে ভয় তো জীবনে কোনোদিন করিনি। দেশকে দিতে এসেছি, নিতে না।
জনরুচি বা শিল্পরুচির যে মানদণ্ড, তা নিয়ে আমরা কথা বলতে খুব ভয় পাই। সে সময় প্রথম মুখ খুললেন মামুনুর রশীদ। সোচ্চার হলেন স্থূল জনরুচির বিরুদ্ধে। সমাজের জন্য এমন বাতিঘর আমাদের দেশে হাতে গোনা।
এমনই আমাদের প্রাণের নাট্যজন মামুনুর রশীদ। অকুতোভয়। শিল্পপ্রাণ। বিরল মানুষ বলেই হয়তো এমন বিরল দিনে জন্ম নিয়েছিলেন। শুভ জন্মদিন হে
কিংবদন্তি।
এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস
শেয়ার করুন