পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যের আগে জেলেনস্কি ও ট্রাম্পের বৈঠক
ছবিঃ এলএবাংলাটাইমস
পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের আগে ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স বাসিলিকায় সাক্ষাৎ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
হোয়াইট হাউস সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৫ মিনিটের এই বৈঠককে "খুবই ফলপ্রসূ" হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। অপরদিকে, জেলেনস্কি বৈঠকটিকে "খুব প্রতীকী" এবং "ঐতিহাসিক হয়ে উঠার সম্ভাবনাময়" বলে মন্তব্য করেছেন।
পোপের শেষকৃত্যানুষ্ঠান শুরুর ঠিক আগে, ট্রাম্প ও জেলেনস্কিকে গভীর আলোচনায় মগ্ন অবস্থায় দেখা যায়। দুজনের মধ্যে এই বৈঠক এমন এক সময় হলো, যখন ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মস্কোতে আলোচনা শেষে জানান, রাশিয়া ও ইউক্রেন একটি চুক্তির "খুব কাছাকাছি" রয়েছে।
জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রি ইয়ারমাক এক টুইটে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বৈঠকের ছবি শেয়ার করে শুধু একটি শব্দ লেখেন - "গঠনমূলক"।
এটি ছিল ট্রাম্প ও জেলেনস্কির প্রথম মুখোমুখি বৈঠক ফেব্রুয়ারির উত্তপ্ত ওভাল অফিস বৈঠকের পর। সেই বৈঠকে ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেছিলেন, "তুমি জিতছো না, তোমার হাতে ভালো কার্ড নেই।" এই সপ্তাহেও ট্রাম্প একই মন্তব্য পুনর্ব্যক্ত করেন।
বৈঠকের ছবি থেকে দেখা যায়, ট্রাম্প নীল স্যুট ও জেলেনস্কি কালো পোশাকে, দুজন একে অপরের মুখোমুখি বসে গম্ভীর আলোচনা করছেন।
সামাজিক মাধ্যমে জেলেনস্কি লেখেন, "ভালো একটি বৈঠক হয়েছে। একান্তে অনেক কিছু আলোচনা করেছি। আশা করছি, আলোচনার ভিত্তিতে আমরা ইতিবাচক ফলাফল দেখতে পাব।"
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহাও এক্স-এ (টুইটারের নতুন নাম) পোস্ট করে লেখেন, "এই ঐতিহাসিক বৈঠকের গুরুত্ব প্রকাশের জন্য কোনো শব্দের প্রয়োজন নেই। দুই নেতা শান্তির জন্য কাজ করছেন সেন্ট পিটার্স বাসিলিকায়।"
আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, ট্রাম্প ও জেলেনস্কির সঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টার্মার এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও রয়েছেন। ম্যাক্রোঁর হাত জেলেনস্কির কাঁধে রাখা ছিল, যেন দুই নেতার মিলনের পেছনে তাঁদের ভূমিকাও তুলে ধরা হচ্ছে।
হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ পরিচালক স্টিভেন চুং জানান, ট্রাম্প-জেলেনস্কির ভ্যাটিকান বৈঠক সংক্রান্ত আরও বিস্তারিত তথ্য পরে প্রকাশ করা হবে।
বৈঠক শেষে দুই নেতা বাসিলিকার সিঁড়ি দিয়ে নেমে জনতার করতালির মধ্য দিয়ে সামনে আসেন এবং প্রথম সারির আসনে বসেন।
শেষকৃত্যানুষ্ঠানে জেলেনস্কি ও ট্রাম্প কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসেছিলেন, মাঝখানে ম্যাক্রোঁসহ অন্যান্য রাষ্ট্রনেতারা অবস্থান করছিলেন।
কার্ডিনাল জিওভান্নি বাতিস্তা রে তাঁর ভাষণে পোপ ফ্রান্সিসের শান্তির আহ্বানকে স্মরণ করে বলেন, "সেতু নির্মাণ করো, প্রাচীর নয়" — পোপ প্রায়ই এই আহ্বান জানিয়েছেন।
বৈঠকের পরে আরেকটি সম্ভাব্য বৈঠকের কথা উঠলেও ট্রাম্পের মোটরকেড দ্রুত সেন্ট পিটার্স ছাড়ে এবং অল্প সময়ের মধ্যে ট্রাম্প রোম ত্যাগ করেন।
অন্যদিকে, জেলেনস্কি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েনের সঙ্গেও বৈঠকের কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ট্রাম্পের বিশেষ দূত উইটকফ এ বছর চতুর্থবারের মতো মস্কো সফর করেন এবং পুতিনের সহকারী ইউরি উশাকভের সঙ্গে তিন ঘণ্টার বৈঠক করেন। উশাকভ জানান, "যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার অবস্থান কাছাকাছি এসেছে, বিশেষ করে ইউক্রেন ইস্যুতে সরাসরি রাশিয়া-ইউক্রেন আলোচনা পুনরায় শুরুর সম্ভাবনা নিয়ে আলাপ হয়েছে।"
ফেব্রুয়ারির উত্তপ্ত হোয়াইট হাউস বৈঠকে ট্রাম্প জেলেনস্কিকে সতর্ক করে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে থাকা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মতি না দিলে তিনি "তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি নিচ্ছেন।"
ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ইউক্রেনের প্রতি ক্রমবর্ধমান চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তির অংশ হিসেবে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৪ সালে রাশিয়ার দ্বারা দখলকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপও।
জেলেনস্কি ইতিপূর্বে এই ধরনের প্রস্তাব দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে তিনি শুক্রবার বিবিসিকে বলেন, "সম্পূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি আলোচনার দরজা খুলে দিতে পারে।"
এলএবাংলাটাইমস/ওএম
শেয়ার করুন