খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনারের পদত্যাগ দাবিতে চলা আন্দোলনের মুখে খুলনা প্রেসক্লাবে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। শনিবার (২৮ জুন) সন্ধ্যায় খুলনা প্রেসক্লাব পরিদর্শনে গিয়ে পরিস্থিতিতে পড়েন তিনি।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণের দাবিতে সময় বেধে দিয়ে আলটিমেটাম দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। আজ শনিবার তাদের বেধে দেওয়া আলটিমেটাম শেষ হয়। তবে এ সময়ের মধ্যে পুলিশ কমিশনার অপসারণ না হওয়ায় কর্মসূচির তৃতীয় দিন তারা ফের একই দাবিতে কেএমপির সদর দপ্তর ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে।

শনিবার (২৮ জুন) বিকেল ৪টা থেকে আন্দোলনকারীরা কেএমপির সদর দপ্তরের সামনের সড়কে অবস্থান নেয়। তারা রাস্তার দুই পাশ বন্ধ করে নানা স্লোগান দিতে থাকে। কর্মসূচিতে খুলনার বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরও অংশ নেয়। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে তারা।

সন্ধ্যায় খুলনা প্রেসক্লাব পরিদর্শনে গিয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এ সময় আন্দোলনকারীরা বলতে থাকেন, কেএমপি কমিশনারের পদত্যাগ নিয়ে কোনো ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত প্রেস সচিবকে বের হতে দেওয়া হবে না। পরে প্রেসক্লাবে হুমায়ুন কবির বালু মিলনায়তনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের বৈঠক হয়।

এ সময় ছাত্ররা পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণের দাবি জানিয়ে বলেন, জুলাই আন্দোলনের পরে বর্তমান পুলিশ কমিশনার খুলনার দায়িত্ব নিয়ে গণঅভুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর নির্যাতনকারী পুলিশ সদস্যদের রক্ষা করে আসছেন। পাশাপাশি বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তিনি তাদের রক্ষা করছেন। এমনকি তার শ্যালককে দিয়ে খুলনায় মেলাসহ ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। বিগত কয়েক মাসের মধ্যে ছাত্র গণ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দুই ছাত্রকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে। যার মধ্যে একজন নিহত হয়। এ সকল ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনতে পারেনি বর্তমান পুলিশ কমিশনার। এই পুলিশ কমিশনারে আমলে প্রায় প্রতিদিনই খুলনা মহানগরীতে সন্ত্রাসী হামলা ও গুলির ঘটনা ঘটছে। বিগত কয়েকমাসে কমপক্ষে অর্ধ শতাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আমরা আর এ পুলিশ কমিশনারকে খুলনায় দেখতে চাই না। এই পুলিশ কমিশনারের থাকলে আমরা ছাত্ররা কেউ নিরাপদ নই।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ছাত্রদের দাবি মনোযোগ সহকারে শুনেন। পরে তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, আপনাদের অভিযোগগুলো আমি প্রধান উপদেষ্টার কাছে রোববারের মধ্যেই পৌঁছে দেব। আলোচনা সাপেক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা তাৎক্ষণিক খুলনা প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে প্রেস ব্রিফিং করেন। এ সময় তারা বলেন, আমাদের দাবির কথা আমরা প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের কাছে লিখিতভাবে দিয়েছি। তিনি আমাদের কথা ধৈর্য্য সহকারে শুনেছেন। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারকে অপসারণ করা না হলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক ও খুলনা জেলা শাখার সদস্যসচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি, খুলনা মহানগর মুখ্য সংগঠক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সদস্য সচিব জহুরুল তানভীর, কদরুল হাসান প্রমুখ।

বিক্ষোভকারীরা জানান, গত মঙ্গলবার খানজাহান আলী থানা এলাকা থেকে স্থানীয় লোকজন এসআই সুকান্ত দাসকে আটক করে মারধরের পর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। তবে পুলিশ পরে তাকে ছেড়ে দেয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার ও বৃহস্পতিবার টানা দুই দিন কেএমপির সদর দপ্তর ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা।

তাদের অভিযোগ, পুলিশ কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দারসহ কয়েকজন কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপেই সুকান্তকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার রাতে কমিশনারের অপসারণে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেধে দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। গতকাল শনিবার দুপুর ১২টায় সেই সময়সীমা শেষ হয়। এরপর থেকে আবারো কেএমপি সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভে নামে আন্দোলনকারীরা। তারা রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়কে ব্যারিকেড দেয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা বলেন, খুলনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ। মানুষ নিজেদের অনিরাপদ মনে করছে। পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তিনি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। আমরা তার অপসারণ চাই।

তবে কেএমপি বলছে, উপপরিদর্শক (এসআই) সুকান্তকে বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা থেকে গ্রেপ্তারর করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

এলএবাংলাটাইমস/আইটিএলএস