দুবাই থেকে আসা ইমিরেটস কার্গো বিমান হংকংয়ে সাগরে পড়ল, ২ নিহত
বাঁধে বানভাসীদের মানবেতর জীবন
গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি প্রতিনিয়ত কমতে থাকলেও বেড়েই চলেছে বানভাসী মানুষের দুঃখ-দুর্দশা। বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় সদরসহ চার উপজেলার পানিবন্দি পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলোতে।
সেখানে ছোট্ট-ছোট্ট ছাপড়া ঘর তৈরি করে শেষ সম্বল হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল নিয়ে একসঙ্গে গাদাগাদি করে বসবাস করছেন তারা।
নিজেদের খাবারের পাশাপাশি গো-খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। সরকারি-বেসরকারিভাবে কিছু টয়লেট ও টিউবওয়েল স্থাপিত হলেও অনেক স্থানে পৌঁছেনি কোনো ত্রাণ সামগ্রী, স্থাপিত হয়নি চিকিৎসা ক্যাম্প।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালী ইউনিয়নের সোনাইল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ৫ কিলোমিটার সড়কজুড়ে চোখে পড়ে হাজার-হাজার বন্যার্ত পরিবারের দুর্দশার চিত্র।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কুমার সরকার জানান, ৩১ জুলাই দুপুরের দিকে ঘাঘটের পানির প্রবল চাপে সোনাইল বাঁধের চুনিয়াকান্দি নামক স্থানে প্রায় দেড়শ মিটার জায়গা ভেঙে যায়। মুহূর্তের মধ্যে অন্তত ২০টি গ্রামের অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
এর দুদিন আগে ২৯ জুলাই রাতে ভেঙে যায় ফুলছড়ি উপজেলার সিংড়িয়া বাঁধ। এতে আরো অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ফলে পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
তিনি আরো জানান, পানি কমতে শুরু করছে। আশা করছি ২/৩ দিনের মধ্যে বাঁধে আশ্রিত মানুষজন পর্যায়ক্রমে নিজের বসতভিটায় ফিরতে পারবে।
সোনাইল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রিত উপজেলার চুনিয়াকান্দি গ্রামে আনোয়ার হোসেন ও বাতাশি রাণী জানান, রোববার দুপুরের দিকে হঠাৎ করে বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় পানির তোড়ে তাদের বাড়ির বিভিন্ন জিনিসসহ ধান-চাল ভেসে গেছে। তাদের মতো অসংখ্য মানুষ সবকিছু হারিয়ে শেষ সম্বলটুকু নিয়ে ঠাঁই নিয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থানে।
তারা আরো জানান, চারদিকে শুধু পানি আর পানি। হাতে কাজ-কর্ম নেই। ফলে সন্তান-গবাদিপশু নিয়ে সীমাহীন কষ্টে দিনাতিপাত করছি।
বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার পর তিনদিন পেরিয়ে গেলেও সেখানে সেখানে কোনো ত্রাণ পৌঁছেনি বলে অভিযোগ করেন একই গ্রামের ফুল মিয়ার ছেলে আইজুল ইসলাম।
তারা আরো জানান, ৫ কিলোমিটার বাঁধে আশ্রিত বন্যার্তদের জন্য ৩টি টিউবওয়েল এবং ও তিন স্থানে ৩টি করে ৯ রিং ও ৩ স্লাব দেওয়া হয়েছে।
গাইবান্ধা সদরের বাদিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান সাফায়েতুল ইসলাম পাভেল জানান, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অপ্রতুল হওয়ায় সবাইকে ত্রাণ দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সোনাইল বাঁধের বন্যার্তদের জন্য ৩টি টিবওয়েল এবং ৩টি ল্যাট্রিন দেওয়া হয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, জেলার বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ৬৫টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। তারা বন্যাদুর্গত মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত রয়েছে।
এলএবাংলাটাইমস/এন/এলআরটি
শেয়ার করুন